পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\ORR বাংলার পুতলাৰী বাসু বলিল, “এই গাছটার উপর হরিকেল পাখী বাসা করিয়াছে, আমি হরিকেল পাখীর মাংস বড় ভালবাসি, কিন্তু পাখীগুলি টু শব্দটি হইলে উড়িয়া আকাশের উপরে-খুব উচুতে উড়িয়া যায়। এগুলি ধরিবার কোন উপায় দেখিতে পাই না।” মাণিকতারা স্বামীকে আদর করিয়া বলিল, “এই কথা ! তুমি হরিকেল পাখীর মাংস ভালবাস, আমাকে আগে বল নাই কেন ? আমি এই পাখী। ধরিবার কৌশল জানি। তুমি এখনই আমার বাপের বাড়ী চলিয়া যাও, সন্ধ্যার আগে ফিরিয়া আসা চাই । সেখানে বলিও, মাণিকতারা তাহার বঁটুলি ও ধনুকটা চাহিয়াছে।” বাসু চলিয়া গেল। এই অবসরে মাণিকতারা কতকগুলি মাটীর গুলি ও তীর ঘরে বসিয়া তৈরী করিল। সন্ধ্যার পূর্বেই বঁটুলি ও ধনুক লইয়া বাসু বাড়ী ফিরিল এবং স্ত্রীর হাতে দিয়া বলিল, “এসকল তো পাইলে, এখন বঁটুলি ও ধনুক চালাইবে কে ?” উত্তরে তাহার স্ত্রী বলিল, “কেন আমার ধনুক ও আমার বঁাটুলি আমিই চালাইব, ইহা আবার চালাইবে কে ? এখন তুমি বল কয়টা হরিকেল পাখী তুমি চাও ?” বাসু বলিল, “আজকার জন্য দুইটি মার, তোমার ওস্তাদির পরিচয় পাইলে কাল হইতে রোজ এক এক গণ্ডা করিয়া আমায় দিও।” মাণিকতারা দুইটি গুলি লইয়া সন্ধান করিল। দেখিতে দেখিতে দুইটা পাখী তাহদের পায়ের কাছে পড়িয়া আছাড়ি বিছাড়ি করিতে লাগিল । বাসু কহিল, “ধন্যি মেয়ে, একেবারে দুইটিকে শিকার করিয়াছ ? তোমার হাত এত পাকা, তুমি যে আমায় চমকাইয়া দিয়াছ ?” তাহার স্ত্রী বলিল, “আমি তীর দিয়া একবারে চারিটি মারিতে পারি ও বঁটুলী দিয়া একসঙ্গে পাঁচটি শিকার করিয়াছি। আমাদিগের অঞ্চলে রাজবাড়ীতে দারু ও সুমারু নামে কোচ জাতীয় দুইজন ধানুকী কাজ করিত। তারা এমনই তীরন্দাজ ছিল যে, তারা এক একজন একশত শত্রু ঘাল করিতে পারিত। আমি এই দুই ওস্তাদের কাছে তীর চালনা শিখিয়াছি।