পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२१२ বাংলায় ভ্রমণ হইয়া ঢাকায় আগমন করেন। তৎকালে নবাব নাজিম ও দেওয়ান দুইটি পৃথক ও স্বাধীন পদ ছিল । অল্পদিনের মধ্যে আজিম উস্-শানের সহিত মুর্শিদকুলী খাঁর বিশেষ মনোমালিন্ত উপস্থিত হয় । অবশেষে দেওয়ান মুর্শিদকুলী খাঁ রাজস্ব বিভাগের সমস্ত কৰ্ম্মচারী সহ ১৭০৪ খৃষ্টাব্দে বাংলার প্রায় কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত মুখমুদাবাদে আসিয়া তাহার দপ্তর ও কৰ্ম্মস্থল স্থানান্তরিত করেন । তাহার সঙ্গে দপনারায়ণ কাননগো ও জগৎ শেঠদের পূর্বপুরুষ মাণিকচাদও আসিয়া ছিলেন। আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর গৃহবিচ্ছেদে যখন মুঘল সাম্রাজ্য বিচ্ছিন্ন হইবার উপক্রম হয় সেই সময়ে মুর্শিদকুলী খাঁ নিজের প্রভুত্ব বিস্তার করিতে সক্ষম হইয়াছিলেন এবং ১৭১৩ খৃষ্টাব্দে সম্রাট ফরুকশিয়ারের সময়ে বাংলার নবাবী পদও লাভ করিয়াছিলেন । তদবধি মুখমুদাবাদের নাম পরিবত্তিত হইয়া মুর্শিদাবাদ হয় এবং ইহাই বাংলার রাজধানী হয়। কয়েক বৎসরের মধ্যেই মুর্শিদকুলী খাঁ সমগ্র বাংলা, বিহার ও ওড়িষ্যার সুবাদার নিযুক্ত হন। মুর্শিদকুলী খ ব্রাহ্মণবংশে জন্মিয়াছিলেন । শৈশবে দারিদ্র্য নিবন্ধন তাহার পিতা র্তাহাকে জনৈক ইরাণদেশীয় বণিকের নিকট বিক্রয় করেন। বণিক তাহাকে ইস্পাহানে লইয়া গিয়া পুত্রের স্যায় লালন পালন ও শিক্ষা দান করেন। মুসলমানধৰ্ম্মে দীক্ষিত হওয়ার পর তাহার নাম হয় মহম্মদ হাদী। বয়োপ্রাপ্ত হইয়া তিনি দাক্ষিণাত্যে আগমন করেন ও বেরারের দেওয়ানের অধীনে একটি সামান্ত কাৰ্য্য গ্রহণ করেন। অল্পদিনের মধ্যেই তাহার কার্য্য কুশলতার জন্য দ্রুত পদোন্নতি হয় এবং সম্রাট আওরঙ্গজেব তাহাকে হায়দারাবাদের দেওয়ানি পদে নিযুক্ত করেন। অতঃপর তিনি বাংলার দেওয়ানি পদলাভ এবং “কারতলব খা” উপাধি লাভ করিয়া ঢাকায় আগমন করেন । ঢাকা হইতে মুর্শিদাবাদে গমূনের কথা আগেই উল্লিখিত হইয়াছে এবং সেই স্থানেই কৰ্ম্ম নৈপুণ্যের জন্য বাদশাহের নিকট হইতে “ মুর্শিদকুলী মতিমন উল মুল্ক আলাউদ্দৌলা জাফরখা নাসিরী নাসির জঙ্গ” এই উপাধি লাভ করেন এবং তদবধি মুর্শিদকুলীৰ্থ নামেই পরিচিত হন। - ১৫৮২ খৃষ্টাব্দে সম্রাট আকবরের সময় তোড়রমল্ল “ আসলজম তুমার ” নামক বাংলার রাজ্যের জমাবন্দোবস্তের কাগজ প্রস্তুত করেন। তাহার পর শাহ সুজা পুনরায় বাংলার রাজস্বের ব্যবস্থা করেন এবং মুর্শিদকুলী খা জমা বন্দোবস্তের আমূল সংস্কার করিয়া একটি স্থায়ী বন্দোবস্ত করেন ; তিনি যে কাগজ প্রস্তুত করেন তাহার নাম “ জমা কামেল তুমারী”। মুর্শিদকুলীৰ্থার চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে প্রজাদের খাজনা কিছু চড়িয়া যাইলেও জমিদারগণ অতিরিক্ত খাজনা আদায় করিতে পারিতেন না । এই বন্দোবস্ত নবাব মীর কাসিমের সময় পৰ্য্যস্ত প্রায় একভাবেই প্রচলিত ছিল । রাজস্ব বাড়াইবার জন্ত তিনি অনেক জমিদারের প্রতি কঠোর ও নিৰ্ম্মম ব্যবহার করিয়াছিলেন বলিয়। কথিত । রাজস্ব বিভাগের মুবন্দোবস্ত ব্যতীত নবাব নাজিম হইয়া দেশ শাসনেরও নানারূপ উন্নতি সাধন করেন। চোর ডাকাত দমন করিবার জন্য মহম্মদ জান নামক র্তাহার এক বিশ্বাসী ব্যক্তিকে নিযুক্ত করেন ; ইহার সাথে সাথে তীরন্দাজ ও কুঠারধারী লোক যাইত বলিয়া ইনি সাধারণ্যে কড়ালী’ নামে পরিচিত ছিলেন। কথিত আছে, মুর্শিদকুলী খাঁ কাটোয় হইতে বৰ্দ্ধমান হইয়া জগন্নাথ পৰ্য্যস্ত পথে শাস্তিরক্ষার বন্দোবস্ত করিয়াছিলেন। চোর ডাকাতের উপদ্রব তিনি বহুলাংশে দূর করিতে সক্ষম হইয়াছিলেন। তিনি বিচার