পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/১৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৫৮ বাংলায় ভ্রমণ সৰ্ব্বাপেক্ষা সুন্দর । এজন্য ইহার নাম পাৰ্ব্বত্য নগরীর রাণী (Queen, of the Hill Stations), সমুদ্রপৃষ্ঠ হইতে ইহা ৬,৮১২ফুট উচ্চ। এখান হইতে তুষার-মণ্ডিত বিস্তৃত শৈলশ্রেণী যেমন সুন্দর দেখা যায় ভারতবর্ষ কেন পৃথিবীর আর কোনও পাৰ্ব্বত্য নগরী হইতে তেমন দেখা যায় না। সুবিশাল কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য ও গাম্ভীর্য অবর্ণনীয়। জলাশয় বা নদী থাকার জন্য শ্ৰীনগর, নৈনিতাল, শিলং ও উটাকামণ্ড, অনেকের মনোরঞ্জন করে বটে, কিন্তু চিরহরিৎবর্ণ ঘনপল্লব বিটপীমণ্ডিত পৰ্ব্বতরাজিবেষ্টিত স্থমহান কাঞ্চনজঙ্ঘার বহুবিস্তৃত ও চিরশুভ্র শিখরমালা দাজ্জিলিং হইতে যে ভাবে দেখা যায় সারা দুনিয়ায় তাহার তুলনা নাই । • - পৃথিবীর সৰ্ব্বোচ্চ পৰ্ব্বত শৃঙ্গগুলির মধ্যে কাঞ্চনজঙ্ঘা তৃতীয় স্থান অধিকার করিলেও এত উচ্চ পৰ্ব্বত শিখর এমন মুক্তভাবে ও সম্পূর্ণরূপে পৃথিবীর কোনও পাৰ্ব্বতা নগরী হইতে দৃষ্ট হয় না। মুসৌরী, সিমলা, ডালহৌসী বা মারী প্রভৃতি স্থানে এমন দুর্ভেদ্য ঘন এবং নয়নাভিরাম অরণ্যানী নাই । কার্সিয়ংএর মত দাজ্জিলিংও পূৰ্ব্বে সিকিম রাজ্যের অন্তভুক্ত ছিল। ১৮২৯ খৃষ্টাব্দে ইংরেজের প্রথম দাজ্জিলিং-এ আসেন এবং ১৮৩৫ খৃষ্টাব্দে একটি স্বাস্থ্যনিবাস স্থাপন করিবার উদ্দেশ্যে সিকিমরাজ বার্ষিক ৬০ ০০ টাকা খাজনা পাইয়া দাজ্জিলিং পাহাড় ইংরেজ সরকারকে ছাড়িয়া দেন । ১৮৪০ খৃষ্টাব্দে কার্সিয়ংএর নীচে পাঙ্খাবাড়ী হইতে দাজ্জিলিং পৰ্য্যন্ত একটি রাস্ত তৈয়ারী হয়। সিকিমরাজ যে খাজনা পাইতেন তাহা দুই জন ইংরেজকে বন্দী করিবার অপরাধে ১৮৫০ খৃষ্টাব্দ হইতে বন্ধ করিয়া দেওয়া হয় । দাজ্জিলিং এখন বাংলার লাট সাহেবের গ্রীষ্মনিবাস । দাজ্জিলিং শহরটি অৰ্দ্ধবৃত্তাকারে উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত । এখানকার বাড়ীগুলি অধিকাংশ কাঠের এবং দরজাগুলি কাচের সাশি দিয়া অ’াটা । দাৰ্জিলিং শহরের সর্বাপেক্ষ উচ্চ অংশের নাম কাটাপাহাড় : তাহার নীচেই জলাপাহাড় । ইহার উপর গোরা বারিক অবস্থিত এবং জলাপাহাড়ের উপর ইংরেজ সৈন্যদিগের জন্য স্বাস্থ্যনিবাস অবস্থিত। এই পাহাড়ের উপরিস্থ জঙ্গল আগুনে জ্বলিয়া বিনষ্ট হইয়াছিল বলিয়া জলাপাহাড় নাম হইয়াছে। শহরের মধ্যস্থলে অব জরভেটরী হিল' নামক পাহাড়ও বেশ উচ্চ। পূর্বে এখানে একটি মান মন্দির ছিল বলিয়া ইহার নাম হইয়াছে অব জরভেটরী পাহাড়। ইহার শিখরদেশে আরোহণ করিলে গিরি সম্রাট কাঞ্চনজঙ্ঘা ও পার্শ্ববৰ্ত্তী তুষারাচ্ছন্ন পৰ্ব্বতশৃঙ্গগুলি অতি মনোরম দেখায়। পূৰ্ব্বদিকে দজ্জিলিং শহরটিও এখান হইতে সুন্দর দেখায়। পরিষ্কার দিনে এখান হইতে কালিম্পং শহরও স্পষ্ট দেখিতে পাওয়া যায়। বিশেষতঃ রাত্রিতে দূর হইতে কালিম্পং এর আলোকমালা বিচিত্র ও রমণীয় মনে হয়। -