পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পুর্ব ভারত রেলপথে বাংলাদেশ। ঈস্ট ইণ্ডিয়ান রেলওয়ে কোম্পানি নামক একটি ব্যবসায়ীসঙঘ ১৮৫৪ খৃষ্টাব্দের ১৫ই অগষ্ট তারিখে হাওড়া হইতে হুগলী পর্য্যন্ত ২৩ মাইল রেলপথ খুলেন। ইহাই পূর্ব ভারত রেলপথের সূচনা। ১৮৫৫ খৃষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারী মাসের মধ্যে এই রেল পথকে রাণীগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত করা হয়। ইহার পর কয়েক বৎসর পর্য্যন্ত আর নূতন রেলপথ খোলা হয় নাই। ১৮৫৭ খৃষ্টাব্দে সিপাহী বিদ্রোহের সময় কলিকাতা হইতে উত্তর ভারতে প্রেরিত সৈন্যগণকে রাণীগঞ্জ পর্য্যন্ত রেলে যাইয়া অতঃপর পদব্রজে বা অন্য যান বাহনের সাহায্যে গন্তব্য স্থানে পৌছিতে হয়। ১৮৬৩ খৃষ্টাব্দে এই রেলপথকে আসানসোলের নিকটবর্তী সিয়ারসোল পর্য্যন্ত লইয়া যাওয়া হয় | ক্রমশ: এই রেলপথ অগ্রসর হইয়া পাটনা, গয়া, মোগলসরাই, বিন্ধ্যাচল, এলাহাবাদ ও কানপুর প্রভৃতি স্থান দিয়া দিল্লী পৰ্য্যস্ত চলিয়া যায়। - ১৮৭৯ খৃষ্টাব্দে সরকার এই রেলপথ কিনিয়া লন এবং ইহার পরিচালনার ভার একটি নবগঠিত কোম্পানির হস্তে ন্যস্ত করেন। সরকারের সহিত চুক্তি অনুসারে কোম্পানি ১৯২৪ খৃষ্টাব্দ পর্য্যন্ত এই রেলপথের পরিচালনা করেন। অতঃপর ১৯২৫ খৃষ্টাব্দের ১লা জানুয়ারী তারিখে সরকার এই রেলপথের ভার নিজ হস্তে গ্রহণ করেন। ইতিপূবেৰ্ব ১৮৯৯ খৃষ্টাব্দের ১লা জানুয়ারী তারিখে “আউধ-রোহিলখণ্ড" নামক রেল পথটি সরকার নিজের তত্ত্বাবধানে আনয়ন করিয়াছিলেন। এই রেলপথ মোগলসরাই হইতে সুরু করিয়া বেণারস, লক্ষেী, অযোধ্যা, নিমসার, বেরিলী, সাজাহানপুর ও মোরাদাবাদ হইয়া হরিদ্বার ও সাহারাণপুর পর্য্যন্ত গিয়াছে। ১৯২৫ খৃষ্টাব্দে পূবর্ব ভারত রেলপথ সরকারী পরিচালনায় আসিবার পর উক্ত বৎসরে ১লা জুলাই হইতে “আউধ-রোহিলখণ্ড” রেলপথকে উহার সহিত সমিলিত করিয়া দেওয়া হয়। বর্তমানে পূর্ব ভারত রেলপথ বলিতে এই উভয় রেলপথের সমষ্টিকে বুঝায়। এই রেলপথের বিস্তৃত চারি হাজার মাইলেরও উপর। বাংলা, বিহার, যুক্তপ্রদেশ ও মধ্য প্রদেশের বহু স্থান এই রেলপথের দ্বারা সেবিত। আর্য্যাবৰ্ত্তের অধিকাংশ প্রাচীন নগর ও তীর্থক্ষেত্র এই রেলপথের উপর বা নিকটে অবস্থিত। বাংলা দেশের হাওড়া, হুগলী, বৰ্দ্ধমান, মুর্শিদাবাদ ও বীরভূম জেলার মধ্য দিয়া এই রেলপথ বিস্তৃত। এই সকল জেলার প্রসিদ্ধ স্থান এবং এই রেলপথের উপর অবস্থিত অধুনা বিহারের অন্তর্গত মানভূম প্রভৃতি বাংলাভাষাভাষী অঞ্চল অথবা সাঁওতাল পরগণা প্রভৃতি যে সকল স্থানের সহিত বাঙালীর ঘনিষ্ঠ সংশ্ৰব আছে তাহাদের বিবরণ এই স্থানে লিপিবদ্ধ করা হইল।