পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/৩২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূৰ্ব্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ ৩১৫ এই মসজিদটি ১৪৭৬ খৃষ্টাব্দে সুলতান শমস্-উদ্দীন ইউসুফ শাহ কর্তৃক নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল। প্রবাদ লোটন নাচওয়ালী ইহা নিৰ্ম্মাণ করাইয়াছিল। মসজিদ হইলেও ঐশ্বৰ্য্যে ইহা যে ধনীর বিলাস ভবন হইতে কোন অংশে নূ্যন ছিল না, তাহা ইহার বৰ্ত্তমান অবস্থা দেখিয়াও বুঝিতে পারা যায়। ঐতিহাসিক গ্রেটু বলিয়াছেন যে সারা డా মধ্যে তিনি এরূপ সুন্দর হালকা গাথুনির কারুকার্য্য খচিত সোধ দেখেন | লোটন মসজিদের উত্তর-পূর্বে কিছু দূরে এবং চামকাঠি মসজিদের এক মাইল পূৰ্ব্ব-দক্ষিণে একটি বৃহৎ জলাশয় আছে, উহার নাম ছোট সাগরদীঘি। উহ পিয়াসবাড়ী দীঘির প্রায় চতুগুণ বড় হইবে। ইহা হইতে পূৰ্ব্বে রাজপ্রাসাদের জল সরবরাহ হইত বলিয়া কথিত । ইহার তীরে কয়েক ঘর কৃষকের বসবাস আছে। কিংবদন্তী, ইহা হিন্দু রাজত্বকালে খনিত হইয়াছিল এবং ধনপতি ও চাদ সদাগর ইহার তটে বাস করিতেন । লোটন মসজিদ হইতে পাকা রাস্ত ধরিয়া দুই মাইল দক্ষিণে যাইয়া পাচ খিলানের একটি পুরাতন সাকো পার হইয়া রাজধানীর দক্ষিণ প্রাকার ভেদ করিয়া কোতোয়ালী দরওয়াজ অবস্থিত। ইহার এক্ষণে ভগ্নদশা । দ্বারের উভয় পাশ্বে সহর কোতোয়াল ও প্রহরীগণের বাস করিবার অৰ্দ্ধচন্দ্রাকার প্রকোষ্ঠগুলি দ্বারের সহিত ধ্বংসমুখে পতিত। এই দরওয়াজার খিলান ৫১ ফুট চওড়া এবং ভূমি হইতে ১৭ ফুট চার ইঞ্চি উচ্চ। কোতোয়ালী দরওয়াজ শম্স্-উদ্দীন ইলিয়াস শাহের বংশের মুলতান নাসিরউদ্দীন । মহমুদ শাহ কর্তৃক নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল বলিয়া কথিত। নিকটস্থ সাকোটিও তিনি নিৰ্ম্মাণ করাইয়াছিলেন। কোতোয়ালী দরওয়াজ ছাড়াইয়া কিছু দক্ষিণে অগ্রসর হইলে যেখানে ১২ নং মাইল-স্টোন পাওয়া যায়, সেই স্থানে বল্লদীঘি দেখিতে পাওয়া যায়। ইহা বল্লালসেনের সময় খনিত বলিয়া কথিত । ইহার অপর নাম ‘বালুয়া দীঘি। বল্লদীঘি হইতে দুই মাইল দক্ষিণে গৌড়ের পুরাতন শহরতলী ফিরোজপুরে ফকির নিয়ামৎ উল্লার মসজিদ আছে। এই স্থানে বহু মুসলমান যাত্ৰী আসিয়া থাকেন। নিয়ামৎউল্লা গুজরাট হইতে আসিয়াছিলেন। প্রতি বৎসর পৌষ সংক্রান্তির দিন এখানে গুজরাটি পীরের মেলা বসে। সমাধিসৌধটি বাংলার আফগান রাজা সুলেমান কররাণির রাজত্বকালে ১৫৫৯ খৃষ্টাব্দে নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল । নিয়ামতউল্লার সমাধির নিকটেই টাকশালদীঘির ধারে ছোট সোণা মসজিদ অবস্থিত ইহার সম্মুখভাগের প্রস্তরে উৎকীর্ণ কারুকার্য্য অতি সুন্দর। খৃষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দীর এই মসজিদকে র্যাভেনশ “গৌড়ের মণি” বলিয়াছেন। ইহা বড় সোণা মসজিদের মত বারান্দাওয়ালা মসজিদ। এমন সুন্দর পাথরের নক্স গৌড়ের অন্য কোন মসজিদে নাই। সুলতান আলাউদ্দীন হুসেন শাহের সময়ে ইহা নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল বলিয়া কথিত ।