পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

)、ひ বাংলায় ভ্রমণ জঙ্গীপুর রোড—ব্যাণ্ডেল জংশন হইতে ১৩২ মাইল দূর। এখানে নামিয়া মুর্শিদাবাদের অন্যতম মহকুমা দুই মাইল পূর্বদিকে ভাগীরথীর পূর্ববতীরে অবস্থিত জঙ্গীপুরে যাইতে হয়। জঙ্গীপুরের বিপরীতদিকে গঙ্গার পশ্চিম তীরবর্তী রঘুনাথগঞ্জ নামক স্থানে জঙ্গীপুরের মহকুমাআদালত প্রভৃতি অবস্থিত। কিংবদন্তী অনুসারে স্থানটি সম্রাট জাহাঙ্গীর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তাহার নামের অপভ্রংশ হইতে ইহার নাম জঙ্গীপুর হইয়াছে। জঙ্গীপুরে প্রতি বৎসর বৈশাখী সংক্রাস্তিতে মহাসমারোহে তুলসী বিহার মেলা হয়। ইংরেজ যুগের প্রথম আমলে এখানে ইংরেজদের রেশমের একটি বড় কুঠি ছিল। শহরের বালিঘাটা পাড়াটি মহাকবি বালমীকির নাম হইতে হইয়াছে বলিয়া জনপ্রবাদ অাছে। নদীর ধারে একটি প্রাচীন বটগাছ দেখাইয়া লোকে বলে ঐ স্থানে কবি স্নান করিতেন। জঙ্গীপুরে একটি প্রাচীন মসজিদ আছে, ১৬৬৪ খৃষ্টাব্দে সৈয়দ কাসিম কর্তৃক উহা নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল। কেহ কেহ অনুমান করেন তাহার নাম হইতেই কাশীম-বাজার শহরের নামকরণ হয়। ষোড়শ শতাবদীর মধ্যভাগে সৈয়দ মর্তুজা হিন্দ নামে একজন মুসলমান ফকীর জঙ্গীপুরে বাস করিতেন। জঙ্গীপুরের বালিঘাটায় তিনি জন্ম গ্রহণ করিয়াছিলেন বলিয়। কথিত। বেরিলী জেলায় তাহার পৈতৃক নিবাস ছিল। তাহার পিতা সৈয়দ হাসেন কাদের একজন ফকীর ছিলেন। মর্তুজা বাল্যকাল হইতেই জঙ্গীপুর ও নিকটবৰ্ত্তী স্থানসমূহে বাস করিতেন। তিনি অতি অল্প বয়সে ফকীর হন ও ঈশ্বর উপাসনায় আত্মনিয়োগ করেন। জঙ্গীপুরের দুই মাইল দক্ষিণে চড়ক । গ্রামের রাজাক সাহেব তাহার শুরু ছিলেন। মর্তুজা সুতীর নিকট ছাপঘাটিতে এক আস্তানা নিৰ্মাণ করিয়া তথায় বাস করিতেন। এই শাখার খিদিরপুর হল্ট স্টেশন দ্রষ্টব্য। প্রায় ৮০ বৎসর বয়সে এই স্থানেই তিনি দেহত্যাগ করেন। তিনি মুসলমান ফকীর হইয়াও হিন্দুধর্মের অনুশীলন করিতেন বলিয়া তিনি মর্তুজা হিন্দ নামে পরিচিত ছিলেন। আনন্দময়ী নামে এক ব্রাহ্মণ কন্যা তাহার ভৈরবী বা সাধন-সহচরী ছিলেন। এজন্যে উভয়ে মর্তুজানন্দ নামে অভিহিত হইতেন। মৰ্ত্তজার কবরের পাশ্বে আনন্দময়ীর সমাধি আজও দেখিতে পাওয়া যায়। মন্তুজা অলৌকিক শক্তিসম্পন্ন ছিলেন বলিয়া লোকের বিশ্বাস। পশ্চিম দেশীয় মুসলমান হইয়াও তিনি সুললিত ও মধুর বাংলা পদাবলী রচনা করিয়াছিলেন। তাহার রচিত কয়েকটি বৈষ্ণবপদাবলী পদকল্পতরু গ্রন্থে সন্নিবিষ্ট আছে। তাঁহার একটি পদের কিছু অংশ প্রদত্ত হইল, মোরে কর দয়া, দেহ পদছায়া, শুনহ পরাণ-কানু । কুল শীল সৰ ভাসাইনু জলে, প্রাণ না রহে তোমা বিনু। সৈয়দ মর্ভূজা ভণে কানুর চরণে নিবেদন শুন হরি। সকল ছাড়িয়া রহিনু তুয়া পায়ে জীবন মরণ ভরি। মুসলমান, তাষিক, বৈষ্ণব সকলে তাঁহাকে আপনার ভাবিয়া ভক্তি করিত। ছাপখাটিতে তাহার দরগাহ হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায় কর্তৃক পূজিত হয়। প্রতি বৎসর রজব মাসে তথায় একটি মেলা বসে এবং বহু ফকীর ও গৃহী আসিয়া সমাধি দুটির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। মর্তুজার স্ত্রীর নাম ছিল নিজাম বিবি এবং তাঁহাদের চারি পুত্র ও দুই কন্যা লাভ হয়; তাহার এক কন্যার সহিত জঙ্গীপুরের প্রাচীন মসজিদ প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ কাসিমের বিবাহ হয়। সৈয়দ মর্ভুজার বংশ বিদ্যমান আছে।