পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/৩৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩১৮ বাংলায় ভ্রমণ মসজিদের মধ্যে যেখানে ফকির জলাল তবরিজী বসিয়া উপাসনা করিতেন, নবাব সিরাজউদ্দৌলা উহার চারিদিক রৌপ্যনিৰ্ম্মিত বেষ্টনী দ্বারা ঘিরিয়া দিয়াছিলেন। এখন আর সেই বেষ্টনী দেখিতে পাওয়া যায় না। রজবের ১লা হইতে ২২শে পৰ্য্যন্ত এই দরগাহে মুসলমান ফকির ও মোল্লাগণ সমবেত হইয়া থাকেন। তন্থপলক্ষে ভোজ ও উৎসব হয়। ঐ সময়ে এবং সাবান মাসে এই স্থানে মেলা বসে। এই দুই মেলা উপলক্ষে ভারতের প্রায় সৰ্ব্ব স্থান হইতে ফকিরগণ আসিয়া থাকেন। এই দরগাহে পাচটি খিলান আছে। বাহিরের চত্বরে ২টি কষ্টি প্রস্তরের স্তম্ভ আছে। চত্বরের একপার্শ্বে একটি দাড়িম্ব বৃক্ষ আছে ; বন্ধ্যা নারীর পুত্ৰ কামনায় ইহাতে ইষ্টকখণ্ড বাধিয়া দিয়া থাকে। বড় দরগাহের পূর্ব পাশ্বে হিন্দু মন্দিরের আকারে একটি ছোট মসজিদ আছে। উহা পূৰ্ব্বে মন্দির ছিল ; কষ্ট প্রস্তরের উপর নক্সা দেখিয়াও মনে হয় ঐ গুলি হিন্দু বা বৌদ্ধ আমলের। এই দরগাহ মধ্যে লক্ষ্মণসেনী দালান নামে একটি পুরাতন সৌধের ভগ্নাবশেষ দৃষ্ট হয় ; এই নাম কিরূপে হইল জানা যায় নাই। দরগাহে পুথি মুবারক নামে সংস্কৃত ভাষায় লিখিত পীর জলাল তবরিজী সাহেবের জীবনী সম্বলিত একখানি পুস্তক রক্ষিত আছে। বড় দরগাহের প্রধান প্রবেশ দ্বারের পার্শ্বে পূৰ্ব্বমুখী ছোট দরগাহ অবস্থিত। এক কালে এই দরগাহের ছয় হাজার বিঘা পীরোত্তর সম্পত্তি ছিল বলিয়া ইহা ছয় হাজারী দরগাহ নামেও পরিচিত। ইহার মধ্যে বিখ্যাত সাধক নূর কুতব-উল-আলম ও আলউল-হকের সমাধিস্থান আছে। আলা-উল হক গোঁড় সাল্লাপুরের পীর শেখ অখি সিরাজ-উদ্দীন সাহেবের শিষ্য ছিলেন বলিয়া কথিত। র্তাহারই পুত্র প্রসিদ্ধ সাধক হজরৎ নূর-কুতব-উল-আলম রাজা গণেশের সমসাময়িক ছিলেন। ১৪১৪ খৃষ্টাব্দে তাহার মৃত্যু হয়। সুলতান শমস্-উদ্দীন ইমুফ শাহ কর্তৃক দরগাহ টি ১৪৫৮ খৃষ্টাব্দে নিৰ্ম্মিত হইয়াছে বলিয়া কথিত। এই কবরের পশ্চিমদিকে একতল প্রাচীন গৃহটিকে “চিল্লিখানা” বলে। এই গৃহে কুতব আলম উপাসনা করিতেন। এই দরগাহের প্রাঙ্গনে ভগ্নাবশিষ্ট কাজী নূর মসজিদ দেখিতে পাওয়া যায়। দরগাহর উত্তরদিকে প্রাচীরের বাহিরে ধ্বংসাবশিষ্ট স্তৃপ খনন করিয়া বিচিত্র কারুকার্য্যখচিত চতুষ্কোণ কষ্টি প্রস্তরের স্তম্ভ এবং উজ্জল প্রস্তরখণ্ডসমূহ পাওয়া গিয়াছে। আরও কয়টি বৃত্তাকার কৃষ্ণপ্রস্তরাসনও ঐ সঙ্গে ঐ স্থান হইতে উদ্ধার করা হইয়াছে। এই পতিত ভূখণ্ডের পূর্বপ্রান্তে “যুরিদখানা’ নামক একটি জীর্ণ ইমারত আছে। কথিত আছে, ঐ স্থানে মুসলমান আমলে হিন্দুদিগকে ইসলাম ধৰ্ম্মে দীক্ষিত করা হইত। রাজা গণেশের পুত্র যছও নাকি ঐ স্থানে মুসলমান হইয়া সুলতান জলাল-উদ্দীন মহম্মদ শাহ নাম ধারণ করিয়াছিলেন । - - ছোট দরগাহের তিনটি গুম্বজ আছে, একটি ভগ্ন। সম্মুখে প্রস্তর প্রাচীর-বেষ্টিত পুষ্করিণী আছে। প্রাঙ্গণে বিস্তুর কত্তর দেখা যায়। বহু প্রস্তরের উপর হিন্দু দেবদেবী