পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(ঙ) পাৰ্বতীপুর জংশন—কাটিহার জংশন। দিনাজপুর জংশন-কলিকাতা হইতে ২৫২ মাইল ও পাবর্বতীপুর জংশন হইতে ১৮ মাইল দূর। জেলার সদর শহর দিনাজপুর পুনর্ভবা নদীর তীরে অবস্থিত। দিনাজপুর অতি পুরাতন স্থান। অনেকে অনুমান করেন যে পুণ্ডবৰ্দ্ধনভুক্তি বা উত্তরবঙ্গের কোন বর্ষ, বিষয় বা পরগণার অধিকাংশ দিনাজপুরের নিকটে অবস্থিত ছিল। এখানে মহারাজা উপাধিধারী উত্তররাষ্ট্ৰীয় কায়স্থজাতীয় একটি পুরাতন জমিদার বংশের বাস। কাহারও কাহারও মতে দিনাজ বা দিনরাজ নামক জনৈক ব্যক্তি এই রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা এবং তাহার নাম হইতেই এই স্থানের নাম দিনাজপুর হইয়াছে। আবার কেহ কেহ বলেন যে রাজা গণেশ দত্ত খান বা ইতিহাসবিশ্রুত রাজা গণেশই দিনাজপুর রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগে শ্ৰীমন্ত দত্ত চৌধুরী দিনাজপুরের রাজা বা জমিদার ছিলেন। কথিত আছে, কালিকার উপাসক এক ব্রহ্মচারী বিগ্রহসহ বহু সম্পত্তি শ্ৰীমন্ত দত্ত চৌধুরীকে দিয়া যান। এই ব্রহ্মচারীর সমাধি দিনাজপুর রাজবাড়ীর মন্দির দ্বারের নিকটে অবস্থিত। শ্রীমস্তের একমাত্র পুত্রের অকালমৃত্যু হওয়ায় তাহার দৌহিত্র শুকদেব ঘোষ সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন। শুকদেবের পুত্র রাজা প্রাণনাথ রায় অতি বিখ্যাত ছিলেন। কান্তনগরের সুবিখ্যাত কান্তজীর মন্দির ইহারই অমরকীক্তি। দিনাজপুর হইতে ১২ মাইল দক্ষিণে মুর্শিদাবাদ রোড নামক রাজপথের পাশৃে ইহার দ্বারা খনিত “প্রাণসাগর’ নামে একটি দীঘি দেখিতে পাওয়া যায়। দিনাজপুর শহরটি রাজগঞ্জ, কাঞ্চনঘাট, পাহাড়পুর ও ফুলহাট এই কয় অংশে বিভক্ত। দিনাজপুরের থানার নিকটবৰ্ত্তী মশানকালীর মন্দির একটি প্রাচীন স্থান। দিনাজপুরের রাজবাড়ীটিও খুব পুরাতন। ইহার দুই দিকে পরিখার চিহ্ন দেখিতে পাওয়া যায়। ১৮৯৭ খৃষ্টাব্দের ভীষণ ভূমিকম্পে পুরাতন প্রাসাদটির সমূহ ক্ষতি হইলে মহারাজা স্যার গিরিজানাথ রায় বহু অৰ্থ ব্যয়ে আধুনিক যুগের উপযোগী করিয়া উহার আমূল সংস্কার করান। বাণগড় হইতে আনীত বহু প্রাচীন কীৰ্ত্তি রাজবাড়ীতে রক্ষিত আছে। মহারাজার বৈঠকখানার সম্মুখে একাদশ খৃষ্টাব্দের একটি বৌদ্ধ চৈত্য, একটি শিবমন্দির ও একটি কারুকার্য্যখচিত স্তম্ভ আছে। চৈত্যটি দেখিতে মন্দিরের মত ; ইহার চারিদিকে বুদ্ধদেবের জীবনের চারিটি প্রধান ঘটনার অর্থাৎ জন্ম, গৃহত্যাগ, বুদ্ধত্বলাভ ও নিববাণের চিত্র আছে। স্তম্ভটি কষ্টিপাথর বা ব্রহ্মশিলা নিৰ্ম্মিত, ইহার নিম্নভাগে যে লিপি আছে তাহা হইতে জানা যায় যে ৮৮৮ শকাব্দে (৯৬৬ খৃষ্টাব্দে) কাম্বোজবংশজাত গৌড়দেশের জনৈক রাজা একটি শিবমন্দির নিৰ্ম্মাণ করিয়াছিলেন। ইহাই বাংলার কাম্বোজ অধিকারের একমাত্র নিদর্শন। দিনাজপুর রাজবংশের ঠাকুরবাড়ীতেও বাণগড় হইতে আনীত অনেকগুলি পুরাতন পাথরের খোদাই করা চৌকাঠ আছে। ইহাদের মধ্যে নাগ দরওয়াজা অতি সুন্দর। চৌকাঠের উচচতা দেখিলে মনে হয় যে ইহা যে মন্দিরের সহিত সংলগ্ন ছিল তাহ অন্ততঃ এক শত ফুট উচচ ছিল। নীচে হইতে দুইটি নাগ পরস্পরকে বেষ্টন করিতে করিতে মাথার উপরে আসিয়া মিলিয়াছে। এরূপ সুন্দর কারুকার্ষ্য অতি অল্পই দৃষ্ট হয়। মহারাজার প্রাসাদের সম্মুখে একটি পুরাতন দীঘির পাড়ে অনেকগুলি পুরাতন কামান আছে, তাহার মধ্যে দুই একটি ফরাসীজাতি কর্তৃক নিৰ্ম্মিত। দিনাজপুর হইতে পরিস্কার দিনে কাঞ্চনজঙথা ও হিমালয়ের অন্যান্য তুষারাবৃত শিখর মাঝে মাঝে যায়। কালীতলা মহাল্লায় মশানকালী নামে একটি পুরাতন কালী আছেন। ইহার নিকট দিনাজপুর রাজদিগের পুরাতন বিচারালয় ছিল এবং মশানকালীর সম্মুখে প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত ব্যক্তিদিগকে | :