পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলা নাগপুর রেলপথে ➢ሪOፋ মহিষাদল—মহিষাদলে রাজা উপাধিধারী একটি প্রাচীন জমিদার বংশের বাস। পরিখা-বেষ্টিত রাজবাট দেখিতে অতি সুন্দর। রাজাদের সতের চূড়ার একটি বৃহৎ ও বিখ্যাত রথ আছে। প্রতি বৎসর রথযাত্রার সময় এখানে বহু লোকের সমাগম হয়। রাজবংশের প্রতিষ্ঠিত নবরত্ন মন্দির, রামচন্দ্রের মন্দির, গোপীনাথের মন্দির, সিংহবাহিনী দেবী এবং দধিবামন বিগ্ৰহ উল্লেখযোগ্য। দোরো সুতাহাটী—মহিষাদল হইতে একটি মোটর রাস্ত দোরো সুতাহাট পৰ্য্যস্ত গিয়াছে। এই স্থানে নীল প্রস্তরে নিৰ্ম্মিত মাধব, সাগর মাধব ও নীল মাধব নামক তিনটি অতি সুন্দর প্রাচীন বিগ্রহ আছে। অনেকে এই যুক্তিগুলিকে বৌদ্ধ যুগের বলিয়া অনুমান করেন। দোরোতে রাজা যাদবরাম রায় নামে এক দানশীল জমিদার বাস করিতেন। তাহার পুত্রবধু রাজা কুমার নারায়ণের পত্নী রাণী সুগন্ধা দেভোগ নামক স্থানে অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে একটি সুন্দর নবরত্ন মন্দির ও এক বৃহৎ দীধিক প্রতিষ্ঠা করেন। ইহাও এই অঞ্চলের দ্রষ্টব্য বস্তু। ময়ন—তমলুক হইতে ময়না বা প্রাচীন ময়নাগড় নয় মাইল। নবম শতাব্দীতে ধৰ্ম্মপাল যখন গৌড়ের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত, সেই সময়ে ময়নাগড়ে কর্ণসেন নামে এক রাজা ছিলেন। বীরভূম জেলার অন্তর্গত অজয়গড়ের সামস্ত গোপ-রাজ সোম ঘোষের পুত্র ইছাই ঘোষ বিদ্রোহী হইয়৷ কর্ণসেনকে পরাজিত ও রাজ্যচু্যত করেন, যুদ্ধে কর্ণসেনের ছয় পুত্র নিহত হয় এবং সেই শোকে কর্ণসেনের পত্নী প্রাণত্যাগ করেন। ইছাই ঘোষ মহাশাক্ত ও ভবানী দেবীর বরপুত্র বলিয়া বিখ্যাত ছিলেন। তাঁহাকে ধংস করিবার জন্য রাজা কর্ণসেন গৌড়েশ্বর ধৰ্ম্মপালের আশ্রয় গ্রহণ করেন এবং তাহার শ্যালিক ধৰ্ম্মউপাসিকা রঞ্জাবতীর পাণিগ্রহণ করেন। ধৰ্ম্মপালের মহিষী স্বয়ং উদ্যোগী হইয়া কর্ণসেনের সহিত রঞ্জাবতীর বিবাহ দেন। ধৰ্ম্মঠাকুরের বরে রঞ্জাবতীর গর্ভে লাউসেন নামে কর্ণসেনের এক পুত্র হয়। ধর্মের বরপুত্র মহাবীর লাউসেন ভবানীর বরপুত্র ইছাই ঘোষকে যুদ্ধে নিহত করিয়া পিতার হ্তরাজ্যের পুনরুদ্ধার করেন। লাউসেন কামরূপকামাখ্যা পৰ্য্যস্ত জয় করিয়াছিলেন। মাণিক গাঙ্গুলীর ও মহাকবি ঘনরাম চক্ৰবৰ্ত্তীর “ ধৰ্ম্ম মঙ্গল” কাব্যে লাউসেনের বীরত্বের কাহিনী সবিস্তারে বর্ণিত আছে। ময়নাগড়ের রঙ্কিনী নায়ী কালী ও লোকেশুর শিব এবং ময়নার সন্নিকটবর্তী বৃন্দাবন চকের ধৰ্ম্মঠাকুর লাউসেন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বলিয়া লোকের বিশ্বাস। ইছাই ঘোষের প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ অজয়গড় বা অজয়ঢেকুর অজয়নদের তীরে আজও 6भर्थी यांग्न ! - ময়নাগড়ের প্রাচীন কীৰ্ত্তি আজও কিছু কিছু বর্তমান আছে। ভিতরগড়ের ক্ষেত্রফল ৬২,৫০০ বর্গফুট উহার চতুদিকে পরিখার প্রত্যেকটির দৈর্ঘ্য ৭০০ ফুটেরও অধিক। বাহিরগড় বা দ্বিতীয় পরিখার প্রত্যেকটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১,৪০০ ফুট। ভিতর ও বাহির উভয় গড়ের পরিখার বিস্তৃতি প্রায় ১৫০ ফুট। বগীদের উপদ্রবের সময় অনেকে নিরাপত্তার জন্য এই গড়ে আশ্রয় গ্রহণ করিতেন। উভয় পরিখার মধ্যবৰ্ত্তী স্থান গভীর জঙ্গলে আবৃত। এই জঙ্গলের মধ্যে হরিণ ও ময়ুর দেখিতে পাওয়া যায়। জঙ্গলের মধ্যে কামান বসাইবার উচু ঢিপি এখনও বর্তমান আছে। ময়নার নিকটবর্তী গোকুলনগরে সুন্দর সুন্দর নেটের মশারি প্রস্তুত হয়। বালিচক—হাওড়া হইতে ৫৭ মাইল দুর। ইহা একটি বাণিজ্য-প্রধান স্থান। এখানে অনেকগুলি চাউলের কল আছে। এখান হইতে দক্ষিণে সবঙ্গ ও উত্তরে লোয়াদ পৰ্য্যন্ত