পাতা:বাংলা লিরিকের গোড়ার কথা.pdf/৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ংলা লিরিক সম্বন্ধে কিছু বলতে গেলে গোড়াতেই তুলতে হয় চর্যাপদ বা চর্যাগানের কথা । তবে সেই প্রসঙ্গে এও বলে নিতে হয় যে, চর্যাগানের বাংলা এখন আর বাংলা নেই। অর্থাৎ, এগুলোকে আধুনিক বাংলায় খানিকট ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে না দিলে এদের বিন্দুবিসর্গ কারোর বোঝবার জো নেই । তবে শুধু অম্বুবাদ করে দিলেও যে বেশ পরিষ্কার বোঝা যাবে, তা নয় । কারণ, এই পদগুলি একরকম সাংকেতিক ভাষায় রচিত । তার নাম হচ্ছে সন্ধ্য-ভাষা । সে এক ধূপছায়া-রঙের আবছায়াগোছের আলোআঁধারে-মেশানো প্রহেলিকাময় ভাষা । তার যে-মানেট বাইরে প্রকাশ পাচ্ছে, সেটাই তার আসল মানে নয় । হেঁয়ালির মতো তার এক গুপ্ত অর্থ আছে । সেটা হচ্ছে সাধনতত্ত্বের কথা । যারা ও-পথের পথিক নন, তাদের কাছে এর আসল মানে সহজে ধরা-ছোয়া দেয় না । কিছু অবহু আভাসে ধরা পড়ে, কিন্তু বেশির ভাগেরই নাগাল পাওয়া দায় । চর্যাগানের ভিতরকার সাধনতত্ত্বের নাম হচ্ছে বজ্রযান বা সহজযান । এটা বাঙালী বৌদ্ধ আচার্যদের মত । তবে এর বিশেষ সংস্করণ হয়েছিল নেপালে তিব্বতে ও চীনদেশে । এই সম্প্রদায়ের আচার্যদের নাম সিদ্ধাচার্য । সাধনমার্গে সিদ্ধিলাভ করার দরুনই বোধ হয় তাদের এই নাম। এই সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা আচার্য লুইপাদ । পণ্ডিতদের মতে তিনি রাঢ়দেশের লোক । এরই নাম অনুসারে এই সম্প্রদায়ের পরবর্তী আচার্যেরা নিজেদের নামের সঙ্গে ‘পাদ” কথাটি যোগ করে নিতেন । যেমন, কিলপাদ, কাহ্নপাদ, শাস্তিপাদ, ভুমুকুপাদ, ডোম্বীপাদ ইত্যাদি। এরা সকলেই চর্যাগান বেঁধে গিয়েছেন ।