পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

कूबिक S/ه হাসি মুখে বিষ গিলিয়া ফেলিতেছেন। যখন অহেতুক অভিযোগে তিনি নির্বাসিত হইলেন এবং তঁাহার পরম হিতৈষী শুক পাখীও তেঁাহার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিলেন, তখন তিনি বুঝিলেন, অবস্থা এখন দৈব-নিয়ন্ত্রিত। সকলের জীবনেই এইরূপ দুঃসময় আসে। তখন বন্ধু শত্রু হয়, যাহা দিবালোকের ন্যায় সত্য, তাহা কোয়াসার মত মিথ্যা ও তিমিরাবৃত হয়-এইরূপ সময়ে পরের উপর রাগ করিলে কি হইবে ? তিনি কাহারও উপর কোন রাগ করিলেন না । নির্বাসনের দণ্ডটা তাহার। প্ৰাণে বেশী দাগ দিলএত কষ্টের মধ্যে এইটুকু সুখ তাহার ছিল, স্বামীর মুখখানি দেখা । ভগবান তঁহাকে এই সুখটুকু হইতেও বঞ্চিত করিলেন। কাজল চোখের জল ফেলিতে ফেলিতে সকলের নিকট বিদায় নিতেছেন। কতটা উদারতা ও ক্ষমাশীলতা থাকিলে তিনি কঙ্কণ দাসীর নিকট ক্ষমা ভিক্ষা করিতে পারেন। তাহা অনুমান করুন ! এই ক্ষমা চাওয়া সত্যকার ক্ষমা গুণ, পাঠক মনে ভাবিবেন না। কাজল এখানে ক্ষমাশীলতার অভিনয় করিতেছেন। সত্যই তিনি দাসীর কাছে ক্ষমা চাহিয়াছিলেন, এখানে তিনি মানবী নহেন-দেবী। তিনি কোটীশ্বরের একমাত্র তরুণ পুত্ৰ প্ৰদত্ত প্ৰলোভন এক কথায় উড়াইয়া দিয়াছেন । এই উপেক্ষাশীলার সতীত্ব-ধৰ্ম্ম বাঙ্গালী অনেক মেয়েরই ছিল, এজন্য এ বিষয়টি লইয়া বেশী কোন মন্তব্য করার প্রয়োজন নাই ; যে-দিন তিনি বাপের বাড়ীতে ঢুকিলেন, তখন র্তাহার মাতা পিতার স্নেহ-নিদর্শন প্রতিটি কক্ষ দেখিয়া বাৎসল্যে র্তাহার হৃদয় ভরিয়া গেল, কোন কক্ষে স্বর্ণ-ঝিনুকে মা তঁহাকে দুধ খাওয়াইতেন, কোন কক্ষে ঘুম-পাড়ানিয়া গান গাহিয়া র্তাহাকে কোলে করিয়া ঘুম পাড়াইতেন-পর পর এই দৃশ্যগুলি দেখিয়া সেই অনাথ বালিকার হৃদয় মথিত করিয়া যে কয়েক বিন্দু তাহার নয়ন কোণে দেখা দিয়াছিল। তাহ অশ্রু নহে-মুক্ত । রত্নেশ্বর তঁাহাকে বিবাহ করিতে চাহিলেন, কাজল এই প্ৰস্তাবে কতকটা রহস্য কতকটা স্নেহের অভিনয়ের মধ্যে যে সভা আমন্ত্রণ করিলেন, সে স্থানটিতে আমরা অনুমান করিতে পারি, শুকের করুণ কণ্ঠের বর্ণনা, এককোণে দাড়াইয়া তখন তিনি কিরূপ মৰ্ম্মবিদারী দুঃখের সহিত তাহ।