পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/২৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(খ) আখাউড়া—চট্টগ্রাম—নাজিরহাট ঘাট—দোহাজারী আখাউড়া জংশন—ময়মনসিংহ জংশন হইতে ১১৬ মাইল দূর। এখানে আসাম বাংলা রেলপথের প্রধান লাইন দক্ষিণে চট্টগ্রামের দিকে এবং উত্তরে বদরপুর-শিলচর অভিমুখে গিয়াছে; ময়মনসিংহ ও টঙ্গী হইতে একটি শাখা লাইন এখানে আসিয়া মিশিয়াছে। আগরতলা-আখাউড়া জংশন স্টেশন হইতে ৬ মাইল দূরে পাবর্বত্য ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা মোটরবাস বা ঘোড়ার গাড়ী যোগে যাইতে হয়। আগরতলা আধুনিক প্রথায় নিৰ্ম্মিত একটি সুন্দর শহর। প্রশস্ত রাজবন্ত্ৰ, সুদৃশ্য উদ্যান, নিৰ্ম্মল জলপূর্ণ সরোবর ও মনোরম প্রাসাদাবলী ইহার শোভা বৰ্দ্ধন করিতেছে। রাজপ্রাসাদ উজ্জয়ন্ত দূর হইতে ছবির ন্যায় সুন্দর দেখায়। দর্শনার্থীর সুবিধার জন্য মহারাজার একটি অতিথিশালা আছে। - এই রাজ্যের অধিকাংশ স্থান পাহাড় ও জঙ্গলে আবৃত। জঙ্গলগুলি ব্যাঘ্ৰ, হরিণ, মহিষ ও হস্তীতে পূর্ণ। রাজ্যের খনিজ সম্পদও প্রচুর। ত্রিপুরা রাজগণের মধ্যে অনেকেই বঙ্গসাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। রাজ্যের সরকারী কাৰ্য্যাদি বংলা ভাষায় সম্পাদিত হয়। ত্রিপুরা রাজবংশকে কেন্দ্র করিয়া রবীন্দ্রনাথ একাধিক গ্রন্থ রচনা করিয়াছেন। ত্রিপুরার বর্তমান মহারাজার নাম হিজ্ব হাইনেস্ বিষম সমর-বিজয়ী মহামহোদয় পঞ্চশ্ৰীযুক্ত মহারাজা স্যর বীর-বিক্রম কিশোর দেব বর্মন মাণিক্য বাহাদুর কে, সি, এস, আই। ত্রিপুরার রাজবংশ অতি প্রাচীন। বৰ্ত্তমান ভারতের রাজবংশগুলির মধ্যে ত্রিপুর রাজবংশকে প্রাচীনতম বলিয়া দাবী করা হয়। শুধু ভারতে নহে, চীন দেশ ভিন্ন পৃথিবীর কোথাও এরূপ সুদীর্ঘকাল এক রাজবংশ রাজত্ব করেন না। ইহারা চন্দ্র বংশীয় ক্ষত্রিয়। এই বংশের আদিপুরুষ বলিয়া কথিত যযাতি পুত্র দু হ্য হইতে ১৮৪ পুরুষের নাম পাওয়া যায়। ইহাদের বিজয়-বাহিনী এককালে আরাকানী, মগ ও নিকটস্থ পাবর্বত্য জাতিগুলিকে বশে আনিয়াছিল। “রাজমাল৷ ” নামক প্রসিদ্ধ গ্রন্থে ত্রিপুর নৃপতিগণের কীৰ্ত্তি কাহিনী সবিস্তারে বণিত হইয়াছে। ইহার প্রথমাংশ প্রবাদ ও কিংবদন্তীমূলক হইলেও পরবর্তী অংশে বংশানুক্রমিক ইতিহাস পাওয়া যায়। কহলণের প্রসিদ্ধ রাজতরঙ্গিণীর সহিত এই পুস্তকের তুলনা চলে। ইহা তিনভাগে বিভক্ত। প্রথম ভাগে আদিমকাল হইতে ১৪৫৮ খৃষ্টাব্দ, দ্বিতীয় ভাগে ১৪৫৮ হইতে ১৬৬০ খৃষ্টাব্দ ও তৃতীয় ভাগে ১৬৬৩ হইতে অষ্টাদশ শতাব্দীর কিছুপর পর্য্যন্ত সময়ের বিবরণ আছে। পূবেব রাজমালা ত্রিপুর ভাষাতে লিখিত ছিল। ১৪৫৮ খৃষ্টাব্দে মহারাজ ধৰ্ম্মমাণিক্যের আদেশে ইহা সুভাষা অর্থাৎ বাংলায় রচিত হয় । এই বংশের ত্রিপুররাজের মৃত্যুর পর তৎপত্নী রাণী হীরার গর্ভে শিবাংশে ত্রিলোচন রাজার জন্ম হয় বলিয়। কথিত। ইহার পাবর্বত্য নাম ছিল “সুরারাই ” এবং ইনি পরম শৈব ছিলেন। ইনি ত্রিপুররাজের পুত্র বলিয়া যেমন চন্দ্রবংশীয় চিহ্ন নিশান ও চন্দ্রধবজ ব্যবহার করিতেন, সেইরূপ শিবাংশে জন্ম বলিয়া ত্রিশূল চিহ্নিত ধবজও ব্যবহার করিতেন। তদবধি ত্রিপুরার রাজবংশের ধ্বজে চন্দ্র ও ত্রিশূল উভয় চিহ্নই ব্যবহূত হইতেছে। কথিত আছে, ত্ৰিলোচন পাণ্ডবদের সমসাময়িক এবং নিমন্ত্রিত হইয়া যুধিষ্ঠিরের রাজসভায় উপস্থিত হইয়াছিলেন।