পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৪২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

389 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানের ভবিষৎ প্রধানমন্ত্রী বলে প্রকাশ্য ভাবে উল্লেখ করেন। শেখ মুজিবুর রহমানকে পশ্চিম পাকিস্তান সফর করার জন্য কয়েকবার আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু তিনি সে আমন্ত্রণ গ্রহণ করেননি। তিনি ৬ দফা সম্বন্ধেও আলাপ-আলোচনা করতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন যে ৬ দফা এখন জনসাধারণের সম্পত্তি এবং তার রদবদল করা সম্ভব নয়। নির্বাচন শেষ হওয়ার পরই আওয়ামী লীগের ভোল সম্পূর্ণরূপে পাল্টে গেলো। ১৯৮১ সালের ৭ই জানুযারীর প্রকাশিত “অটোয়া, গ্লোব ও মেল” পত্রিকার খবরে প্রকাশঃ “মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেছেন যে প্রয়োজন হলে আমি বিপ্লবের আহবান জানাবো।” ১৯৭১ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারী, “ব্যাঙ্কক পোষ্ট’-এর এক খবরে জানা যায় “আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন যে ৩১৩টি আসনবিশিষ্ট জাতীয় পরিষদের মধ্যে তাঁর দলটির স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। যদি পশ্চিম পাকিস্তান তার দলের ৬ দফা কাৰ্যসূচী পুরোপুরি মেনে না নেয়, তাহলে তিনি একাই শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করবেন। ১৯৭১ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারী জাতীয পরিষদের অধিবেশন আহবান করা হয়। এতে বলা হয় যে আগামী ৩রা মার্চ ঢাকায় অধিবেশন শুরু হবে। ১৯৭১ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারী পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন যে “সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছ থেকে কিছুটা পারস্পরিক আদান-প্রদানের” আশ্বাস না পেলে, তাঁর দল অধিবেশনে যোগদান করবে না। তিনি আরো বলেনঃ “আমার মনে হয় আমরা এমন কিছু করতে পারি যা আমাদের উভয়কেই খুশী করবে। কিন্তু যে শাসনতন্ত্র ইতিমধ্যেই আওয়ামী লীগ প্রণয়ন করে ফেলেছে এবং যে শাসনতন্ত্রের কোথাও এক চুল পরিমাণ কোন অদলবদল করা চলবে না, সেই শাসনতন্ত্রকে শুধু মেনে নেওয়ার জন্যই যদি আমাদের ঢাকায় যেতে বলা হয়, তাহলে আপনারা আমাদের ঢাকায় দেখবেন না।” ১৯৭১ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী শেখ মুজিবুর রহমান বলেন- “আমাদের ভূমিকা অত্যন্ত পরিষ্কার। ৬ দফা ভিত্তি করেই শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করা হবে।” পাঁচটি ফেডারেটিং ইউনিট সমন্বিত পাকিস্তান ফেডারেশনের জন্য জাতীয় পরিষদ একটি শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করবে। কোন ইউনিট এককভাবে তার ইচ্ছে অন্য চারটি ইউনিটের উপর চাপাতে পারবে না। ফেডারেশনের অন্য সব ইউনিটের পক্ষে শাসনতন্ত্রটি গ্রহণযোগ্য করতে হলে শাসনতন্ত্র প্রণয়নের মূল নীতিগুলোর ব্যাপারে সব ইউনিটের মধ্যে মতৈক্যের একটা ব্যাপক ভিত্তি থাকা দরকার। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়ার ফলে, এমন এক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে যে রাজনৈতিক দলগুলো যদি কোন সমাঝোতায় না আসেন, তাহলে জাতীয় পরিষদের পক্ষে কোন শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করা সম্ভব হবে না এবং জাতীয পরিষদ বাতিল হয়ে যাবে। আর তাহলে ভোটদাতাদের আশা-আকাঙ্খা ও ক্ষমতা হস্তান্তরের সুপরিকল্পিত কার্যসূচী উভয়ই নিস্ফল হয়ে যাবে। ১৯৭১ সালের ১লা মার্চ প্রেসিডেন্ট একটি বিবৃতি দেন। সে বিবৃতিতে তিনি বলেন, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দের রাজনৈতিক মোকাবিলা সারাদেশের উপর একটা বিষাদের ছায়া ফেলেছে। তিনি আরো বলেন যে- “সংক্ষেপে পরিস্থিতিটা এই যে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রধান দলটি এবং অন্যান্য কয়েকটি রাজনৈতিক দল ১৯৭১ সালে ৩রা মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিত জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগদান করার ইচ্ছে নেই বলে ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যে আবার হিন্দুস্তান যে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে তা গোটা ব্যাপারটাকে আরো জটিল করে তুলেছে। সে জন্য আমি জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহবানের তারিখ পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” “আমি বার বার বলেছি যে শাসনতন্ত্র একটা সাধারণ আইন নয় বরং এক সঙ্গে বসবাস করার একটা চুক্তি। সুতরাং সুষ্ঠু ও প্রয়োগযোগ্য একটি শাসনতন্ত্রের জন্য যা প্রয়োজন তা হচ্ছে- শাসনতন্ত্র প্রণয়নে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের যথাযথ পরিমাণে অংশগ্রহণের উপলব্ধি।”