পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৪১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

382 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড প্রথম অধ্যায় ংঘর্ষ অভিমুখে ১৯৬২ সালের শাসনতন্ত্রের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আন্দোলনের পরিণতিতে জাতি এক মারাত্মক সঙ্কটের সম্মুখীন হয় যার ফলে ১৯৬৯ সালের ২৬শে মার্চ সামরিক আইন জারী করা প্রয়োজন হয়ে পড়ে। জাতির উদ্দেশে তাঁর সর্বপ্রথম ভাষণে, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল এ, এম, ইয়াহিয়া খান বলেন, “আমি আপনাদের কাছে সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে দিতে চাই যে, একটি শাসনতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলা ছাড়া আমার অন্য কোন উচ্চাকাঙ্খা নেই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, সুস্থ ও গঠনমূলক রাজনৈতিক জীবন এবং প্রাপ্ত বয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে অবাধে ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচিত গণ প্রতিনিধিদের কাছে নির্বিঘ্নে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য অপরিহার্য পূর্ব শর্ত হচ্ছে একটি সুষ্ঠ, নিষ্কলঙ্ক এবং সৎ সরকার। এই নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাজ হবে দেশকে একটি ব্যবহারযোগ্য শাসনতন্ত্র দেয়া এবং যে-সব রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যা গণমনকে আলোড়িত করছে তার একটা সমাধান বের করা।” এই লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক তৎপরতা চালানোর অনুমতি দেয়া হয় এবং প্রেসিডেন্ট সব রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, “আমার সরকার আপনাদের ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ অব্যাহত রাখবেন।” তিনি অবশ্য জোর দিয়ে বলেন, “কোন ব্যক্তি, দল কিংবা গোষ্ঠী যারাই ইসলামের মূলনীতিসমূহ এবং পাকিস্তানের আদর্শ ও সংহতি বিরোধী প্রচারণা চালাবে কিংবা আমাদের জনগণের ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করবে, তারাই জনগণ ও তাদের সশস্ত্র বাহিনীর ক্রোধভাজন হবে।” এরপর কয়েকমাস ধরে প্রেসিডেন্ট সারাদেশে রাজনীতিবিদ এবং জনমতের প্রতিনিধিত্বকারী নেতাদের সঙ্গে ব্যাপক আলোচনা-পরামর্শ চালান। কিন্তু ১৯৬৯ সালের ২৮শে নভেম্বর তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন যে, রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি পরিস্থিতির গুরুত্ব উপলব্ধি করে জাতীয় রাষ্ট্রনেতার মতো শাসনতান্ত্রিক প্রশ্নটির সমাধানের জন্য তাঁর জরুরী আবেদন সত্ত্বেও এ ব্যাপারে কোন রকম মতৈক্য দেখা যাচ্ছে না। তিনি দুটি গুরুত্বপুর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তও ঘোষণা করেন। প্রথমটি হচ্ছে পশ্চিম পাকিস্তানে এক ইউনিট বাতিল করে দেয়া এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে ভবিষ্যৎ জাতীয় পরিষদের নির্বাচনের জন্য “একজন লোক- একটি ভোট”- এই নীতি গ্রহণ। এর ফলে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে Parity বা সমতার যে নীতি আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দলই মেনে নিয়েছিলেন এবং যা ১৯৫৬ এবং ১৯৬২ সালের শাসনতন্ত্রেও গৃহীত হয়েছিলো তা পরিত্যক্ত হলো। প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের ফলে এই প্রথম বারের মত জাতীয় পরিষদের পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠতা স্থায়ীভাবে কায়েম হলো। রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এবং জনগণের সুস্পষ্ট ইচ্ছে অনুসারে প্রেসিডেন্ট কতকগুলো বিষয়কে স্থিরীকৃত বলে ঘোষণা করেন। এসব বিষয় হচ্ছেঃ (১)ফেডারেল পার্লামেন্টারী ধরনের সরকার। (২)প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারভিত্তিক প্রত্যক্ষ নির্বাচন (৩)নাগরিকদের মৌলিক অধিকার দান এবং আইন-আদালতের মাধ্যমে এই অধিকার-রক্ষার নিশ্চয়তাবিধানের ব্যবস্থা। (৪) বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং তাকে শাসনতন্ত্র-রক্ষকের ভূমিকা নেয়া। (৫)যে আদর্শের ভিত্তিতে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা অক্ষুন্ন রাখার জন্য একটি ইসলামী ভাবাদর্শভিত্তিক শাসনতন্ত্র প্রণয়ন।