পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তিলক বসন্ত SVeć মহিষী এই বনে রাজার সঙ্গে আসিয়া পথ হারাইয়া কাঠুরিয়াণী সাজিয়াছেন,” সকলে এই বলাবলি করিতে লাগিল । AA বণিক গলায় কাপড় বঁাধিয়া যাইয়া সুলা রাণীকে ভূমিষ্ট হইয়া প্ৰণাম পূর্বক কঁদিতে কঁাদিতে তাহার অবস্থা জানাইল । রাণী স্বভাবতঃই করুণাময়ী, দুঃখ কষ্ট পড়িয়া এবং দরিদ্র কাঠুরিয়াদের মধ্যে থাকিয়া সেই স্বভাবতঃ স্নেহ-প্রবণ প্ৰকৃতি আরও দয়াশীল হইয়াছে। তিনি সাধুর দুঃখে৷ বিগলিত হইয়া প্ৰত্যেকটি জাহাজকে কর দ্বারা স্পর্শ করিলেন। “সদাগরের ডিঙ্গি রাণী পরশ করিল। চোদ্দখানি ডিঙ্গা অমনই ভাসিয়া উঠিল ॥” কাঠিরাণীরা অবাক, মাঝি মাল্লারা অবাক, বণিক রাণীর পায়ে পড়িয়া তঁহার হৃদয়ের কৃতজ্ঞতা জানাইল । কিন্তু মাঝিরা তঁহাকে বলিল, “প্ৰভু, দরিয়ার বিপদ আপনার অবিদিত নাই, আবার এই সকল মাল বোঝাই ডিঙ্গি যাইয়া কোন চরায় ঠেকে তাহার ঠিকানা নাই, এই দেবীকে আমরা কিছুতেই ছাড়িয়া যাইব না।” সাধুর অনিচ্ছা সত্বেও মাঝি মাল্লারা জোর করিয়া রাণীকে ডিঙ্গায় তুলিয়া লইল । রাণী বিপদে পড়িয়া কৰ্ম্ম-পুরুষের নিকট প্রার্থনা করিলেন- “এই পুরুষগুলি আমার অঙ্গ স্পর্শ করিয়াছে, হে দেবতা তুমি কৃড়কুণ্ঠ দিয়া আমার রূপ ধবংস কর, আর যেন কেহ আমারে না ছোয় ।” যখন মাঝিরা ডিঙ্গা বাহিয়া চলিয়া গেল, তখন কাঠরাণীদের দিকে চাহিয়া রাণীর কি মৰ্ম্মান্তিক কান্না ! “আমার পাগল রাজাকে তোমরা চারটি খাওয়াইও । বড় সাধের ভাত ব্যেনুন পড়িয়া রহিল, কাঠুরিয়ারা শ্ৰান্ত ও ক্ষুধাৰ্ত্ত হইয়া আসিয়া কি খাইবে, কে পরিবেশন করিবে ? রাজা হয়ত ক্ষুধা তৃষ্ণা ভুলিবেন, খাইতে চাহিবেন না,-তোমরা আমার প্রাণ-পতিকে বঁাচাইয়া রাখিও । তোমাদের মনের স্নেহ আমি জানি, আমি রাজ্যহার হইয়া পাতার বিছানায় রাজ্যসুখ পাইয়াছিলাম, আজ বিধাতা তাহা কাড়িয়া লাইলেন, এই চৌদ্দ জাহাজ কোন দূর বন্দরের দিকে যাইতেছে, তাহা জানি না। আমি আর আমার স্বামীর মুখখানি দেখিব না, তোমরা আমার বড়