পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SSV বাংলার পুরনারী কিন্তু সহজিয়া ও তান্ত্রিক অনুষ্ঠানে যে সকল জটিল বিধান পাওয়া যায়, পল্লীর গান- সে সমস্ত হইতে নায়ক নায়িকাদিগকে মুক্ত করিয়া লইয়াছে। কোন তত্ত্ব কথার বাহানা নাই, কোন পারিভাষিক বা দোহার দুর্বোধি সূত্রের বালাই নাই-এই সকল গল্পের নায়ক নায়িকার প্রকৃতির সহজ পথে বিকাশ পাইয়াছে-যে ভাবে ফুল ফুটিয়া উঠে, লতা মুঞ্জরিত হয় ও কোকিলের স্বরে বায়ুমণ্ডল মুখরিত হয়। এখানে ‘গুরু'র উপদেশের জন্য প্ৰতীক্ষা নাই, পর পর ভালবাসা কি কি সূত্র আশ্রয় করিয়া স্তরে স্তরে উন্নত কোন ধৰ্ম্মের আদর্শে পৌছিবে তাহার বিবৃতি নাই। অথচ সহজিয়াদের সর্বস্ব দেওয়া প্রেমের হাওয়া যে ইহাদের মধ্যে বহিয়া নিষ্কলুষ প্রেমকে মূৰ্ত্তিময়ীহালাদিনী শক্তিতে পরিণত করিয়াছে, তাহা অতি স্পষ্ট কথায় বোঝা যায়। এই চিত্রের প্রধান চরিত্র কাঞ্চন যৌবনের সার-ধৰ্ম্ম প্ৰেম বুঝিয়াছিল, অথচ সে এবং তাহার প্রণয়ী যে সামাজিক বিধানানুসারে পাংক্তেয় নহে, তাহা কাঞ্চন যতটা বুঝিয়াছিল—তাহা তাহার পূর্বানুভূতির ছত্ৰে ছত্ৰে দেখিতে পাওয়া যায়। সে হৃদয়ের সঙ্গে দুরন্ত সংগ্রাম চালাইয়া দ্বিধা কম্পিত চরণে অগ্রসর হইয়াছে—এবং সহজে ধরা দেয় নাই। পরিণামের চিন্তা তাহার ভাবের দ্রুত গতিকে মন্থর করিয়াছিল—কিন্তু এরূপ ক্ষেত্রে হৃদয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করিয়া কেহ জয়ী হইতে পারে না । কাঞ্চন যখন পালাইয়া আসিল, তখনও ভাবী বিপদের আশঙ্কা তাহার মনের ভিতর লুক্কায়িত ছিল। সুখের নিৰ্ম্মল পল্লী-জীবন তাহার হৃদয়ে একখানি স্বর্ণ পটের মত আঁকা ছিল ; আর সে দিগন্তে বিলীন শালী ধানের ক্ষেত, তাহদের গৃহ-তরুগণের শ্যামল শোভা ও তদবকাশে দুষ্ট আকাশের নীলিমা ও প্ৰতিবাসী প্রিয়জনদের মুখ সে দেখিতে পাইবে না—এই দুঃখে হৃদয় বিদীর্ণ হইতেছিল। রাজকুমার তাহাকে অনেক প্ৰবোধ দিয়াছিলেন, কিন্তু তাহার প্রাণ রহিয়া রহিয়া কঁাদিয়া ऐठिंज्ञांछिब्ल এত ভালবাসার যে ভীষণ প্ৰতিদান সে পাইল, তাহার সরল প্ৰাণ তজন্য একেবারেই প্ৰস্তুত ছিল না । তিন মাসের পরিবৰ্ত্তে সে এক বৎসর প্রতীক্ষা করিয়াছিল, তথাপি সে আশা ছাড়িতে পারে নাই, মোহিনী আশার আকর্ষণ এত বেশী ! এক বৎসর পরেও সে নদী