পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/৩২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ゞや ংলায় ভ্রমণ গৌড়ে আরও কয়টি দেখিবার স্থান আছে । তন্মধ্যে কাচাগড় লোহাগড়, চন্দ্র সুৰ্য্যের প্রস্তর, গৌড়েশ্বরীর মন্দির, জহরাবাসিনী, মনস্কামনা শিব, রমাভিটা, পাতালচণ্ডী, প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। জাতির অতীত জীবনস্মৃতি গৌড়ের প্রতি ধূলিকণায়, অণুপরমাণুতে, আকাশে বাতাসে মিশাইয়া আছে। কালের প্রভাবে বাঙালীর গৌড় লক্ষ্মণসেনের লক্ষ্মণাবতী আজ ধূল্যবলুষ্ঠিত, বিরাট ধ্বংসস্তুপে পরিণত। কিন্তু তাছা হইলেও সেই ধ্বংসস্তুপের প্রত্যেক প্রস্তর, প্রত্যেক দেউল, প্রত্যেক মন্দির ও মসজিদ বাঙালী হিন্দু মুসলমানের নিকট পবিত্র। আজ মহামারীর প্রকোপে গৌড় মনুষ্য-বাসের অযোগ্য অরণ্যে পরিণত, গৌড়ের ধ্বংসাবশেষ দেখিয়া কবি আক্ষেপ করিয়াছেন ঃ “যেথা মন্ত্রীসাথ নরনাথ বসিতেন ধীর তথা ফেরুপাল ফিরে ফিরে ফুকারে গভীর । ” কিন্তু তাহা হইলেও সেই অরণ্য বাঙালীর নিকট পুণ্য তপোবন--পবিত্র তীর্থস্থান। প্রতি বৎসর কত শত বাঙালী এই তীর্থ দৰ্শন করিতে যান, দর্শনান্তর অতীতের গৌরব স্মরণ করিয়া আনন্দ ও গৰ্ব্ব অনুভব করিয়া থাকেন। . নিমাসরাই-—কলিকাতা হইতে ২১০ মাইল দূর। ইহাই পুরাতন মালদহ। পুরাতন মালদহ রাজধানী পাণ্ডুয়ার বন্দর ছিল এবং মহানন্দ ও কালিন্দীর সঙ্গমের উপর মহানন্দার পূর্ববতীরে অবস্থিত। নূতন মালদহ বা ইংরেজ বাজার হইতে জলপথে কিংবা নদী পার হইয়া একটি পাকা রাস্ত ধরিয়া নিমাসরাই বা পুরাতন মালদহে আসা যায়। পুরাতন মালদহ পূর্বে রেশম বা মৃতীর কাপড়ের বিখ্যাত গঞ্জ বা আড়ং ছিল এবং এখানে সৰ্ব্বপ্রথমে ওলন্দাজ এবং পরে ইংরেজ ও ফরাসী ঈস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির কুঠি স্থাপিত হয়। ১৭৭০ খৃষ্টাব্দে ইংরেজ কোম্পানি কুঠি ইংরেজ বাজারে লইয়া যান। পূর্বে নগরটির চারিদিকে প্রাকার ছিল এবং এখনও পারঘাটায় এই ফুর্গের হুয়ার আছে । এই দরওয়াজার সম্মুখে মহানন্দার অপর পারে নদীতীরে ৫৫ ফুট উচ্চ একটি মিনার আছে। ইহা মিমাসরাই মিনার নামে পরিচিত। মিনারের গায়ে অনেক প্রস্তরখণ্ড বাহির হইয়া আছে এবং ইহা দেখিতে আগ্রার নিকটস্থ ফতেপুর শিক্রি নগরে আকবর কর্তৃক নিৰ্ম্মিত হিরণ মিনারের মত । শিকারের জন্য কিংবা রক্ষীদের শক্র আগমন লক্ষ্য করিবার জন্য ইহা নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল বলিয়া অনুমিত হয়। প্রবাদ, দূরে শক্ৰ আসিতেছে দেখিতে পাইলে মিনার গাত্রের প্রস্তরখণ্ডগুলির উপরে মশাল জালিয়া দিয়া গৌড় নগরের লোককে সাবধান করিয়া দেওয়া হইত পুরাতন মালদহে কয়েকটি পুরাতন মসজিদ আছে, তাহাদের মধ্যে ছোট সোনা মসজিদই প্রধান ; ইহা বাঙলার আফগান বা পাঠান রাজা দাউদ শাহ, কররানির রাজ্যকালে মুসলমান বণিক মাশুম কর্তৃক ১৫৬৬ খৃষ্টাব্দে নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল। দুইটি বৃহৎ গম্বুজ ও একটি খিলান বিশিষ্ট এই মসজিদটি দেখিতে সুন্দর। চারিকোণে চারিটি মিনার ও প্রবেশদ্বারে সুন্দর কারুকার্যখচিত প্রস্তর স্তম্ভ আছে। মাশুমের ভ্রাতা পুরাতন মালদহের কাটুরা তৈয়ারী করাইয়াছিলেন। একটি প্রকাও উঠানের চারিদিকে বাড়ী তৈয়ারী করিয়াতাহার দুই দিকে দুইটি বড় দরওয়াজা রাখা হইত। ব্যবসায়ীরা