পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ ২৬৫ বহরমপুর জেলখানার উত্তরে খাগড়া বাজার ; ইহা রেশমী কাপড় ও র্কাসার বাসনের জন্য সমগ্র বাংলা দেশে প্রসিদ্ধ। খাগড়া বহরমপুরেরই অংশ বিশেষ । মুর্শিদাবাদের হস্তিদন্তের শিল্পের কথা সুপ্রসিদ্ধ ; এক কালে এই শিল্পীরা ভারতবর্ষে সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ বলিয়া গণ্য হইতেন ; কিন্তু এখন লোকের পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এই শিল্পধারাটি উঠিয়া যাইবার উপক্রম হইয়াছে। খাগড়ায় চিরকালই সর্বশ্রেষ্ঠ শিল্পীদিগের বাস ছিল ; এখন মাত্র তু এক ঘর দেখিতে পাওয়া যায়। মাথর, দৌলতবাজার প্রভৃতি গ্রামে এখন আর কোনও শিল্পী দেখিতে পাওয়া যায় না। মুর্শিদাবাদের এই শিল্পের বিশেষত্ব হইতেছে অতি সূক্ষ্ম ও নিখুত কাজ। ইহার জন্য প্রায় ৭০।৮০ রকমের বিভিন্ন যন্ত্রের প্রয়োজন হয়। নানা রকম দেবদেবীর মূৰ্ত্তি, জন্তু জানোয়ার, গরুর গাড়ী, নৌকা প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ের কাজ দেখিতে পাওয়া যায়। মূৰ্ত্তিগুলি হাতীর দাত সম্পূর্ণ কুঁদিয়া বাহির করা হয়; শিল্পীরা জোড় দেওয়া মোটেই পছন্দ করেন না। মুর্শিদাবাদের নবাবী আমল হইতে এই শিল্পের উৎপত্তি; কথিত আছে প্রথমে দিল্লী হইতে একজন শিল্পীকে লইয়া আসা হয় ; তিনি যখন দরজা বন্ধ বরিয়া কাজ করিতেন, তখন একজন হিন্দু ভাস্কর লুকাইয়া দেওয়ালের ছিদ্র দিয়া দেখিয়া ইহা শিখিয়া লন এবং তার পুত্র তুলসীকে ইহা শিখাইয়া দেন; কথিত আছে তুলসী অতি সুদক্ষ শিল্পী হইয়া উঠেন। একবার তীর্থ করিয়া ১৭ বৎসর পরে মুর্শিদাবাদে ফিরিয়া আসিলে নবাবের আদেশে স্মৃতি হইতে পূৰ্ব্বেকার নবাবের একটি অতি সুন্দর মূৰ্ত্তি প্রস্তুত করেন; পূৰ্ব্বতন নবাবের সহিত মূৰ্ত্তিটির আশ্চর্যা রকম সোসাদৃশ্ব দেখিয়া নবাব প্রীত হইয় র্তাহাকে গত ১৭ বৎসরের পুরা মাহিনী এবং একটি বাট প্রদান করেন। এখনও তুলসীর নাম উঠিলে শিল্পীরা তাহার উদ্দেশে প্রণাম করিয়া থাকেন। খাগড়ার অপর পারে ভাগীরথীর পশ্চিমকুলে পূর্ব ভারত রেলপথের ব্যাণ্ডেলবারহাড়োয় লুপ শাখার খাগড়াঘাট রোড় স্টেশন অবস্থিত। এই স্টেশনের ভাগীরথীর পশ্চিমকুলে বহরমপুর-খাগড়ার অপর পারে ভূঙ্গেশ্বর মন্দিরের নিকট ভীমের গদ নামে প্রস্তর স্তম্ভ দেখিতে পাওয়া যায় ; এগুলি বৌদ্ধযুগের বলিয়া অনুমিত হয়। খাগড়ার ঠিক উত্তরেই ভাগীরথী কুলে সৈয়দাবাদ ; পূৰ্ব্বে ইহা কাশীমবাজারের শহরতলী বলিয়া গণ্য হইত। এখানে ফরাসীদিগের কুঠি ছিল ; ১৬৭৩ খৃষ্টাব্দে চন্দননগর হইতে একদল ফরাসী এখানে আসিয়া বাণিজ্যে লিপ্ত হন । সুপ্রসিদ্ধ তুপ্লে (Dupleix) কিছুকাল এই স্থানে অবস্থান করিয়াছিলেন বলিয়া কথিত । ১৭৫১ খৃষ্টাব্দে নবাব আলিবর্দী খাঁর সহিত ফরাসী কুঠির মনোমালিন্ত হইলে নবাব সৈন্য কুঠি পরিবেষ্টিত করে এবং ফরাসীগণকে ৫০ হাজার সিক্কা টাকা দিয়া নবাবকে তুষ্ট করিতে হয়। ক্রমে ইংরেজ বণিকদিগের সহিত বাণিজ্যে প্রতিযোগিতায় ফরাসীরা হটিয়া যান। ১৭৭৮ খৃষ্টাব্দে ইংলণ্ড ও ফ্রান্সে যুদ্ধ বাধিলে বহরমপুরের ইংরেজ সেনা নায়ক ফরাসী কুঠি অধিকার করিয়া লন। ১৮২৯ খৃষ্টাব্দে বহরমপুর হইতে মুর্শিদাবাদ লালবাগ পর্যন্ত নদী তীর দিয়া রাস্ত নিৰ্ম্মাণ করিবার সময়ে ফরাসী কুঠিকে ভাঙ্গিয়া ফেলা হয় ; ইহার চিহ্নমাত্র যদিও এখন আর নাই স্থানটি এখনও ফরাসডাঙ্গ নামে পরিচিত। বহরমপুরের জলের কল ফরাসডাঙ্গায় অবস্থিত।