পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

あrb বাংলায় ভ্রমণ লখনর নামক একটি নগর প্রতিষ্ঠা করেন। উত্তরকালে উহা লখনেীর নগর, নাগর, নগর ও রাজনগর নামে পরিচিত হয়। শেষ বীররাজের পতনের পর রাজনগরে মুসলমান ফৌজদারগণের প্রতিষ্ঠা হয়। ফৌজদার বাহাদুর খাঁ ১৬০০ খৃষ্টাবদ হইতে ১৬৫৯ খৃষ্টাব্দ পর্য্যন্ত রাজনগরের শাসনকৰ্ত্ত ছিলেন। তিনি বীরত্ব ও রণনৈপুণ্যের জন্য রণমস্তু খাঁ নামে পরিচিত হইয়াছিলেন। তাহার পুত্র দেওয়ান খাজা কামাল খাঁ বাহাদুর কালীদহের মধ্যস্থলে একটি হাওয়াখানা এবং রাজপ্রাসাদের উত্তরে একটি হাম্মাম নিৰ্ম্মাণ করাইয়াছিলেন। খাজা কামালের পুত্র দেওয়ান আসাদুল্লা খাঁ পরম ধাৰ্ম্মিক, দয়ালু ও জ্ঞানী শাসনকর্তা ছিলেন। তিনি রাজ্যের আয়ের অৰ্দ্ধাংশ সাধু ও ফকিরগণের সেবায় ব্যয় করিতেন এবং বহু দীঘি খনন করাইয়৷ প্রজাদিগের জলকষ্ট দূর করিয়াছিলেন। তিনি রাজ্যের বহুস্থানে চৌকিদারী ঘাটি বসাইয়াছিলেন। ঘাটির রক্ষী সেনাগণ ঘাটোয়াল নামে অভিহিত হইত। ইহা ছাড়া বগীর আক্রমণ প্রতিরোধ করিবার জন্য তিনি নগরের চারিদিকে ৩২ মাইল পরিধি বিশিষ্ট ও প্রায় দশ বার হাত উচচ প্রাচীর নির্মাণ করাইয়াছিলেন। নগরের অরণ্য মধ্যে এই প্রাচীরের ধৃংসাবশেষ আজও বিদ্যমান আছে। দেওয়ান আসাদুল্লা খার পুত্র দেওয়ান বাদি উজজুমান খ বিলাসপরায়ণ হইলেও ন্যায়নিষ্ঠ ছিলেন এবং হিন্দু মুসলমান নির্বিবশেষে বহু পীরোত্তর, ব্ৰন্ধোত্তর ও দেবোত্তর জমি দান করিয়াছিলেন। ইনি তৎকালীন নবাব মুর্শিদকুলী খাঁর নিকট হইতে বীরভূম অঞ্চল রক্ষা করিবার ভার গ্রহণ করেন। নূতন ব্যবস্থা অনুযায়ী নবাব সরকারে ইহাকে বাধিক ৩,৪৬,০০০ টাকা কর দিতে হইত। ইহারই সময়ে ভাস্কর পণ্ডিত ও রঘুজী ভোঁসলের নেতৃত্বে বগীদিগের উপর্যুপরি অত্যাচারের ফলে এই অঞ্চল বিশেষ উপক্রত হয়। বর্গীর অত্যাচার দমনের জন্য ইনি নবাব আলিবর্দীকে নানারূপে সাহায্য করিয়াছিলেন। শেষ বয়সে বাদি উজজুমান খ একজন ফকিরের সহিত ধৰ্ম্মালোচনায় অধিকাংশ সময় যাপন করিতেন এবং রাজকাৰ্য্যের বিশেষ কিছুই দেখিতেন না। ফলে রাজ্যমধ্যে বিশৃঙখলা দেখা দেয়। এই অবস্থার প্রতিকারের জন্য তাহার দুই পুত্র আহম্মদ উজজুমান খাঁ ও আলিনকি খ গুপ্তঘাতকের দ্বারা ফকিরকে হত্য করান। ইহাতে মৰ্ম্মাহত হইয়া বাদি উজজুমান রাজ্যভার পুত্রগণকে অপণ করিয়া আরও গভীরভাবে ধৰ্ম্ম চচর্চায় নিবিষ্ট হন। আহম্মদ উজজুমান ও আলিনকি খ নিজের রাজ্য গ্রহণ না করিয়া বৈমাত্রেয় ভ্রাতা আসাদ উজজমানকে সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত করেন। কথিত আছে, আসাদের মাতাকে যখন বাদি উজজুমান বিবাহ করেন তখন তিনি ভাবী পত্নীর মাতাকে প্রতিশ্রুতি দেন যে তাহার কন্যার গর্ভজাত পুত্রকেই তিনি রাজ্যভার অর্পণ করিবেন। পিতার এই সত্য রক্ষা করিবার জন্য আহম্মদ উজজুমান ও আলিনকি খা স্বেচছায় রাজ্য ত্যাগ পত্র লিথিয়া দেন। পরে দুই ভ্রাতা মুর্শিদাবাদে গিয়া নবাব সরকারে চাকুরী গ্রহণ করেন। নবাব আলিবর্দীর মৃত্যুর পর তরুণ নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা যখন ইংরেজগণের বিরুদ্ধে অস্ত্ৰধারণ করেন, তখন আহম্মদ উজৰ্জুমান ও আলিনকি তাহার পক্ষে সেনাপতিত্ব করেন। কলিকাতার যুদ্ধে নবাব সৈন্য জয়ী হইলে আলিনকির অধীন সৈন্যগণ কলিকাতা লুঠ করিয়াছিল। রাজনগরের মহরমের শোভাযাত্রায় “ লুঠের কাপড় ” নামে যে বস্ত্র বাহির করা হয় উহা নাকি জালিনকি খাঁ কলিকাতা লুঠের সময় সংগ্রহ করিয়াছিলেন। কেহ কেহ বলেন যে আলিনকি খাঁর মামানুসারে কলিকাতার আলিপুরের নাম হইয়াছে। আলিনকির বীরত্ব ও সাহসের জন্য লোকে আহাঁকে “ কলির ভীম ? বলিত । - আসাদ টজজুমান খার মৃত্যুর পর হইতে রাজনগরের পতন ঘটে।