পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

年t电忒 SSA তীরে বসিয়া ভাবিয়াছিল, কুমার তাহার জন্য হীরামতির ফুল আনিবেন, সে দরিদ্র অভাগিনী সে সেই উপহারের কি মূল্য দিবে ? সে তাহার দুটীি চক্ষের জল দিয়া সেই হীরা মতির ফুল গ্ৰহণ করিবে। তাহার এত আশা এত ভরসার পরে ত্ৰয়োদশ মাসের পরেও যখন কুমার আসিলেন না, তখন কঁাদিয়া কাটিয়া ঘরের বাতি সে ফু দিয়া নিবাইল। আর প্রতীক্ষার অবকাশ নাই । কুমার বা কুমারের চিন্তা ছাড়া তার আর সংসারে কোন আকর্ষণ ছিল না, কুমার সুখী হইয়াছেন, ইহা জানিয়া সে নিশ্চিন্ত মনে প্ৰাণ ত্যাগ করিতে প্ৰস্তুত লইল। এই মহাদুঃখ ও পরকৃত মহা অত্যাচারের মধ্যেও সে একবার কুমারের নিষ্ঠুরতার কথা,-রুক্মিণীর বিশ্বাসঘাতকতার কথা একবারও উচ্চারণ করে নাই। শুধু কুমারের জন্য নহে, রুক্মিণীর জন্যও সে শুভ কামনা করিয়া ভালবাসার যজ্ঞে প্ৰাণ আহুতি দিয়াছে। নদীর কুলে পাতার বিছানা তৈরী করিয়া যে স্থানে রাজকুমারকে অভ্যর্থনা করিয়াছে, সেই চিহ্ন দেখিতে দেখিতে সজল চক্ষে সে সংসার হইতে বিদায় নিল ; মৃত্যুকালে সে চরাচরের জীব-জন্তু সকলকে মিনতি করিয়া সাবধান করিয়া গেল-যেন তাহার মৃত্যু কথা কেহ প্রচার না করে। সে নীরবে প্রেমের জন্য চুড়ান্ত আত্মত্যাগ দেখাইতে জগতে আসিয়াছিল,-সে প্রেমের মধ্যে কোন অভিযোগ, অদৃষ্টের প্রতি ধিক্কার কিম্বা পরের প্রতি বিরূপ ভাব ছিল না ; তাহার প্ৰেমাভিনয় একান্তই নীরব ছিল, এবং নীরবে সে কাহাকেও মৃত্যুর জন্য দোষী না করিয়া বিদায় লইয়া চলিয়া গেল। সে এই মৃত্যু-কথা গোপন করিতে সকলকে বলিয়া গেল কেন—তাহা একটি কথায় সে বলিয়া গেল । প্ৰকৃত ভালবাসায় সংশয়ের স্থান নাই, সে জানিত তাহার এত ভালবাসার ফল অবশ্যই ফলিবে, কুমার কোন না কোন সময় অনুতপ্ত হইবেন, কিন্তু কাঞ্চন রাজকুমারের মনে এতটুকু দুঃখ হয়। ইহা চায় না। :- “কি জানি শুনিলে বঁধু পাইবে মনে ব্যথা।” এই ছত্র অমূল্য। এত যে নিষ্ঠুর তাহার প্রতিও কাঞ্চনের কতখানি দরদী ! কতখানি বিশ্বাস !