পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূবৰ্ব ভারত রেলপথে ጳፅ ১৭৪১ খৃষ্টাব্দে মহারাষ্ট্ৰীয়গণ বাংলা আক্রমণ করিয়া নবাব আলিবন্দীখাকে হটিয়া যাইতে বাধ্য করিয়া হুগলীর দুর্গ অধিকার করেন। মীর হাবিৰ দুৰ্গাধ্যক্ষ ও শিব রাও শাসনকর্তা নিযুক্ত হন। পরে মহারাষ্ট্ৰীয় সেনাপতি ভাস্কর পণ্ডিত পরাজিত হইলে তাহার হুগলী পরিত্যাগ করিয়া বিষ্ণুপুরে পলাইতে বাধ্য হন । ১৬৫১ খৃষ্টাব্দে ইংরেজগণ হুগলীতে একটি কুঠি স্থাপন করেন। প্রথম প্রথম ব্যবসায়ে বিশেষ সুবিধা না হওয়ায় বাংলায় কোম্পানির বাণিজ্য বন্ধ করিবার প্রস্তাব হয়। কিন্তু পরে ১৬৫৭ খৃষ্টাব্দে এই কুঠির অধীনে কাশীমবাজার, পাটনা ও বালেশ্বরে কুঠি স্থাপন করিয়া সোর ও রেশমের ব্যবসায়ে কোম্পানি বিশেষ লাভবান হন। জব চাণকের সময়েই হুগলীর মুসলমান ফৌজদারের সহিত বিবাদের জন্য ইংরেজের এই স্থান ত্যাগ করিয়া ফৌজদারের কবল হইতে দূরে সুতানুটিতে বাণিজ্য-কুঠি স্থাপন করেন এবং তাহার ফলেই বৰ্ত্তমান কলিকাতা শহর গড়িয় উঠে। ১৭৫৭ খৃষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে ক্লাইভের সময়ে ইংরেজ সৈন্য হুগলীর দুর্গ ও ফৌজদারের সমস্ত সম্পত্তি অধিকার করে এবং সপ্তাহকাল ধরিয়৷ হুগলী ও নিকটস্থ গ্রামগুলি লুন্ঠন করিয়া কলিকাতায় প্রত্যাবৰ্ত্তন করে। বর্তমানে যে স্থানে হুগলীর কলেক্টরের বাসভবন এবং পুরাতন কাছারী বাড়ী আছে সেই স্থানেই মুঘলদিগের দুর্গ ছিল। বাংলার মধ্যে সবর্বপ্রথম ছাপাখানা স্থাপিত হয় হুগলীতে। পঞ্চানন কৰ্ম্মকার ও মনোহর দাসের সহযোগিতায় উইলকিনস সহেব এই কায্য সম্পন্ন করিয়াছিলেন। ১৭৭৮ খৃষ্টাব্দে এই ছাপাখানায় হ্যালহেড্‌ সাহেবের বাংলা ব্যাকরণ মূদ্রিত হইয়াছিল। দানবীর হাজী মহম্মদ মহশীনের সুপ্রসিদ্ধ ইমাম্বাড়া এখানকার প্রধান দ্রষ্টব্য। ইহা প্রায় পোনে তিন লাখ টাকা ব্যয়ে নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল। ইহার গম্বুজ প্রায় ৮০ ফুট উচচ। ইহার দেওয়ালে’ কোর-আনের শ্লোক উৎকীর্ণ আছে। মহরমের সময় এখানে বিশেষ সমারোহ হয়। নিকটস্থ তাহার বাগিচা ও সমাধিও এখানকার দ্রষ্টব্য। - অতিরিক্ত বিলাসী ও অলস ব্যক্তির তুলনা করিতে গিয়া লোকে কথায় বলে, লোকটা যেন নবাব খাঞ্জা খা । খাজাহান খাঁ বা খাঞ্জা খা অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে পারস্যের রাজধানী তিহরাণ হইতে ভারতে আসিয়া মুঘল বাদশাহের অধীনে কাৰ্য্য গ্রহণ করেন। ঈস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি বাংলা, বিহার ও ওড়িষ্যার দেওয়ানী লাভ করিলে ফৌজদার ওমরবেগের পর তিনি হুগলীতে ফৌজদার নিযুক্ত হইয়া আসেন। অতিরিক্ত বিলাগিতার জন্য তিনি প্রসিদ্ধ ছিলেন। ১৭৯৩ খৃষ্টাব্দে ফৌজদারের পদ উঠিয়া গেলে তিনি কোম্পানির নিকট হইতে মাসিক ২৫০ টাকা হিসাবে বৃত্তি পাইতেন। তাহার মৃত্যুর পর তাহার স্ত্রী ১০০ টাকা হিসাবে বৃত্তি পাইতেন। “ লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন " এই প্রবাদবাক্যের প্রসিদ্ধ দানবীর গৌরী সেন প্রায় তিন শত বৎসর পূবেব হুগলী শহরের অস্তগত বালি মহাল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। বাণিজ্যের দ্বারা তিনি প্রভূত অর্থোপার্জন করেন এবং উহার অধিকাংশই দানকার্য্যে ব্যয় করেন। কথিত আছে অভাবগ্রস্ত ভদ্রলোকগণ পাছে তাহার নিকট উপস্থিত হইয়া সাহায্য প্রার্থনা করিতে সঙ্কোচ বা লজ্জাবোধ করেন সেই জন্য তিনি দোকানদারগণকে বলিয়া রাখিয়াছিলেন যে তাঁহার নাম লইয়া কেহ কিছু কিনিতে আসিলে তৎক্ষণাৎ যেন তাহা দেওয়া হয়। পরে তিনি উহার মূল্য দিয়া দিতেন। ইহা হইতেই প্রবাদবাক্যের উৎপত্তি। তাঁহার প্রতিষ্ঠিত শিব মন্দির হুগলীতে এখনও বর্তমান আছে।