পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

JaO বাংলায় প্রমণ فـ বিজনি—পাবর্বতীপুর জংশন হইতে ১৪০ মাইল। ইহা গোয়ালপাড়া জেলার একটি প্রসিদ্ধ স্থান। সরকারী কাগজপত্রে ইহা বিজনী দুয়ার নামে উল্লিখিত আছে। ভুটানের নীচে গোয়ালপাড়া জেলার উত্তরভাগও দুয়ার নামে অভিহিত হয়। ৰিজনির সংরক্ষিত বন ১৯৬ বর্গ মাইল ব্যাপিয়া অবস্থিত। এই বনে বাঘ, ভালুক, গণ্ডার প্রভৃতি জন্তু দৃষ্ট হয় এবং শাল, শিশু ও খয়ের গাছ বহু পরিমাণে জনিময়া থাকে। বিজনির আগের স্টেশন চাপরাকাটা ও বিজনির মধ্যে রেল লাইন আই নদী পার হইয়াছে। ৱিজনি স্টেশনের কিছুদূরে রেল লাইন মনাস নদী পার হইয়াছে। এই নদীর পূর্বপার হইতে কামরুপ জেলার তথা প্রকৃত আসামের আরম্ভ। কামৰূপ দরং প্রভূতি জেলায় বাঙালীদের সংখা নগণ্য হইলেও বাঙ্গালী ভ্রমণকারীদের সুবিধার জন্য এ অঞ্চলের কয়েকটি প্রধান প্রধান স্থানের কথা নিমেন বলা হইল। to সরভোগ—পাবর্বতীপুর জংশন হইতে ১৫১ মাইল। ইহা কামরূপ জেলার অস্তগত একটি বাণিজ্য কেন্দ্র ; এই স্থান হইতে বহু পরিমাণে পাট চালান যায়। এই স্টেশনে ডাকগাড়ী প্রভূতি সকল গাড়ীই থামে। স্টেশনের পরেই রেল লাইন মরামনাস বা ৰেকী নদী পার হইয়াছে। বড়পেটা রোড–পাবৰ্বতীপুর জংশন হইতে ১৩৮ মাইল দূর। স্টেশন হইতে ১৩ মাইল দক্ষিণে বড়পেট শহর পর্য্যস্ত রেলের সহিত সংশ্লিষ্ট একটি মোটর বাস সভিস আছে। বড়পেটা কামরূপ জেলার একটি মহকুমা। ইহা আসাম দেশীয় মহাপুরুষিয়া নামক বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের একটি প্রধান কেন্দ্র। শঙ্করদেব ও তৎশিষ্য মাধবদেব এই সম্প্রদায়ের প্রবর্তক। ইহার শ্রীচৈতন্য দেবের প্রায় সমসাময়িক। ১৪৪৯ খৃষ্টাব্দে এক অসমীয়া কায়স্থবংশে শঙ্করদেব জন্মগ্রহণ করেন। তৎকালীন কামরূপে তান্ত্রিক অভিচারের বীভৎসত নিবারণের জন্য তিনি বৈষ্ণবমতের প্রচার করেন। শ্ৰীমদ্ভাগবত গ্রন্থোক্ত বিশুদ্ধ ভক্তি সাধন ও নাম সংকীৰ্ত্তনই এই ধর্মের প্রধান অঙ্গ । ইহাদের দেবালয়গুলিতে সাধারণত: কোন বিগ্রহ প্রতিষ্ঠিত থাকে না। এই স্থানে সকলে সমবেত হইয় ভগবানের নাম গান করেন। এই দেবায়তনগুলি নামঘর কীৰ্ত্তনঘর বা সত্ৰ নামে পরিচিত । শঙ্করদেব কায়স্থ ছিলেন বলিয়া প্রথমত: ব্রাহ্মণগণ তাহার প্রবত্তিত নবধৰ্ম্মমত গ্রহণ করিতে চাহেন নাই। কিন্তু তাহার অপূর্ব ভগবভক্তি ও অলৌকিক শক্তির পরিচয় পাইয়া পরে অনেকে তাহার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। অন্যান্য মহাপুরুষগণের ন্যায় শঙ্করদেবের জীবন চরিতেও বহু অলৌকিক ঘটনার বিবৃতি আছে। অসমীয়াগণ তাঁহাকে অবতার স্বরূপ জ্ঞান করেন। মহাপুরুষ শঙ্করদের কর্তৃক প্রবত্তিত বলিয়া এই সম্প্রদায় মহাপুরুষিয়া নামে পরিচিত। অসমীয়া ভাষাও শঙ্করদেবের নিকট বিশেষ ভাবে ঋণী। বঙ্গদেশীয় বৈষ্ণব ভক্তগণের আবির্ভাব ও তিরোভাব তিথির ন্যায় কামরূপ দেশীয় বৈষ্ণবগণও স্ব স্ব সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিগণের আবির্ভাব ও তিরোভাব উপলক্ষে সত্র সমুহে কীৰ্ত্তন মহোৎসবের আয়োজন করিয়া থাকেন । এই কীৰ্ত্তন গানগুলি অনেকটা বাংলা দেশের কীৰ্ত্তনের মত। বড়পেটা ধামের সত্রে প্রতি মাসেই কোন না কোন মহোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। বড়পেটার প্রধান সত্রে একটি কীৰ্ত্তন ঘর ও তাহার পাশ্বে ভোজঘরে কোলিয়া ঠাকুর ও দোল-গোবিন নামে দুইটি মুক্তি ও শঙ্করদেব ও মাধবদেবের পুথি, চুল ও পদচিহ্ন সযত্নে রক্ষিত আছে। শঙ্করদেব ও মাধব দেবের বাৎসরিক শ্রাদ্ধ উৎসব আসামের সবর্ব প্রধান উৎসব গুলির অন্যতম। ইহা ছাড়া আসামের নিজস্ব “ বিহু” উৎসবের কথা সকলেই শুনিয়াছেন। বড়পেটার সোনার তারের অলঙ্কার গুলির শিল্প কৌশল সত্যই অতি সুন্দর। o বড়পেটার প্রায় আট মাইল উত্তরে বড়নগরে কোচরাজ বলিনারায়ণ ও পরীক্ষিতের রাজধানী ছিল। উহার ধ্বংসাবশেষ বর্তমানে জঙ্গলাৰুত হইয়া রহিয়াছে। " -