পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ናO वां६लांग्न बशर्त्र খৃষ্টান মিশনারীগণের সংশ্রবের জন্যই শ্রীরামপুরের বিশেষ প্রসিদ্ধি। বর্তমান বাংলা ভাষার গঠন ও পুষ্টসাধনে এই স্থানের দান অমূল্য। সুবিখ্যাত পাদরী মার্শম্যান, ওয়ার্ড ও কেরি সাহেবের প্রচেষ্টায় বাংলা ভাষার যথেষ্ট শ্রীবৃদ্ধি হইয়াছিল। তাঁহাদের উদ্যোগে এই স্থানে সবর্বপ্রথম বাংলা ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম বাংলা সংবাদ পত্র “সমাচার দর্পণ ” এবং প্রথম বাংলা অক্ষরে মুদ্রিত ভারতের মানচিত্র এই স্থান হইতেই প্রকাশিত হয়। ১৮০১ খৃষ্টাব্দের ৭ই ফেব্রুয়ারী বাংলা বাইবেলের শেষ অংশ মুদ্রিত হইয়া বাহির হয়। শ্রীরামপুরের খৃষ্টান সমাধি ক্ষেত্রে এই মনীমিত্রয়ের সমাধি বাঙালী মাত্রেরই দর্শনীয়। শ্রীরামপুরের কলেজটিও এই মিশনারীগণের অন্যতম কীৰ্ত্তি । এই কলেজ-গৃহটি ১৮২১ খৃষ্টাব্দে নিৰ্ম্মিত হয়। ইহা গঙ্গাতীরে অবস্থিত একটি সুদৃশ্য ভবন। ইহার ঠিক বিপরীত দিকে গঙ্গার পূবৰ্বতীরে বারাকপুরে লাটসাহেবের মনোরম উদ্যান-বাটি অবস্থিত। শ্রীরামপুর কলেজের গ্রন্থাগারে কেরির ব্যবহূত চেয়ার প্রভৃতি রক্ষিত আছে। ভারতবর্ষের মধ্যে একমাত্র এই কলেজ হইতেই খৃষ্টীয় ধৰ্ম্মশাস্ত্রের উপাধি প্রদান করা হয়। “ সেণ্ট ওলাফু ’ নামক গির্জা শ্রীরামপুরের অন্যতম দ্রষ্টব্য। ইহা প্রথমে দিনেমার দিগের ছিল। গির্জার ফটকে ডেনমার্কের রাজা ষষ্ঠ ফ্রেডারিকের নামের আদ্যক্ষর এখনও দেখিতে পাওয়া যায়। বৰ্ত্তমান ম্যাজিস্ট্রেই আদালতের পূবর্বদিকে দিনেমার শাসন-কর্তার বাস ভবন ছিল। শ্রীরামপুরে কয়েকটি পাটকল ও কাপড়ের কল এবং একটি বয়ন বিদ্যালয় আছে। শ্রীরামপুরের চাতরা নামক পল্লীতে একটি প্রাচীন শীতলা মন্দির আছে। এখানে বৈশাখ মাসে বহু যাত্রীর সমাগম হয় । প্রতিবৎসর শিবচতুর্দশীর পর দিন হইতে শ্রীরামপুরে একমাস স্থায়ী একটি মেলা হয়। এই এখানকার গোস্বামিগণ বাংলার অন্যতম বিখ্যাত জমিদার বংশ । শ্রীরামপুরের নিকটবর্তী মাহেশ ও বল্লভপুর গ্রামে জগন্নাথ দেব ও রাধাবল্লভজীর দুইটি প্রাচীন মন্দির আছে। মাহেশের রথযাত্রা বিশেষ প্রসিদ্ধ। একমাত্র পুরী ছাড়া এত বড় রথের মেলা অন্য কোথাও দেখা যায় না। এই রথের মেলায় লোকশিল্পের নিদশন স্বরূপ জিনিসপত্র দেখিতে পাওয়া যায়। বঙ্কিমচন্দ্রের “রাধারাণী ‘’ নামক উপন্যাসে মাহেশের রথের মেলার সুন্দর বর্ণনা আছে। রথযাত্রা উপলক্ষে শ্রীরামপুরে “দ্বাদশ গোপাল ” নামে অপর একটি মেলা অনুষ্ঠিত হয়। বল্লভপুরের রাধাবল্লভের উৎপত্তি সম্বন্ধে গল্প প্রচলিত আছে যে, পূবেৰ্ব এই স্থান অরণ্যময় ছিল এবং চাতরার রুদ্রপণ্ডিত সংসার ত্যাগ করিয়া এখানে আসিয়া তপস্যা করিতে থাকেন ; রাধাবল্লভ সন্তুষ্ট হইয়া সন্ন্যাসীর বেশে দেখা দিয়া তহাকে গৌড়ের সুলতানের শয়ন কক্ষের দ্বারদেশের প্রস্তরখণ্ড লইয়া আসিয়া তাহা হইতে বিগ্রহ নিৰ্মাণ করিতে বলেন। রুদ্র পণ্ডিত গৌড়ে উপস্থিত হইয়া সুলতানের হিন্দু প্রধান মন্ত্রীর সাহায্য প্রার্থী হন। ইতিমধ্যে সুলতানের শয়নকক্ষের প্রস্তর খণ্ডটি হইতে ফোটা ফোট জল বাহির হইতে দেখা যায়। প্রধান মন্ত্রী তখন সুলতানকে সমস্ত ব্যাপার নিবেদন করিলেন এবং বলিলেন প্রস্তর খণ্ডটি হইতে অশ্রু বাহির হইতেছে এবং অবিলম্বে ইহাকে প্রাসাদের বাহির করা উচিত। রুদ্র পণ্ডিতকে তখন ইহা লইয়া যাইবার অনুমতি দেওয়া হইল। রুদ্র পণ্ডিত তখন মুস্কিলে পড়িলেন কি করিয়া এই ভারী পাথর বহিয়া লইয়া যান। রাধাবল্লভ তখন স্বপ্নে তাহাকে ঘরেফিরিয়া গিয়া পাথরের জন্য অপেক্ষা করিতে বলিলেন । অল্পকাল মধ্যেই পাথরটি ভাসিতে