পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ - २१(१ জন্য আলমৰ্চাদকে স্বজা খা বাদশাহের নিকট হইতে “ রায়রায়ান” উপাধি আনাইয়। র্তাহাকে ভূষিত করেন। দেওয়ানী কাৰ্য্য ক্রমশঃ রায়রায়ানদিগের হস্তে আসিয়া পড়ে এবং আলমৰ্চাদই প্রথম নায়েব দেওয়ান হইতে প্রধান দেওয়ানের পদে উন্নীত হন। এইরূপে রাজস্ব মন্ত্রীর সমস্ত কাৰ্য্য রায়রায়ানগণ করিতে থাকেন। কাননগোগণের কার্য্য ছিল রাজস্ব বিষয়ক কাগজ পত্র রক্ষা করা। রায়রায়ান পদ বহু দিন প্রচলিত ছিল এবং ইংরেজী আমলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পর ইহার লোপ হয়। মুর্শিদকুলী খার সময়ে যে সকল জমিদার বন্দী হইয়াছিলেন তিনি তাহদের মুক্তি দিয়া, তাহদের করভার হ্রাস করিয়া উদারতা ও ন্যায়পরতার সহিত শাসন কাৰ্য্য আরম্ভ করেন। তিনি সৰ্ব্ব সম্প্রদায়ের প্রজাবৃন্দের প্রীতি ও সম্মান লাভ করিয়াছিলেন। তিনি অত্যন্ত বিলাসপ্রিয় ছিলেন এবং মুক্ত-হস্তে দান করিতেন। মুর্শিদকুলী খাঁর সময়ে নিৰ্ম্মিত প্রাসাদ ও অট্টালিকা প্রভৃতি র্তাহার মনোমত না হওয়ায় তাহাদের ভাঙ্গিয়া নূতন করিয়া সুন্দর সুন্দর ও সুসজ্জিত অট্টালিকা নিৰ্ম্মাণ করেন। তাহার নিৰ্ম্মিত ত্রিপলিয়া তোরণদ্বার মুর্শিদাবাদে এখনও একটি দ্রষ্টব্য, এত উচ্চ তোরণদ্বার বাংলাদেশে খুব কমই আছে। মুর্শিদাবাদের অপর পারে ডাহাপাড়া গ্রামে ভাগীরথীর পশ্চিম কূলে মুজ খ ফর্হাবাগ (বা সুখ কানন) নামে একটি অতি মনোরম ও মুসজ্জিত উষ্ঠান ও প্রমোদ বাটিকা নিৰ্ম্মাণ করাইয়াছিলেন। রিয়াজ-উস্ সলাতিনে বর্ণিত হইয়াছে যে ইহা কাশ্মীরের উদ্যানগুলি হইতেও রমণীয় ছিল এবং সুরলোকের উদ্যানও ইহার নিকট মান মনে হইত, স্বর্গের পরীরা ফর্হাবাগের শোভায় মুগ্ধ হইয়া তথায় আসিয়া পুষ্করিণীতে স্নান করিত ; আরও লিখিত হইয়াছে, পরীদের কথা শুনিয়া ভীত হইয়া সুজা খ ধূলিবৃষ্টি দ্বারা উষ্ঠানের সৌন্দৰ্য্য মান করিয়া তাহাদের আগমন বন্ধ করেন। শেষের দিকে নবাব সুজাউদ্দীন শাসন কাৰ্য্য একরূপ মন্ত্রণ পরিষদের উপর ছাড়িয়া দিয়াছিলেন এবং নিজে ফর্হাবাগে প্রমোদ বিলাসে সময় কাটাইতেন । ১৭৩৯ খৃষ্টাব্দে মার্চ মাসে তাহার মৃত্যু হইলে ফর্হাবাগের কিছু দক্ষিণে র্তাহাকে সমাহিত করা হয়। যে স্থানে তাহাকে সমাহিত করা হয় উহা এখন রোশনিবাগ নামে পরিচিত। রোশনিবাগ এখনও একটি ছায়াশীতল মনোরম উদ্যান। মুজ খাঁর সমাধিটি দৈর্ঘ্যে ১০ ফুট ; এত বড় সমাধি সচরাচর দৃষ্ট হয় না। মুজ খাঁর প্রিয় ফর্হাবাগ আজ প্রায় চিনতে পারা যায় না; ছ একটি ভগ্নাবশেষ ও নামটি এখন বর্তমান । এই ডাহাপাড়া গ্রামে মুর্শিদকুলীর সহিত আগত প্রধান কাননগো দপনারায়ণ প্রকাণ্ড বাসভবন নিৰ্ম্মাণ করেন । প্রধান কাননগোগণ তখন “ বঙ্গাধিকারী” নামে অভিহিত হইতেন এবং উত্তরাধিকারক্রমে এই পদ পাইতেন। কথিত আছে, ইহাদের পূর্বপুরুষ ভগবান রায় রাজা তোড়রমলের রাজস্ব বন্দোবস্তের সময় প্রধান কাননগো পদে উন্নীত হন এবং কাৰ্য্য কুশলতার জন্য সম্রাট আকবরের নিকট হইতে বঙ্গাধিকারী উপাধি প্রাপ্ত হন; তদবধি এই উপাধি চলিয়া আসে। তৎকালে জমিদারগণ বঙ্গাধিকারাদিগকে যথেষ্ট ভয় করিতেন এবং সম্মানে তাহারা নবাব ও জগৎশেঠদের পরেই ছিলেন। ডাহাপাড়া হইতে ৩ মাইল পশ্চিমে কিরীটকণা গ্রামে মুর্শিদাবাদ জেলার প্রাচীন তীর্থ স্থান ও উপপীঠ কিরীটেশ্বরী অবস্থিত। পূৰ্ব্বভারত রেলপথের ব্যাগুেল-বারহাড়োয় শাখার “লালবাগ কোর্ট রোড" স্টেশন