পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

12 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড সর্বাধিনায়ককে স্বাধীন বাংলার সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালীর পক্ষ হইতে “জয় বাংলা” সংগ্রামী অভিনন্দন জানাইতেছে..... প্রথম হামলায়ই হানাদারেরা যে প্রস্তর-দৃঢ় প্রতিরোধের সম্মুখীন হয় তাহাতে তাহদের প্রায় বিলুপ্ত মনোবল আরও ভাঙ্গিয়া পড়ে। ইহার পরে আরও তিন চারদিন ধরিয়া বিভিন্ন অঞ্চলে মুক্তিফৌজের সঙ্গে হানাদারদের খণ্ড লড়াই চলে এবং পরিশেষে তাহারা বেশ কিছুসংখ্যক হতাহতকে পিছনে ফেলিয়া রাত্রির অন্ধকারে চোরের মত পলায়ন করে। শত্রদের আগমনের খবর ২৫শে মার্চ সন্ধ্যায় পাওয়া যায়। সঙ্গে সঙ্গেই মুক্তি সেনারা তাহদেরকে বাধা দিবার জন্য সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করে। প্রথম লড়াই শুরু হয় ২৬শে মার্চ শুক্রবার। এদিকে শহরের অপর প্রান্তে শহর হইতে ৭ মাইল দূরে অবস্থিত আড়িয়ার বাজার ক্যাম্পে অবস্থানরত বাঙ্গালী এবং পশ্চিমা সৈন্যদের মধ্যে কনফ্রন্টেশন চলিতেছিল। পশ্চিমারা অবস্থা বেগতিক দেখিয়া বিমান সাহায্য চাওয়ায় ক্যাম্পকে টার্গেট করিয়া দুইদিনে বেশ কিছুসংখ্যক বোমা ফেলা হয়। শোনা যায় উহাদের অন্য বিশেষ মতলব ছিল। আল্লাহর মেহেরবাণীতে শত্রদের কোন কুমতলবই হাসিল হয় নাই। শহরেও কয়েকটি বোমা ফেলা হয়। উহাদে ৪-৫টি ঘর বাড়ী মাত্র আংশিক পুড়িয়াছে। কেহ হতাহত হয় নাই। অবশেষে মুক্তিসেনারা শহরের অপর অংশ হইতে হানাদারদের বিতাড়ন করিয়া আড়িয়ার বাজার ক্যাম্পের বাঙ্গালী সৈন্যদের সাহায্যার্থে অগ্রসর হয়। এই সময়ে কিছু পুলিশ ও পার্শ্ববর্তী এলাকা হইতে প্রেরিত কিছু নিয়মিত সৈন্যও তাহাদের সঙ্গে যোগ দেয়। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অনধিক এক ঘন্টার মধ্যে শত্রদেরকে ধ্বংস করিয়া দেওয়া হয়। এই ফ্রন্টে বগুড়া শহর আওয়ামী লীগ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান তরুণ মুক্তিযোদ্ধা বীর মাসুদ শহীদ হন। প্রথম দিনেই হানাদারদের বাধা দিতে রওয়ানা হইবার পূর্বে বগুড়ার মহকুমা প্রশাসক জনাব আব্দুল হাই সাহেব তাহদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত এক উদ্দীপনাময়ী ভাষণ দিয়া তরুণ মুক্তি সেনাদিগকে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিলেন। শ্রদ্ধেয় হাই সাহেব বয়োবৃদ্ধ হইলে কি হইবে-বগুড়ার বীর তরুণেরা তাহাকেও তরুণ বলিয়া স্বীকার করিয়া করিয়াছেন। অপর একজনের নাম উল্লেখ না করিয়া পারিতেছি না- তিনি হইলেন মুক্তি সেনাদের “কমন মামা” (সম্পাদকও তাহাকে “মামা” বলিয়া ডাকে) ক্যাপ্টেন (অবসরপ্রাপ্ত) এম, আর, চৌধুরী। মুক্তি সেনাদের ঠিক পথে পরিচালিত করাই তাহার অন্যতম প্রধান কাজ। পুলিশ বাহিনীর বর্তমান অধ্যক্ষও মুক্তি সেনাদের সঙ্গে সর্বপ্রকার সহযোগিতা করিয়াছিলেন এবং করিতেছেন। ইহা ছাড়া দু’একজন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের পরামর্শও তাহারা পাইয়াছিলেন। গত ৫ তারিখ রাত্রি হইতে ৭ তারিখ সকাল পর্যন্ত বগুড়ায় অবস্থানকালে দেখিতে পাইয়াছি বেশ হাসিলের চেষ্টায় রত রহিয়াছেন। ইহাদের কার্যকলাপ এতই জঘন্য যে উহারা মুক্তি সেনাদের মাঝেও বিভেদ সৃষ্টি করিবার চেষ্টার ক্রটি করেন নাই। আল্লাহর মেহেরবাণীতে তাহদের প্রচেষ্টা সফল হয় নাই। সংশ্লি সকলের প্রতি বিশেষ করিয়া বেসামরিক, সামরিক এবং মুক্তি সেনাদের প্রতি আমাদের আবেদন অবিলম্বে চোর-ছ্যাচড়াদেরে যে সব গৰ্ত্তে উহারা পলাইয়াছিল সেই সব গৰ্ত্তেই উহাদিগকে ফেরত পাঠান। এখন যুদ্ধাবস্থা। এ ব্যাপারে কোন রকম শৈথিল্য দেখান কাহারও পক্ষে উচিত হইবে না। সকলেই স্মরণ রাখিবেন একতা ছাড়া আমাদের কোন প্রচেষ্টা কোন দিনই সফলতা লাভ করিতে পারিবে না। আর একটি কথাও স্বরণ রাখিবেন-আমরা বাঙ্গলী। যুদ্ধের সময় প্রধান প্রধান নেতৃবৃন্দের আত্মগোপনের প্রয়োজন অবশ্যই রহিয়াছে। কিন্তু সকলেরই পলায়নের অধিকার বা প্রয়োজন রহিয়াছে, তাহা আমরা মানিয়া নিতে প্রস্তুত নহি। আমরা একটি প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট পেশ করিতেছি অবিলম্বে মুক্ত অঞ্চলসমূহে বেসামরিক কর্তৃপক্ষকে স্ব স্ব অঞ্চলে বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় আভ্যন্তরীণ শান্তিরক্ষা এবং বিশৃঙ্খলা