পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ २० ॐ কিছুকাল পরে ঠাকুর হরিদাস বেনাপোল ত্যাগ করেন। নবাবের কোপে পড়িয়া অত্যাচারী রামচন্দ্র খানের সর্বনাশ সাধিত হয়। হরিদাসের পাট বাড়ীর অনতিদূরে রামচন্দ্র খানের গড়বেষ্টিত রাজভবনের ধ্বংসাবশেষ অরণ্য সমাবৃত অবস্থায় আজিও বর্তমান আছে । স্থানীয় লোকের নিকট ইহা “রাজবাড়ী” নামে পরিচিত। চৈতন্য চরিতামৃতে বর্ণিত আছে যে রামচন্দ্র খান কেবল মাত্র হরিদাস ঠাকুরকে নহে, নিতানন্দ প্রভু তাহার বাটতে অতিথিরূপে উপস্থিত হইলে, র্তাহাকেও বিশেষ অসম্মান করিয়াছিলেন। রামচন্দ্র খানের বাটীর পাশ্ববর্তী দুই একটি প্রাচীন পুষ্করিণী এখনও অতীতের স্মৃতি বহন করিতেছে। ঝিকরগাছা ঘাট—কলিকাতা হইতে ৬৭ মাইল দূর । ইহা কপোতাক্ষী নদীর তীরে অবস্থিত একটি বিখ্যাত বাণিজ্য কেন্দ্র । ১৮০০ খৃষ্টাব্দে এইখানে একটি নীলকুঠি প্রতিষ্ঠিত হয়। মেকেঞ্জি নামক জনৈক কুঠিয়াল এখানে একটি হাট বসান, উহা মেকেঞ্জিগঞ্জের হাট নামে পরিচিত। ঝিকরগাছার হাটে প্রচুর পরিমাণে তরতরকারী, ডাল-কলাই ও গুড়ের আমদানি হয় । ঝিকরগাছার অপর পারে গবাদি পশুর ক্রয় বিক্রয়ের জন্ত আর একটি হাট আছে। প্রতি বৎসর মহাসমারোহে ঝিকরগাছার বাজারে দোলযাত্রা উৎসব হয় এবং তদুপলক্ষে এক পক্ষ স্থায়ী একটি মেলা বসে। বোধখানা—ঝিকরগাছা হইতে ৪ মাইল পশ্চিমে বোধখানা গ্রাম বৈষ্ণবদের একটি প্রসিদ্ধ তীর্থ। এখানে দ্বাদশ গোপালের অন্যতম কানাই ঠাকুরের শ্ৰীপাট এবং তৎপ্রতিষ্ঠিত প্রাণবল্লভজীউর মন্দির ও বিগ্রহ বিদ্যমান। এখানে প্রতিবৎসর পঞ্চম দোল উপলক্ষে মেলায় মহাসমারোহ ও বহু যাত্রীর সমাগম হয়। প্রবাদ, পঞ্চম দোলের দিন উষাকালে এখানকার একটি কদম্ব বৃক্ষে অকালে কদম্বফুল ফুটিয়া থাকে এবং উহ কৰ্ণে পরিধান করিয়া প্রাণবল্লভজীউ দোলমঞ্চে আরোহণ করেন । অমৃতবাজার—ঝিকরগাছা হইতে চার মাইল উত্তরে অবস্থিত অমৃতবাজার গ্রামে সুবিখ্যাত অমৃতবাজার পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা ৮শিশির কুমার ঘোষ মহাশয় জন্মগ্রহণ করেন। শিশিরকুমার ও তদীয় সুযোগ্য ভ্রাতা মতিলাল প্রভৃতি মিলিয়া এই গ্রামের বহু উন্নতি সাধন করেন। এই গ্রামের প্রকৃত নাম পলুয়া মাগুরা । ঘোষ ভ্রাতৃগণ গ্রামে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করিয়া তাহদের জননী অমৃতময়ীর নামানুসারে উহার নাম রাখেন অমৃতবাজার। ১৮৬৮ খৃষ্টাব্দে এই গ্রামে শিশির কুমারের সম্পাদনায় অমৃতবাজার পত্রিকা সৰ্ব্বপ্রথম বাংলা ভাষায় আত্মপ্রকাশ করে। পরে দেশীয় ভাষায় সংবাদপত্র প্রকাশ নিষিদ্ধ হইলে শিশির কুমার ইংরেজী ভাষায় অমৃতবাজার পত্রিকা প্রকাশ করিতে আরম্ভ করেন। মফঃস্বল হইতে সংবাদপত্র প্রকাশে নানারূপ অসুবিধা হওয়ায় অবশেষে অমৃতবাজার পত্রিকার কার্য্যালয় কলিকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়। র্তাহার সমসাময়িক কালে শিশির কুমার একজন বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন। সংবাদপত্র সেবা, রাজনীতি চর্চা, সাহিত্য সেবা, ধৰ্ম্মচর্চা, বাগিতা—সকল ক্ষেত্রেই তিনি প্রতিষ্ঠা লাভ করিয়াছিলেন। তৎপ্রণীত “অমিয় নিমাই চরিত” গ্রন্থ বাংলা সাহিত্যের একটি অমূল্য সম্পদ। শিশির কুমার ইংরেজী ভাষায় “লৰ্ড গৌরাঙ্গ” নামক গ্রন্থ রচনা করিয়াও বিশেষ খ্যাতি লাভ করিয়াছিলেন । -