পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ 8等 দেওয়া হয়। আধুনিক কালের দেশবন্ধ চিত্তরঞ্জন দাশ, বিচারপতি স্যার চন্দ্রমাধব ঘোষ, বিজ্ঞানাচার্য্য গাৱ জগদীশ চন্দ্র বসু প্রভূতি বাংলার বহু খ্যাতিমান পুরুষ বিক্রমপুরের লোক। বিপ্রকলপলতিকা নামক গ্রন্থ অনুসারে সেনবংশীয় বিক্রম সেন বিক্রমপুরের প্রতিষ্ঠাতা। এ অঞ্চলের পাতক্ষীর, দই, সন্দেশ ও নারিকেলের জিরা-চিড়ার খ্যাতি আছে। বাংলার শেষ হিন্দু রাজবংশ রামপাল নগরে বহুকাল রাজত্ব করেন। এই স্থানে বৌদ্ধ ধৰ্ম্মাবলম্বী চন্দ্রবংশীয় রাজা শ্ৰীচন্দ্রদেবের একখানি তাম্রশাসন আবিস্কৃত হইয়াছিল। খড়গ বংশের পতনের পর চন্দ্রবংশীয় রাজগণ প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। শ্ৰীচন্দ্রদেবের রাজধানী বিক্রমপুরে ছিল। তাহার মাতার নাম ছিল কাঞ্চনা | এই তাম্রশাসন দ্বারা শ্রীচন্দ্রদেব পৌণড়বদ্ধন ভুক্তির নেহকাষ্ঠীগ্রামে পীতবাস গুপ্তশৰ্ম্মাকে ভগবান বুদ্ধের উদ্দেশে কিছু জমি দান করেন। “ লঘুভারত ” গ্রন্থ অনুসারে মহারাজ লক্ষ্মণসেন রামপালে জন্মগ্রহণ করেন। মহারাজ বল্লালসেন নিৰ্ম্মিত বলিয়। কথিত একটি বৃহৎ প্রাসাদের ভগ্নাবশেষ এখানে দেখিতে পাওয়া যায় ; ইহা বল্লালবাড়ী নামে পরিচিত। রামপাল দীঘি, বল্লাল দীঘি প্রভৃতি প্রকাণ্ড প্রকাও দীঘি এখানে বর্তমান। গত শতাব্দীতে এই স্থানে একজন কৃষক মাটি খুঁড়িতে গিয়া ৭০ হাজার টাকা মূল্যের একখণ্ড হীরক পাইয়াছিল। রামপালের নিকট ধামদ গ্রামে একখানি সোনার পথি পাওয়া গিয়াছিল, ইহার ২৪টি পাতার প্রত্যেকটি ৩০ ভরি ওজনের। রামপাল একটি বিস্তীর্ণ নগরী ছিল ; ইহার নিকটস্থ পঞ্চসার, দেওভোগ, বজ্রযোগিনী, সুখবাসপুর জোড়াদেউল প্রভৃতি বহু স্থানে প্রাচীর গৃহাদির ঘৃংসাবশেষ দৃষ্ট হয়। কাহারও কাহারও মতে নালান্দ মহাবিহারের সুপ্রসিদ্ধ অধ্যক্ষ শীলভদ্র রামপালে জন্মগ্রহণ করেন। রামপালের সেনবংশের পতন সম্বন্ধে কথিত আছে সেনবংশীয় রাজা দ্বিতীয় বল্লালসেন যখন রাজা তখন একজন মুসলমান প্রজা ফকিরের আশীবর্বাদে পুত্র সস্তান লাভ করিয়া প্রতিজ্ঞা পালনের জন্য রাজনিষেধ সত্ত্বেও একটি গোহত্য করেন। এক টুকরা মাংস চিলে রাজপ্রসাদে নিক্ষেপ করিলে রাজা অনুসন্ধান করিয়া ঘটনার কথ। জানিতে পারিয়া মুসলমান প্রজার শিশু পুত্রটিকে বধ করিতে আদেশ দেন। রাজাদেশে শিশুপুত্র নিহত হইলে শোকসন্তপ্ত পিতা মক্কাশরীফে গমন করেন ; তথায় হজরত আদম তাহার করুণ কাহিনী শুনিয়া বহু অনুচর লইয়া রামপালের নিকট আসিয়া বয়েকটি গোবধ করেন। সুতরাং রাজা দ্বিতীয় বল্লালের সহিত তাহার যুদ্ধ হয়। কথিত আছে চোঁদ দিন যুদ্ধের পর হজরত আদম যখন সন্ধ্যায় নমাজ পড়িতেছিলেন সেই সময়ে দ্বিতীয় বল্লাল সহসা আসিয়া তরবারীর আঘাতে তাঁহাকে হত্যা করেন। যুদ্ধে আসিবার সময়ে দ্বিতীয় বল্লাল সঙ্গে করিয়া একটি শিক্ষিত পারাবত আনিয়াছিলেন এবং পরিবারবর্গকে বলিয়া আসিয়াছিলেন যে যুদ্ধে হারিয়া যাইলে তিনি পারাবতটি ছাড়িয়া দিবেন এবং প্রাসাদে উহা পৌছাইলে পরিবারবর্গ তাহার পরাজয়ের কথা জানিতে পরিবেন। হজরত আদমকে নিহত করিয়া দ্বিতীয় বল্লাল যখন দীঘিতে স্নান করিতেছিলেন সেই সময়ে পারাবতটি হঠাৎ ছাড়া পাইয় রাজপুরীতে চলিয়া যায়। রাজ পরিজনের সকলে তখন একটি বৃহৎ অগ্নিকুণ্ডে প্রাণ বিসজৰ্জন করেন। রাজা তাড়াতাড়ি গৃহে ফিরিয়া মনের দুঃখে নিজেও অগ্নিকুণ্ডে আত্মাহুতি দেন ; এই জন্য তিনি পোড়া রাজা নামে পরিচিত। রামপালের রাজপ্রাসাদের ভগ্নাবশেষের মধ্যে অগ্নিকুণ্ড নামে একটি জলাশয় এখনও বিদ্যমান ; উহা খনন করিলে বহু পরিমাণে অঙ্গার পাওয়া যায়। প্রবাদ এই অগ্নিকুণ্ডেই রাজা দ্বিতীয় বল্লালসেন সপরিবারে ধ্বংসপ্রাপ্ত হন। রামপালের ঠিক উত্তরে কাজী-কয়ূব গ্রামের দুগাবাড়ী নামক স্থানে আদম শহীদ বা বাবা আদমের মসজিদ ভগ্নাবস্থায় দণ্ডায়মান আছে। ইহার শিলালেখ হইতে জানা যায় যে ১৪৮৩ খৃষ্টাব্দে ইহা সুলতান জলালউদ্দীন ফতে শাহের রাজত্বকালে মালিক কাফুর কর্তৃক নিৰ্ম্মিত হয়। ইহা ঢাকা জেলার প্রাচীনতম 4