পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8いう বাংলায় ভ্রমণ বাংলার রাজধানী রাজমহল হইতে ঢাকায় স্থানান্তরিত হয়। তখন হইতে পূবর্ব-বঙ্গের শাসন কেন্দ্রও ঢাকায় অবস্থিত হয়। খৃষ্টীয় চতুর্দশ শতাব্দীতে স্বপ্রসিদ্ধ ভ্ৰমণকারী ইবন বস্তুত সোনারগাও আগমন করেন এবং তথা হইতে যবদ্বীপগামী একটি বাণিজ্য-পোত দেখিয়াছিলেন । ফকৃরুদ্দীন এই সময়ে সোনারগাঁওএর সুলতান ছিলেন। ইবন বতুতা রাজপ্রাসাদ বিশেষ সুদৃঢ়ভাবে রক্ষিত দেখিয়াছিলেন ; আজিও পরিখার উপরের একটি পুরাতন পুলের সম্মুখে তোরণভারের ভগ্নচিহ্নদেখিতে পাওয়া যায়। ১৫৮৬ খৃষ্টাব্দে ভ্রমণকারী র্যালফ ফিচু এই স্থানে আগমন করেন। তিনি লিখিয়া গিয়াছেন সোনারগাঁওএর কাপাস-বস্ত্র ভারতবর্ষের মধ্যে সবর্বশ্রেষ্ঠ । তাহার সময়ে সোনার গাওএর রাজা ছিলেন ঈশা খা । পাঠান যুগে সোনারগাও হজরৎ-ই-জলাল নামে অভিহিত হইত। চৗমৃসম্রাট লুইতি রাজ্যভ্রষ্ট হইয়া পলাতক হইলে তাহার শত্রুপক্ষ তাহার পশ্চাতে পশ্চিম মহাসাগরে যাত্রা করিয়া সোনা-উরকং ও পান-কো-লো নামক স্থানে আসিয়া উপস্থিত হন বলিয়া লিখিত আছে। সোনা-উরকং ও পান-কো-লো সোনারগাও ও বাংলা বলিয়া অনুমিত হয়। পানামের নিকটেই সোনারগাঁওয়ের অস্তগত মগরাপাড়া গ্রামে মগ দীঘি নামক একটি জলাশয়ের তীরে গৌড়রাজ গিয়াস-উদ্দীন আজমশাহের সুন্দর কারুকার্য্য খচিত কষ্টিপাথরের সমাধি বিদ্যমান। সম্ভবতঃ পূবর্ব-বঙ্গের রাজধানী সোনারগাওএ অবস্থানকালে তাহার মৃত্যু হয়। সমাধির সিকি মাইল পশ্চিমে বাঘালপুর গ্রামের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে পাঁচপীরের দরগাহ নামে পাঁচটি দরগাহের ভগ্নাবশেষ দৃষ্ট হয়। এগুলি গয়েসৃদি, সমসদি, সিকন্দর, গাজী ও কালু নামক পাঁচজন যোদ্ধ ফকিরের নমাজের স্থান ও সমাধি বলিয়। কথিত। এ অঞ্চলে মাঝি মাল্লার নদী পারাপারের সময়ে পীর বদরের সহিত পাঁচ পীরের নাম লইয়া থাকে। মগরাপাড়ায় পীর শাহ্ আবদুল আল বা পোকাই দেওয়ানের সমাধি বিশেষ পবিত্র গণ্য হয় ; প্রবাদ ইনি ১২ বছর জঙ্গলমধ্যে গভীর তপস্যায় মগ্র ছিলেন, আহারাদি করিতেন না এবং তাঁহার চারিদিকে প্রকাণ্ড উইঢিবি গড়িয়া উঠিয়াছিল। মগরাপাড়ার নিকটে পুরাতন ব্ৰহ্মপুত্র কুলে পোড়ারাজা বা দ্বিতীয় বল্লাল সেন কর্তৃক নিৰ্ম্মিত একটি পাথরের রথের ভগ্নাবশেষ দৃষ্ট হয়। ইহার গাত্রে নানারূপ কারুকার্য্য খোদিত আছে। প্রবাদ রথ-দ্বিতীয়ার দিন একশত ব্ৰাহ্মণ রথটিকে টানিয়া লইয়া যাইতেন ; কিন্তু অন্য কোনও দিন বহুশত লোকে মিলিয়াও ইহাকে নড়াইতে পারিত না । পানামের নিকটে গোয়ালদী গ্রামে গৌড়েশ্বর হুসেন শাহের রাজত্বকালে ১৫১৯ খৃষ্টাব্দে মোল্লা আকবর র্থ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত একটি মসজিদ আছে। ইহা সোনারগাঁওএর প্রাচীনতম মসজিদ। ঘোর লাল রঙের ইট দিয়া মসজিদটি নিৰ্ম্মিত এবং তিনটি গম্বুজের মধ্যকারটি নীল মৰ্ম্মর প্রস্তরের। পানামের নিকটে আমিনপুর গ্রামে ক্রোড়ী বাড়ী বলিয়া একটি ধ্বংসাবশেষ বিদ্যমান। ইহা মহারাজ বল্লাল সেনের সেনাপতি বংশীয় বলরাম দাস নামক মুসলমান রাজাদের জনৈক কোষাধ্যক্ষের বাটী বলিয়া পরিচিত । পানামের নিকটস্থ ঝিনারদি গ্রাম পূবেৰ দীনার স্বীপ নামে অভিহিত হইত বলিয়া কথিত। দীনার দ্বীপের ষষ্ঠবর সেন ও তৎপুত্র গঙ্গাদাস সেন কৃত রামায়ণ, মহাভারত ও পদ্মপুরাণের প্রাচীন পুঁথি পূৰ্ব্ব-বঙ্গের নানা স্থানে পাওয়া যায়। ষষ্ঠবরের গুণরাজ খা উপাধি ছিল। ডক্টর দীনেশ চন্দ্র সেন মহাশয় লিখিয়াছেন—“স্বল্পবরের রচনা সংক্ষিপ্ত সরল ও পরিপক, কিন্তু তৎপুত্র গঙ্গাদাসের রচিত পদ্য চঞ্চল ও সুন্দর, তাহা বেশ চিত্তাকর্ষক; তত সংক্ষিপ্ত নহে কিম্ভ,বিস্তৃত হইয়াও মনোরম্য।”