পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৬৬ বাংলায় ভ্রমণ সৈয়দাবাদে ফরাসীদিগের আবাস স্থান বা ফরাসডাঙ্গার পূর্বদিকে আর্মেনীয় বণিকগণের বাস ছিল। র্তাহার ফরাসীদিগের পূৰ্ব্বে ১৬৬৫ খৃষ্টাব্দে এ অঞ্চলে আগমন করেন। তাহারা সম্রাট আওরঙ্গজেবের নিকট হইতে একখণ্ড ভূমির সনন্দ পাইয়া র্তাহাদের গির্জা প্রতিষ্ঠা করেন। সৈয়দাবাদের যে অংশে আর্মেনীয়গণ বাস করিতেন তাহা শ্বেতাৰ্থার বাজার নামে পরিচিত ছিল ; আর্মেনীয়গণ এসিয়াবাসিগণের মধ্যে অপেক্ষাকৃত গৌর বা শ্বেতবর্ণ হওয়ায় তাহার শ্বেতা খা নামে অভিহিত হইতেন । শ্বেতাখার বাজার এখন আমানিগঞ্জ (আর্মানীগঞ্জ) নামে পরিচিত। পলাশীর যুদ্ধের পর ১৭৫৮ খৃষ্টাব্দে প্রাচীন আর্মেনীয় গির্জাটির পূর্বদিকে বর্তমান সুবৃহৎ আর্মেনীয় গির্জাটি নিৰ্ম্মিত হয়। এ সময়ে বহু আর্মেনীয় বণিক সৈয়দাবাদে বাস করিতেন। পূৰ্ব্বে আর্মেনীয়া হইতে প্রতি পাঁচ বৎসর অন্তর নূতন পুরোহিত আনয়ন করা হইত। এখনও এখানে একটি আর্মেনীয় পূ রোহিত পরিবার গির্জাটির তত্ত্বাবধান করেন। গির্জার প্রাঙ্গনে অনেক সমাধিতে আর্মেনীয় ভাষায় লিখিত ফলক দৃষ্ট হয়। এই গির্জাটি সৈয়দাবাদের একটি দেখিবার জিনিষ । অামানিগঞ্জের অপর পারে ভাগীরথীর পশ্চিম কুলে খোশবাগ অবস্থিত ; মুর্শিদাবাদ দ্রষ্টব্য। বৈষ্ণব সমাজে সম্মানিত কবিরাজ হরিরামাচাৰ্য্য ও তাহার ভ্রাতা রামকৃষ্ণ আচার্যের বংশধরগণের গৃহে বহুদিন হইতে কৃষ্ণরায় ও মোহন রায়ের বিগ্রহ পূজিত হইতেছে। সৈয়দাবাদের অপর পারে ভাগীরথীর পশ্চিম কূলে বুধুই পাড়া গ্রামে শ্ৰীনিবাস আচার্যের জ্যেষ্ঠ কন্যা হেমলত ঠাকুরঝির সহিত শ্ৰীনিবাসের ভক্ত শিষ্য রামকৃষ্ণ চট্টরাজের পুত্র গোপীজনবল্লভের বিবাহ হয়। শ্ৰীনিবাস আচার্য্যের দুই পৌত্র রাধামাধব ঠাকুর ও সুবলচন্দ্র ঠাকুর এই গ্রামে আসিয়া বাস করেন। সুবলচন্দ্র তাহার পিসীমা হেমলতা ঠাকুরবির মন্ত্র শিষ্য। এই সুবলচন্দ্রের শিষ্য মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দী মহকুমার মালিহাটী বা মেলেটি গ্রাম নিবাসী প্রসিদ্ধ পদ কৰ্ত্তা যদুনন্দন দাস হেমলতা কর্তৃক আদিষ্ট হইয়া খ্ৰীনিবাস আচার্য্যের বংশাবলী ও শিষ্য সম্প্রদায় বিষয়ক একখানি পদ্য গ্রন্থ ১৬০৭ খৃষ্টাব্দের বৈশাখ মাসে বুধুইপাড়ায় সমাপ্ত করেন। হেমলতা এই গ্রন্থের নাম দেন “কর্ণানন্দ" ; বৈষ্ণব সমাজের তদানীন্তন ইতিহাস ইহাতে পাওয়া যায়। যদুনন্দন তারও অনেক গ্রন্থ রচনা করিয়াছিলেন । সৈয়দাবাদের পূর্বাংশ কুঞ্জঘাটায় নবাব মীরজাফরের দেওয়ান সুপ্রসিদ্ধ মহারাজ নন্দকুমার রায়ের একটি প্রকাণ্ড ও পুরাতন বাড়ী বর্তমান আছে। তাহার এক দৌহিত্রের বংশধরেরা এখানে বাস করিতেছেন; ইহার কুঞ্জঘাটার রাজবংশ নামে পরিচিত। কুঞ্জঘাটার রাজবাড়ীতে মহারাজা নন্দকুমারের আমলের বহু পুরাতন দলিলপত্র ও স্মৃতিচিহ্ন রক্ষিত আছে। ইহাদের মধ্যে পুরীধামে ভক্তগণ বেষ্টিত শ্রীচৈতন্যদেবের একখানি অতি সুন্দর প্রাচীন তৈল চিত্র বিশেষ উল্লেখযোগ্য ; ইহা নিয়মিত ভক্তি সহকারে পূজিত হইয়া থাকে। কথিত আছে চৈতন্যদেবের সমসাময়িক কালে ওড়িষ্যারাজ প্রতাপরুদ্র দেবের আদেশে ইহা অঙ্কিত হয়। তৎকালের বৈষ্ণব ভক্তগণের মতে চৈতন্যদেবের সহিত এই চিত্রের বিশেষ মিল আছে। পুরাতন হইলেও ছবিটি দেখিলে নূতন আঁকা বলিয়া ভ্রম হয়। মহারাজ নন্দকুমার চিত্রখানি তাহার গুরু প্রসিদ্ধ বৈষ্ণবাচার্য রাধামোহন ঠাকুরের