পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূৰ্ব্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ ९९S বরেন। বর্তমানে কাছারি বাড়িট নদীতে ভাঙ্গিয়া গিয়াছে ; হেঙ্কেল সাহেবের খনিত পুষ্করিণী আজিও বর্তমান আছে। কপোতাক্ষীর অপরতীরবর্তী বড়দলের হাট খুব বড় তুইয়া যাওয়ায় চাদখালির গঞ্জ এখন অনেকটা ছোট হইয়া গিয়াছে। এখানে একটি সরকারী ডাক্তারখানা আছে। পূৰ্ব্বে যাহারা সুন্দরবনে চাষ আবাদ বা “মহাল” (কাষ্ঠ মধু ও মোম প্রভৃতি সংগ্রহ ) করিতে যাইত চাদখালি তাহাদের একমাত্র আশ্রয় ছিল। প্রকৃতপক্ষে চাদখালিকে সুন্দরবনের প্রবেশ দ্বার বলা যাইতে পারে। র্চদখালির ৬ মাইল দক্ষিণে কপোতাক্ষী নদীর তীরে অবস্থিত মসজিদ কুড়গ্রাম একটি পুরাতন স্থান। বহু বৎসর পূৰ্ব্বে এখানে আবাদের জন্য জঙ্গল পরিস্কার করিবার সময় একটি প্রাচীন মসজিদ আবিষ্কৃত হয় এবং সেইজন্য গ্রামের নাম হয় মসজিদকুড়। এই মসজিদটির গঠন প্রণালী বাগেরহাটের বিখ্যাত ষাটগুম্বজ মসজিদের অনুরূপ। প্রত্যেক শ্রেণীতে তিনটি করিয়া এই মন্দিরে মোট নয়টি গুম্বজ আছে । ইহার প্রাচীর প্রায় ছয় ফুট চওড়া। চারিটি প্রস্তর স্তম্ভের উপর ইহার ছাদ অবস্থিত এবং চারি কোণে চারিটি মিনার বিরাজত। ইহার পশ্চিম দিকের প্রাচীর গাত্রে তিনটি মিহরাব আছে। মসজিদকুড়ের দক্ষিণ দিকেই আমাদি গ্রাম । ইহার পর সুন্দরবন আরম্ভ হইয়াছে। এখানকার পরীমালা দেবীর প্রসিদ্ধি আছে। ইনি চতুভূজ চামুণ্ডা মূৰ্ত্তি। কথিত আছে টাকীর জমিদার ৬গোবিন্দদেব রায়-চৌধুরী মহাশয় স্বপ্ন পাইয়া নিকটস্থ কয়ড়া নদীর কুলে নারায়ণপুর গ্রামে খনন করিয়া মুক্তিটি প্রাপ্ত হন এবং আমাদিতে করেন । সাতক্ষীরা—খুলনা হইতে পশ্চিম দিকে স্টীমার পথে ৭৭ মাইল দূর। ইলাচর নামক স্থানে নামিয়া সাতক্ষীরায় যাইতে হয়। কলিকাতা হইতে ইটিগু ঘাট ও পাটকেলঘাটা হইয়া মোটর বাস যোগেও সাতক্ষীরায় যাওয়া যায়। ইহা খুলনা জেলার একটি মহকুমা। শহরটি বেত্রবতী বা বেতনা নদীর একটি অপ্রশস্ত খালের তীরে অবস্থিত। এখানে একটি পুরাতন জমিদার বংশের বাস । এই বংশীয় ৬প্রাণনাথ চৌধুরী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত শিব, গোবিন্দদেব, মহাকাল ভৈরব, আনন্দময়ী ও অন্নপূর্ণার মন্দির এই শহরের দ্রষ্টব্য বস্তু। অন্নপূর্ণার মন্দিরটি কারুকার্য্যের জন্য প্রসিদ্ধ। সাতক্ষা শহর হইতে দুই মাইল দূরে বেতনা নদীর তীরে অবস্থিত লাবসা বা লাপস নামক গ্রামে “মাঈচম্পার দরগা” নামে একটি পবিত্র স্থান আছে । এই দরগার মসজিদটি এক গম্বুজ বিশিষ্ট। ইহার অভ্যন্তরে মাঈচম্পাবিবির কবর বিদ্যমান। হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের লোকই এই সমাধির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করিয়া থাকেন। মাঈচম্পার সম্বন্ধে নানা কাহিনী প্রচলিত আছে। অধিকাংশের মতে মাঈচম্পা বোগদাদের খলিফার কুমারী কন্যা। ইসলাম ধৰ্ম্ম প্রচারের জন্য তিনি এদেশে আগমন করেন । ভারতের নানা স্থানে ধৰ্ম্ম প্রচারের পর তিনি সুন্দরবন অঞ্চলে আগমন করেন এবং লাবসা গ্রামের নিকটবৰ্ত্তী নদী দিয়া যাইবার সময় তাহার নৌকা নিমজ্জিত গঁওয়ায় তিনি জীবনের অবশিষ্ট কাল এই স্থানেই অতিবাহিত করেন । র্তাহার অপুৰ্ব্ব ধৰ্ম্মনিষ্ঠার জন্য লোকে তাহাকে চম্পামাঈ বা মাঈচম্প নামে অভিহিত করিত। কেহ কেহ বলেন যে “মাঈ” ও “চম্পা” এই দুইটি হিন্দুদের ব্যবহৃত শব্দ। বোগদাদের