পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(ক) হাওড়া—বৰ্দ্ধমান—আসানসোল—সীতারামপুর (প্রধান লাইন) লিলুয়া—হাওড়া হইতে তিন মাইল দূর। এখানে পূর্ব ভারত রেলপথের একটি ওয়র্কশপ্ত বা গাড়ী তৈয়ারী ও মেরামতের কারখানা আছে। এই কারখানায় হাজার হাজার লোক কাজ করে। লিলুয়ার রেল-উপনিবেশটি অতি সুন্দর। এখানে বিদ্যালয়, উদ্যান, প্রমোদাগার, ভজনালয়, পাঠাগার প্রভৃতি আছে। লিলুয়ার অনাথ আশ্রম ও গো-শালা প্রভৃতি দ্রষ্টব্য স্থান। ” বেলুড়–হাওড়া হইতে ৪ মাইল দূর। এখানে গঙ্গার তীরে জগৎ বিখ্যাত বেলুড় মঠ বা রামকৃষ্ণ মিশনের প্রধান কাৰ্য্যালয় অবস্থিত। বেলুড়ে স্বামী বিবেকানন্সের সমাধি মন্দির, স্বামী ব্ৰহ্মানদের মন্দির, শ্রীসারদামণি দেবী বা রামকৃষ্ণ সঙ্ঘের মাতা ঠাকুরাণীর মন্দির প্রভৃতি দেখিবার জন্য প্রত্যহ বহু লোক সমাগম হয়। সম্প্রতি বহু অর্থ ব্যয়ে বেলুড়ে রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের প্রস্তর মণ্ডিত মন্দির নিৰ্ম্মিত হইয়াছে এবং তন্মধ্যে পরমহংসদেবের মৰ্ম্মর নিৰ্ম্মিত মুক্তির নিত্য পূজা হইতেছে। এই মন্দিরটি পরিকল্পনা করিয়াছিলেন স্বয়ং স্বামী বিবেকানন্দ অর্থাভাব বশতঃ তাহার জীবদ্দশায় এই মন্দির নির্মাণের সুযোগ ঘটে নাই। দুইজন মহীয়সী মাকিনী মহিলার প্রভূত অর্থ সাহায্যে স্বামী বিবেকানন্দের স্বপু আজ বাস্তব মুক্তি পরিগ্রহ করিয়াছে। এরূপ বহুমূল্য ও বৃহৎ মন্দির বাংলা দেশে আর নাই। রামকৃষ্ণদেবের সন্ধ্যারতি দেখিবার জন্য বেলুড় মঠে প্রতাহ বহু নরনারীর সমাবেশ হয়। প্রতি বৎসর ফান্তন মাসে বেলুড় মঠে মহাসমারোহে পরমহংসদেবের জন্ম-মহোৎসব অনুষ্ঠিত হয় এবং তদুপলক্ষে প্রায় লক্ষাধিক লোকের সমাগম হয়। বালী—হাওড়া হইতে ৬ মাইল দূর। ইহা গঙ্গাতীরে অবস্থিত একটি প্রাচীন ও বদ্ধিষ্ণু ভদ্র পল্লী। কয়েক বৎসর হইল এখানে গঙ্গার উপর এক প্রকাণ্ড রেলওয়ে সেতু নিৰ্ম্মিত হইয়াছে; এই সেতুটির উভয় পাশ্বে গাড়ী-ঘোড়া, মোটরকার ও পদচারীদের জন্য স্বতন্ত্র রাস্ত আছে। ভারতের ভূতপূবর্ব রাজপ্রতিনিধি লর্ড ওয়েলিংডনের নামানুসারে ইহার নাম দেওয়া হইয়াছে “ওয়েলিংডন সেতু ”। পূবর্ব ভারত রেলপথের কয়েকটি যাত্রী-গাড়ী এই সেতুর উপর দিয়া শিয়ালদহ পৰ্য্যস্ত যাতায়াত করে। সুপ্রসিদ্ধ দক্ষিণেশ্বরের কালীবীড়ী এই সেতুর ঠিক পাশ্বে গঙ্গার পূর্ব তীরে অবস্থিত । বালীর দক্ষিণে ঘু মুড়ীতে ভেটিবাগান নামে তিবৃতীয়দের একটি মন্দির আছে। ১৭৭২ খৃষ্টাব্দে ভুটিয়া যুদ্ধের পর তিবৃতের তাশীলামার মধ্যস্থতায় সন্ধি স্থাপিত হইলে, তাশীলামার অনুরোধে ভাগীরথী কুলে বৌদ্ধদিগের জন্য ওয়ারেন্থ হেস্টংস এই মন্দির নির্মাণ করেন। বাংলা দেশের মন্দিরের মত ইহার ছাদ ও মন্দির গাত্রে তিবৃতীয় মুক্তি উৎকীর্ণ। তাশীলামা মন্দিরের জন্য বহু শাস্ত্র গ্রন্থ ও পূজার উপকরণ পাঠাইয়াছিলেন এবং পুরাণগিরি গোঁসাই নামক শৈব সন্ন্যাসীকে মোহাস্ত নিযুক্ত করেন। মন্দিরে বৌদ্ধ ও হিন্দু মুক্তি দুই আছে। তাশীলামা চীন সম্রাটের দরবারে গমন কালে পুরাণগিরিকে সঙ্গে লইয়া গিয়াছিলেন। বালী গ্রামে পূবেৰ এক শ্রেণীর দেশীয় কাগজ প্রস্তুত হইত; উহা “বালীর কাগজ ’ নামে বিখ্যাত ছিল। -