পাতা:বাখতিন - তপোধীর ভট্টাচার্য.pdf/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
চাইতেন না। এই দম্পতির পারস্পরিক অনুরাগ এত প্রগাঢ় ছিল যে চিকিৎসার প্রয়োজনেও দু’জনে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাইতেন না।
১৯৬৭-৬৮ : একদিকে দম্পতির পীড়া বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অন্যদিকে সারান্‌স্ক থেকে তাঁদের মস্কোয় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলেছে। এই অবস্থাতেও বাখতিন পড়ছেন, পুরোনো খসড়া সংশোধন করছেন।
১৯৬৯...: পরবর্তীকালে সোভিয়েত রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি আন্দ্রোপোভ তখন রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা কে জি বি-এর প্রধান। তাঁর মেয়ে টারবিনের আলোচনাচক্রে বাখতিনের কথা জেনেছেন। তিনি বাবাকে রাজি করালেন যাতে মস্কোর ক্রেমলিন হাসপাতালে বাখতিন ও এলেনাকে চিকিৎসা করানো যায়। স্পষ্টত তা ছিল বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জন্যে সংরক্ষিত। অক্টোবরে বাখতিন-দম্পতিকে ক্রেমলিন হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে। এই অবস্থাতেও বাখতিন তাঁর লেখার কাজ অক্ষুণ্ণ রেখেছেন।
১৯৭০...: নিয়ম অনুযায়ী বাখতিনদের দীর্ঘদিন ক্রেমলিন হাসপাতালে রাখা সম্ভব হয়নি। ১৫ মে তাঁরা মস্কোর খুব কাছেই একটি বৃদ্ধাবাসে স্থানান্তরিত হচ্ছেন। এই নতুন বাসস্থান খুব সুবিধাজনক না হলেও যথারীতি বাখতিনের পড়াশোনা অব্যাহত। এবছর তাঁর পচাত্তরতম জন্মদিনে তিনি প্রচুর শুভেচ্ছাবার্তা পেয়েছেন। ফলে স্থানীয় মানুষদের কৌতুহল মেটাতে এত অসুস্থ অবস্থাতেও তাঁকে বক্তৃতা দিতে হয়েছে। আগস্টের এই বক্তৃতাই তার জীবনের শেষ প্রকাশ্য অনুষ্ঠান।
১৯৭১...: এলেনার হৃদ্‌পীড়া গুরুতর আকার ধারণ করছে। নভেম্বরের শেষে তাঁকে নিকটবর্তী একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। সেখানেও দম্পতিকে একসঙ্গে রাখার জন্যে বিশেষ ব্যবস্থা করতে হয়েছে। অবশেষে ১৩ ডিসেম্বর রাত্রে বাখতিনের চিরসঙ্গিনী এলেনা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করছেন। মৃত্যুর একটু আগেও স্বামীর জন্যে চা তৈরির কথাই ভাবছিলেন তিনি। এলেনার মৃত্যু বাখতিনের বেঁচে থাকার ইচ্ছাই শুষে নিয়েছে। শুভানুধ্যায়ীরা তাঁকে সোভিয়েত লেখক সংঘের সদস্য হতে অনুরোধ করছেন। কেননা এতে আবাসন ও চিকিৎসার সমস্যা অনেকটা সমাধান হবে। বছরের শেষে নতুন বাসস্থানে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
১৯৭২...: মস্কোয় বাখতিনকে যাতে স্থায়ী আবাসিক বলে গণ্য করা হয় এজন্যে শুভানুধ্যায়ীরা রীতিমতো প্রচার আন্দোলন চালাচ্ছেন। তাঁদের চেষ্টায় শেষপর্যন্ত ৩১ জুলাই বাখতিনের বাসস্থান নির্দিষ্ট হচ্ছে। বই থেকে পাওয়া লভ্যাংশ এবং এলেনা দ্বারা সঞ্চিত অর্থের সাহায্যে লেখক সংঘের একটা বাসগৃহ কিনে নেওয়া হচ্ছে। তরুণ প্রজন্মের সমস্ত সাহিত্যবোদ্ধার কাছে বাখতিন কার্যত ভাববিগ্রহে পরিণত হয়েছেন।
১৯৭৩...: মুখ্যত কোঝিনোভের চেষ্টায় সারান্‌স্ক থেকে আরও কিছু পুরোনো পাণ্ডুলিপি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। শুভানুধ্যায়ীদের সমবেত চেষ্টায় কিছু কিছু প্রবন্ধ সংকলন প্রকাশিত হচ্ছে। অসুস্থতার মধ্যেও বাখতিন নিজে পরিমার্জনের কাজ
২৫