পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/১৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলায় ভ্রমণ اسراييلا সমান্তরালে আসিয়াছে তিস্তা-উপত্যক রাস্তা ; কালিম্পং রাস্ত কালিম্পং হইয়া সিকিম তিব্বত ও ভূটান পৰ্য্যন্ত গিয়াছে ; তৃতীয়টি পাশোক রাস্ত ঘুম ও দার্জিলিং গিয়াছে। এতগুলি রাস্ত আসায়, সাকোর কাছেই নদীর পশ্চিম কুলে একটি ছোটাে গঞ্জ গড়িয় উঠিয়াছে ; স্থানটি স্বাভাবিক সৌন্দর্ঘ্যে পূর্ণ। ইহারই ৩ মাইল উত্তরে দাৰ্জিলিং জেলার একটি বিশেষ দ্রষ্টব্য স্থান রঙ্গীত ও তিস্তার সঙ্গম ; ইহার কথা আগেই লেখা হইয়াছে l সমুদ্র পৃষ্ঠ হইতে ৭০০ ফুট উচ্চ তিস্ত সাকো পার হইয়া মোটরের রাস্ত দিয়া কালিম্পং সাড়ে নয় মাইল উপরে। কিন্তু অনেকেই অশ্বপৃষ্ঠে, রিকশ চড়িয়া কিংবা পদব্রজে একটি সোজাসুজি পাহাড়ে রাস্তা দিয়া কালিম্পং গমন করেন ; এই পথে মাত্র ৭ মাইল পড়ে। এই রাস্ত অবশ্য মধ্যে মধ্যে প্রধান মোটর রাস্তায় আসিয়া পড়িয়াছে। কালিম্পং সমুদ্র পৃষ্ঠ হইতে ৩,৯৩৩ ফুট উচ্চ। নগরীর রক্ষীস্বরূপ পার্শ্বে দাড়াইয়া আছে ৫,৫৯০ ফুট উচ্চ দেওলো পাহাড়। উত্তরে সেকেন্দার পর্বতমালার পশ্চাতে কাঞ্চনজঙ্ঘা ও অন্যান্য তুষারাবৃত শিখরের উপরিভাগ দেখিতে পাওয়া যায়। পশ্চিমে গ্রেট রঙ্গীতের শু্যামল উপত্যকা, দক্ষিণ-পশ্চিমে জঙ্গলাকীর্ণ সিঞ্চল পাহাড়, দক্ষিণে বাংলার সমতল ভূমি এবং পূর্বে রিলি নদীর সুন্দর উপত্যকার পশ্চাতে শ্রেণীর পর শ্রেণী নিবিড় অরণ্যে আচ্ছাদিত পৰ্ব্বতমালা ; এই সকল মিলিয়া কালিম্পংকে স্বাভাবিক সৌন্দর্য্যের আকর করিয়া তুলিয়াছে। . কালিম্পং শহরে দেখিবার মধ্যে প্রধান হইল বাজারের উপরে সুবৃহৎ গথিক রীতিতে নিৰ্ম্মিত গির্জা । অনতিদূরে তিববতীয় রীতিতে নিৰ্ম্মিত ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল তোরণ। ইহার রঞ্জিত ও উজ্জল স্তম্ভ ও কাৰ্ণিসের কারুকার্য্য সিকিম হইতে লামারা আসিয়া খোদাই করিয়াছিলেন। তোরণের মধ্যে মহারাণী ভিক্টোরিয়ার ব্রোঞ্জমূৰ্ত্তি। বাজারের নিকটে পৰ্ব্বতগাত্রে একটি বৌদ্ধ মঠ আছে। উত্তরের দিকে দিওলো পাহাড়ের উপরের অংশে রেভারেণ্ড ডক্টর গ্রেহামের প্রসিদ্ধ সেন্ট এনড্রজ কলোনিয়ল হোমজ নামক ইউরোপীয় ও ফিরিঙ্গী বালক বালিকাদিগের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সমুদ্রপৃষ্ঠ হইতে ৪,৫০০ হইতে ৫,৫০০ ফুট উচ্চে ৪০০ একর জমি লইয়া এই প্রতিষ্ঠানের বিদ্যালয়, কৃষিক্ষেত্র, কারখানা প্রভৃতি অবস্থিত । দিওলো পাহাড়ের নীচের দিকে পিডংএর পথে বাজার হইতে প্রায় ২ মাইল দূরে ভূটানের প্রধান মন্ত্রী রাজা উগ্যেন দোরজি নিৰ্ম্মিত একটি অট্টালিকা আছে। চীন সরকারের শাসন হইতে পলাইয়া আসিয়া দলাই লামা একবার ইহাতে ৪০ মাস বাস করিয়াছিলেন। র্তাহার ব্যবহৃত একটি ঘর সন্ত্রমের সহিত পৃথক করিয়া রাখা হইয়াছে। ইহা এখানকার একটি দেখিবার জিনিষ। ৪০১ বৰ্গ মাইল ব্যাপিয়া তিস্তার পূর্বকূলে অবস্থিত কালিম্পং গভর্ণমেণ্ট স্টেট্র ও তিস্ত জঙ্গল বিভাগের সদর এই কালিম্পং শহর। ইহা একটি বিশিষ্ট বাণিজ্যকেন্দ্র । সিকিম ও তিব্বতের বাণিজ্য কালিম্পং দিয়া প্রসার লাভ করিয়াছে। তিববত হইতে বহু পরিমাণে পশম অশ্বপৃষ্ঠে আনীত হয়। সিকিমী, তিববতী, নেপালী, ভূটানী ও চৈনিক প্রভৃতি নানা জাতীর লোক ব্যবসায়সূত্রে এখানে মিলিত হইয়াছেন। শনি ও বুধবার একবার হাটে ঘুরিয়া আসিলে এইরূপ বহু জাতির লোক দেখিতে পাওয়া যায়।