পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२१७ বাংলায় ভ্রমণ মুজ খাঁর মৃত্যুর পর তাহার পুত্র সরফরাজ খাঁ মাত্র এক বৎসরের জন্য নবাব হইয়াছিলেন ; কথিত আছে, যে তিনি শত্রু কর্তৃক প্রাণ নাশের এত ভয় করিতেন যে পিতার সমাধির সময়ও তুর্গ ছাড়িয়া যান নাই। শাসনকার্য তিনি বিশেষ কিছুই দেখিতেন না এবং পিতার আমলের মন্ত্রণা-সভার উপরই ছাড়িয়া দিয়াছিলেন । কিন্তু তাহাদের সহিত মনোমালিন্ত হওয়ায়, মন্ত্রণা-সভার রায়রায়ান আলমৰ্চাদ, হাজী আহম্মদ ও জগৎ শেঠ ফতেচাদ আলিবন্দী খাঁর সহিত ষড়যন্ত্র করিয়া সরফরাজকে সিংহাসনচ্যুত করিতে চেষ্টিত হন। অবশেষে আলিবর্দী খাঁর সহিত মুর্শিদাবাদের ২২ মাইল উত্তরে গিরিয়ার যুদ্ধে ১৭৪০ খৃষ্টাব্দে সরফরাজ খাঁ নিহত হন। পূর্ব ভারত রেলপথের ব্যাগুেল-বারহাড়োয় শাখার “জঙ্গীপুর’ স্টেশন দ্রষ্টব্য । সরফরাজের মাহুত তাহার মৃতদেহ লইয়া কোনওরূপে মুর্শিদাবাদে চলিয়া আসে এবং রাত্রিকালে গোপনে তাহাকে নেক্টাখালির প্রাসাদে সমাহিত করা হয়। মুর্শিদাবাদ স্টেশন হইতে লালবাগে যাইবার পথে এই সমাধি দৃষ্ট হয়, ইহা এক্ষণে সরকারী “ রক্ষিত কীৰ্ত্তি ” বিভাগের রক্ষণাধীন। মুর্শিদাবাদের নবাবগণের মধ্যে এক মাত্র সরফরাজ খাই রণক্ষেত্রে প্রাণ দান করেন। ইহার পরই আলিবর্দী খাঁ মসনদে আরোহণ করেন এবং দিল্লীর বাদশাহের নিকট বহু মূল্য উপঢৌকন পাঠাইয়া বাংলা দেশের ও ওড়িষ্যার নবাবী প্রাপ্ত হন । এই সময়ে দিল্লীর বাদশাহের ক্ষমতা বহু পরিমাণে হ্রাস পাইয়াছিল এবং আলিবর্দী ১৬ বৎসর স্বাধীনভাবেই মুশিদাবাদে রাজত্ব করিয়াছিলেন এবং দিল্লীতে কখনও রাজস্ব প্রেরণ করেন নাই । ১৭৪১ হইতে ১৭৫১ খৃষ্টাব্দ পর্য্যন্ত র্তাহার রাজত্বের অধিকাংশ সময়েই তালিবন্দী খাকে ওড়িষ্যা ও বিহারের বিদ্রোহ দমন করিতে এবং মহারাষ্ট্রীয় ও আফগানদিগের সহিত যুদ্ধে কাটাইতে হইয়াছে। বাংলা তাতার প্রতি অনুরক্ত ছিল এবং একবার মহারাষ্ট্রীয়দিগের সহিত যুদ্ধের জন্য বাংলার জমিদারবৃন্দ তাঙ্গকে দেড় কোটি টাকা দিয়াছিলেন। আলিবর্দী খী যখন যুদ্ধে ব্যাপৃত থাকিতেন তখন তাহার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতুপুত্র ও জামাত ঢাকার শাসনকৰ্ত্তা নওয়াজেস মহম্মদ খার উপর মুর্শিদাবাদ রক্ষার ভার ন্যস্ত থাকিত। আলিবন্দী খা বগী বা মহারাষ্ট্রীয়দিগের বারংবার আক্রমণ ও অত্যাচারে ব্যতিব্যস্ত হইয়াছিলেন। ১৭৪১-৪২ খৃষ্টাব্দের বর্ষাকালে যখন নবাব কাটোয়ার নিকট মহারাষ্ট্রীয়দিগকে বাধাদানে ব্যস্ত ছিলেন, সেই সময়ে একদল মহারাষ্ট্রীয় মীর হাবীবের নেতৃত্বে মুর্শিদাবাদ নগরী লুষ্ঠিত করিয়া জগৎশেঠদিগের নিকট হইতে দুই ক্রোড় টাকা লইয়া যায়। নবাব আলিবন্দী তাড়াতাড়ি রাজধানীতে প্রত্যাবর্তন করিলে মহারাষ্ট্ৰীয়েব পলায়ন করে। ১৭৫১ খৃষ্টাব্দে বৃদ্ধ বয়সে বারংবার যুদ্ধে ক্লান্ত হইয়া ওড়িষ্যা প্রদেশ মহারাষ্ট্রীয়দিগকে ছাড়িয়া দিয়া এবং বাংলার চোথ হিসাবে বার্ষিক ১২ লক্ষ টাকা দিতে স্বীকৃত হইয় তাহাদিগের সহিত সন্ধি স্থাপন করেন । ইহার পর পাচ বৎসর শাস্তিত রাজত্ব করিয়া ১৭৫৬ খৃষ্টাব্দে অশীতি বৎসর বয়ঃক্রমকালে পরলোক গমন করেন । আলিবর্দী খাঁ হিন্দু মুসলমান প্রজার প্রতি সমভাবে সহানুভূতিসম্পন্ন ছিলেন এবং না। বিপদের মাঝেও শাস্তিতে রাজ্য শাসন করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন । ঈস্ট ইণ্ডি । কোম্পানির সহিত র্তাহার বিশেষ বিরোধের সৃষ্টি হয় নাই। একবার ইংরেজদের একট