পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ব ভারত রেলপথে 30న్స్ কাটোয়ার নিকটবর্তী ইন্দ্রেশ্বর বা ইন্দ্রাণী অতি প্রাচীন স্থান। প্রবাদ যে দেবরাজ ইন্দ্র এই স্থানে গঙ্গাস্নান করেন বলিয়া স্থানের নাম ইন্দ্ৰেশ্বর বা ইন্দ্রাণী হয়। এ বিষয়ে কৃত্তিবাসী রামায়ণে আছে— “নিমেষেতে আইলেন গ্রাম ইন্দ্রেশ্বর। গঙ্গা লয়ে ভগীরথ চলিল সত্বর। গঙ্গা জলে যথা ইন্দ্র করিলেন স্নান । ইন্দ্রেশ্বর বলি নাম হইল সে স্থান ৷ ” ইন্দ্রেশ্বর বা ইন্দ্রাণীতে পূবেৰ বারটি ঘাট ছিল এবং উহার প্রত্যেকটি তীথরূপে গণ্য হইত। কাশীরাম দাসের মহাভারতে আছে— “ইন্দ্রাণী নামেতে দেশ পূর্বাপর স্থিতি। দ্বাদশ তীর্থেতে যথা বৈসে ভাগীরথী {। ” বৰ্ত্তমানে ইন্দ্রাণী একটি পরগণার নাম। ইন্দ্রাণীর অস্তগত সিঙ্গিগ্রাম বাংলা মহাভারত প্রণেতা মহাকবি কাশীরাম দাসের জন্মস্থান। প্রায় তিন শত বৎসর পূবেৰ্ব দেব উপাধিধারী এক কায়স্থবংশে কাশীরাম জন্মগ্রহণ করেন। তাহার পিতার নাম কমলাকান্ত দেব ; কমলাকাস্তের তিন পুত্র, কৃষ্ণদাস, কাশীরাম ও গদাধর। এই তিন ভ্রাতাই কবিত্বশক্তিসম্পা ছিলেন। কৃষ্ণদাস “ শ্রীকৃষ্ণ বিলাস ’ নামক কাব্য রচনা করেন, তাহার গুরুদত্ত নাম ছিল শ্রীকৃষ্ণকিঙ্কর। কাশীরামের কনিষ্ঠ ভ্রাতা গদাধর জগন্নাথদেবের মাহাত্ম্য প্রকাশক “জগন্নাথ মঙ্গল বা জগৎ মঙ্গল” নামে এক কাব্য রচনা করেন। অনেকে অনুমান করেন যে কাশীরাম মহাভারতের আদি, সভা, বন এবং বিরাট পবেবর কতকাংশ রচনা করিবার পর পরলোক গমন করেন। বিরাট অষ্টাদশপবর্ব মহাভারতের অবশিষ্ট ভাগ তদীয় সুযোগ্য পুত্র নন্দরামের রচনা। নন্দরাম পিতার আরদ্ধ কাৰ্য্য পিতার নামের ভনিতা দিয়াই সমাপন করেন। সিঙ্গিগ্রামের এই দেব বংশের মত একই বংশে একই সময়ে এতগুলি প্রতিভাসম্পন্ন কবির আবির্ভাব বড় একটা দেখা যায় না। সিঙ্গিগ্রামে এখনও "কাশীর ভিট৷ ” ও কেশে-পুকুর কবির স্মৃতি বহন করিতেছে। কাটোয়ার নিকটবর্তী সীতাহাটি গ্রামে প্রায় ৩০ বৎসর পূবেৰ্ব মহারাজ বল্লালসেনের একখানি তাম্রশাসন আবিষ্কৃত হয়। উহা কলিকাত যাদুঘরে রক্ষিত আছে। এই তাম্রশাসন খানির দ্বারা বল্লালসেন রাজমাতা বিলাস দেবীর সূৰ্য্যগ্রহণ কালীন হোমাশ্ব মহাদানের দক্ষিণ স্বরূপ বৰ্দ্ধমান ভুক্তির অস্তগত উত্তর রাঢ় মণ্ডলের বাল্লহিট গ্রাম সামবেদী শ্ৰীবাসুদেব শৰ্ম্মাকে দান করেন। কাটোয়ার নিকটস্থ খাজুর ডিহি গ্রামে বাংলার প্রথম “বঙ্গাধিকারী ” ভগবান রায় জন্মগ্রহণ করেন। পূবর্ব-বঙ্গ রেলপথের মুর্শিদাবাদ স্টেশন দ্রষ্টব্য। কাটোয়ার নিকটস্থ যাজিগ্রামে সুপ্রসিদ্ধ শ্রীনিবাস আচার্য্যের মাতুলালয় ছিল। নদীয়া জেলার চাকদী গ্রামে তাহার জন্ম হয় ; তথায় কিছুকাল সংস্কৃত শিক্ষা করিয়া তিনি যাজিগ্রামে আসিয়া বাস করেন ; তথা হইতে তিনি বৃন্দাবনে গিয়া শাস্ত্র অধ্যয়ন ও দীক্ষা গ্রহণ করিয়া আচাৰ্য্য উপাধি লাভ করেন। কৃষ্ণদাস কবিরাজের “চৈতন্য চরিতামৃত” শেষ হইলে সেই গ্রন্থ লইয়া গৌড়ে আসা কালীন বনবিষ্ণুপুরে রাজা বীর হাম্বীরকে দীক্ষা দিয়া যাজিগ্রামে ফিরিয়া আসেন ও ধৰ্ম্মচচর্চাতে আত্মনিয়োগ করেন ।