পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ზაუტ বাংলায় ভ্রমণ কুণ্ডে ডুবাইয়া সমুদয় পিতলকে স্বর্ণে পরিণত করেন। সিংহল পত্তনে সেই সোণ বিক্রয় করিয়া তিনি বহু অর্থ লাভ করেন। গৃহে ফিরিবার সময় ধনপতি সেই কুণ্ডে জাসিয়া বর্গভীমাদেবীর প্রতিষ্ঠা ও মন্দির নিৰ্ম্মাণ করিয়া দেন। দ্বিতীয় প্রবাদ অনুসারে একজন ধীবর রমণী তাম্রলিপ্ত-রাজ তাম্রধূজের রাজসংসারে প্রত্যহ মাছের যোগান দিত। একদিন পূবেৰ্বাক্ত অরণ্য পথে আসিবার সময় ধীবর রমণী উক্ত কুণ্ড হইতে কিছু জল লইয়া মৃত মৎস্যের উপর ছিটাইয়া দেয়। দেখিতে দেখিতে মৎস্যগুলি পুনৰ্জ্জীবন লাভ করে। এই সংবাদ তাম্রধূজের কর্ণগোচর হইলে তিনি ধীবর রমণীকে সঙ্গে লইয়া কুগুটি দেখিতে যান। কিন্তু কুণ্ডের পরিবর্তে সেখানে একটি বেদী ও তদুপরি এক প্রস্তরময়ী দেবী মুক্তি দেখিতে পান। তাম্রধূজ তথায় একটি মন্দির নির্মাণ করিয়া দেবীর যথাবিহিত পূজার ব্যবস্থা করেন। তৃতীয় প্রবাদ অনুসারে কৈবৰ্ত্ত রাজবংশের প্রতিষ্ঠাত কালু ভুইয়। বর্গভীমাদেবীর প্রতিষ্ঠা করেন। প্রাচীন কাল হইতেই তাম্রলিপ্ত হিন্দু ও বৌদ্ধ উভয়েরই নিকট প্রসিদ্ধ স্থান। পুরাকালে ইহা হিন্দুগণের একটি বিখ্যাত তীর্থক্ষেত্র ছিল। ব্ৰহ্মপুরাণে বর্ণিত আছে যে দক্ষযজ্ঞে শিব দক্ষকে নিহত করিলে ব্ৰহ্মহত্যাজনিত পাপে দক্ষের ছিন্ন মস্তক তাহার হস্তে আবদ্ধ হইয়া যায়। পাপমোচনের জন্য শিব বহু তীর্থে ভ্ৰমণ করেন, কিন্তু হস্ত হইতে কপাল বা মস্তক কিছুতেই মুক্ত হয় না। অতঃপর বিষ্ণুর নির্দেশক্রমে তিনি তমলুকের একটি অজ্ঞাত তীর্থে আসিয়া স্নান করায় দক্ষশির তাহার হস্ত হইতে মুক্ত হয়। এই জন্য এই তীর্থটির নাম হয় “কপাল-মোচন "। কপালমোচন সরোবরের নাম ও মাহাত্ম্য বহু গ্রন্থে উল্লিখিত আছে। কালক্রমে এই সরোবরাট রূপনারায়ণ নদের কুক্ষিগত হইয়াছে। কিন্তু আজও প্রতি বৎসর বারুণী উপলক্ষে বহু নরনারী বর্গভীমাদেবীর মন্দিরের প্রাস্তবাহী রূপনারায়ণে স্নান করিয়া কপাল-মোচন তীর্থ স্নানের পুণ্যকাৰ্য্য সমাধা করেন। তমলুকের খাট পুকুরের পশ্চিম তীরে অবস্থিত একখানি পাথরকে লোকে “ নেতা ধোপানীর পাট ’ নামে অভিহিত করে। মনসার ভাসান গানে উল্লিখিত আছে যে নেতা ধোপানীর সহায়তায় বেহুলা মৃত পতি লখিন্দরের প্রাণ ফিরিয়া পাইয়াছিলেন। পৌষ সংক্রাস্তির সময় এখানে একটি বৃহৎ মেলা হয় | 奪 তমলুকে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর একটি মন্দির আছে। কথিত আছে যে গৌরাঙ্গ দেবের অন্যতম পার্ষদ বাসুদেব ঘোঘ ঠাকুর এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন। প্রাচীন তাম্রলিপ্ত নগরকে পটভূমি করিয়া বঙ্কিমচন্দ্র তাহার “যুগলাঙ্গুরীয় ” নামক উপন্যাস রচনা করেন । তমলুকের সৌন্দর্ঘ্যে মুগ্ধ হইয়া মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত এই স্থানে কিছুকাল বা করিয়াছিলেন। - - তমলুক হইতে মোটরবাস যোগে নন্দকুমার নামক স্থান হইয়া মহিষাদলে যাইতে হয়। নলকুমান গ্রামে স্বনামখ্যাত মহারাজ নন্দকুমারের একটি বাট ছিল। এখনও এই বাটীর ভগ্নাবশেষ বর্তমান আছে।