পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

९९९ বাংলায় ভ্রমণ খলিফা-কন্যার হিন্দু নাম “চম্পা” থাকা সম্ভবপর নহে। তাহারা বলেন যে চম্পাবতা বা চম্পা জনৈক হিন্দুরাজার কন্যা ছিলেন । র্তাহার পিতাকে যুদ্ধে পরাজিত করিয়া জনৈক মুসলমান ফকির তাহাকে বিবাহ করেন। অল্পকাল পরে ফকিরের মৃত্যুর পর চম্পা সকল সময় ঈশ্বর আরাধনায় কালাতিপাত করিতেন বলিয়া তিনি “মাঈ চম্পা” আখ্যা লাভ করেন। অনুমিত হয়, মাঈ চম্প ও লাউঞ্জানি বা ব্রাহ্মণ নগরের মুকুটরায়ের কন্য। চম্পাবতী একই ব্যক্তি । সাতক্ষীরা হইতে ৭ মাইল উত্তর-পূর্বে কপোতাক্ষী তীরে কুমির গ্রাম এক কালে বিদ্যাচর্চার জন্য বিশেষ প্রসিদ্ধ ছিল এবং নবদ্বীপের পরেই ইহার স্থান ছিল বলিয়া কথিত । 经 সাতক্ষীরা হইতে ১২ মাইল উত্তরে কলারোয়া থানার নিকটস্থ নওপাড়া-মণিঘর গ্রাম ; ইহা গড়দানি নামেও অভিহিত। একটি মাটির গড়ের ভগ্নাবশেষ ও কতকগুলি পুরাতন পুষ্করিণী এখানে দৃষ্ট হয়; এগুলি তিয়র রাজার কীৰ্ত্তি বলিয়া কথিত। কিংবদন্তী, কোনও এক সময়ে জনৈক তিয়র জাতীয় ব্যক্তি যখন বিলে নৌকা করিয়া মাছ ধরিতে ছিলেন, তখন একজন সন্ন্যাসী তাহাকে বিশ্নটি পার করিয়া দিতে বলেন । তিয়র সম্মত হইয়া সন্ন্যাসীকে লইয়া যখন বিলটি পার হইতেছিলেন, তখন দেখিলেন সন্ন্যাসীর ঝোলার স্পৰ্শণ পাইয় তাহার নৌকার একটি লৌহ পাট সোণায় পরিণত হইল। তিয়র বুঝিলেন ঝোলার মধ্যে পরশ পাথর আছে এবং লোভে পড়িয়া পাথরটি কড়িয়া লইয়া সন্ন্যাসীকে গভীর জলে ফেলিয়া দিলেন ; জলে ডুবিবার সময়ে সন্ন্যাসী অভিসম্পাত করিলেন যে তিয়র সপরিবারে বিনষ্ট হইবেন । পরশ পাথরের গুণে তিয়রের বহু ধনদৌলত হইল এবং তিনি রাজা বলিয়। পরিচিত হইলেন। তিনি একটি তুর্গ নিৰ্ম্মাণ করাইয়াছিলেন এবং ১২৬টি পুষ্করিণী খনন করাইয়া ছিলেন। অল্পকাল মধ্যেই বাংলার নবাব তাহার ধনসম্পত্তি প্রাপ্তির কথা শুনিয়া তাহাকে ডাকিয়া পাঠাইলেন । তিয়র ভাবিলেন হয়তো এরূপভাবে ধনপ্রাপ্তির জন্য নবাবের হাতে প্রাণ হারাইতে হইতে পারে এবং পাছে মহিলাদের সন্ত্রম হানি হয় এই জন্য সঙ্গে করিয়া একজোড়া বাৰ্ত্তাবাহী কপোত লইয়া গেলেন, বলিয়া গেলেন যে তাহার অবস্থা শোচনীয় জানিলে এবং মৃত্যু নিশ্চিত বুঝিলে পায়রা দুইটি ছাড়িয়া দিবেন। তিয়র রাজাকে নবাব সসম্মানে ছাড়িয়া দিলেন। অশ্বপৃষ্ঠে তিনি যখন গৃহে প্রত্যাগমন করিতেছিলেন, পায়রা দুটি হঠাৎ ছাড়া পাইয়া যায়। ঘরে পায়রা ফিরিতে দেখিয়া তিয়র রাজার স্ত্রী ও সন্তানগণ একটি নৌকায় করিয়া বড় পুকুরের মধ্যস্থলে পৌঁছিয়া নৌকার তলদেশে ছিদ্র করিয়া ডুবিয়া প্রাণত্যাগ করেন। তিয়র রাজা প্রাণপণ শক্তিতে ঘোড়া ছুটাইয়া ঘরে ফিরিয়া দেখিলেন সব শেষ হইয়া গিয়াছে, তখন তিনিও বড় পুকুরে ডুবিয়া প্রাণত্যাগ করিলেন ; এইরূপে সন্ন্যাসীর অভিশাপ পূর্ণ হইল। এই বড় পুকুরটিকে লোকে এখনও দেখাইয়া থাকে। গ্রামের যে স্থানে গড়ের ভগ্নাবশেষ পড়িয়া রহিয়াছে উহাকে দানা-মণিঘর বা ‘ধনপোতার দান বলা হয় ; লোকের বিশ্বাস উহার নীচে তিয়র রাজার ধনদৌলত প্রোথিত আছে। ঈশ্বরীপুর—সাতক্ষীরা হইতে নীেক পুথি প্রায় ৪০ মাইল দক্ষিণে যমুনা ও ইছামতী নদীর সঙ্গমস্থলের নিকটে অবস্থিত ঈশ্বরীপুর বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক