পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিল্পীর ক্রিয়াকাণ্ড
১৬৭

এবং তার ভবিষ্যৎ বংশাবলীর খানিক জড়িয়ে নিয়ে চলে, এইভাবে চলা হ’ল শিল্পই বল আর যে কাজই বল তার স্বাভাবিক গতি। এক কালের নতুন সে খানিকটা ক্রিয়া-চক্র চালিয়ে থামলো, আর এক নতুন সেখান থেকে ক্রিয়া সুরু করলে এবং অন্য নতুনের হাতে কায দিয়ে ক্ষান্ত হ’ল,—এইভাবে ভূত ভবিষ্যৎ বর্তমানের মধ্যে ক্রিয়া-প্রবাহ চল্লো অবিচ্ছিন্নভাবে। গঙ্গার ধারায় কোথাও চড়া পড়লো না তবেই ধারা সরতে পেলে, কোথাও দুর্গম হ’ল না আবিল হ’ল না আবর্জনায়। এক সময়ে দেবমূর্তির একটা বাজার সৃষ্টি হয়েছিল এদেশে, তার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ধর্মপ্রচার, শিল্পকর্মের প্রসার ছিল গৌণ; সুতরাং সেই কাজের উপযোগী মূর্তির মান-প্রমাণ-লক্ষণাদি দিয়ে শাস্ত্র বাঁধা হয়েছিল এবং ভারতবর্ষের মূর্তি-শিল্প ধ্যান-যোগের সম্পূর্ণ সিদ্ধির উপায় ধরে' একটা যে ছাপ পেলে সেটা সাময়িক ছাপ এবং বাঁধ। দস্তুরের ক্রিয়ার ছাপ। চীন দেশে এক সময়ে মানুষের পা এই ভাবে কড়া হুকুমে খুব ছোট করে’ তার স্বাভাবিক বাড় নষ্ট করে' দেওয়া হয়েছিল। চীনের সৌন্দর্যশাস্ত্রে এবং আমাদের এখনকার তথাকথিত বিপশ্চিতাম্ মতম্‌-এর মধ্যে ভয়ঙ্কর রকমের একটা মিল রয়েছে,—জীবন্ত জিনিষকে স্বাভাবিক বাড় থেকে বঞ্চিত করে' শাসনের বলে একটা কৃত্রিম রূপ দেওয়ায়। কিন্তু চীনের শাসন ও সেকালে শিল্পশাস্ত্রের শাসন এই দুয়ের মধ্যে নিয়মের চাপের কষনের ইতর-বিশেষ হওয়ার দরুণ আমাদের মূর্তি-শিল্প একটা সুন্দর ছাঁদ পেলে, চীনের পদপল্লব বেঁকে চুরে একটা বীভৎস রূপ ধরলে। শাস্ত্রের নিয়ম যেখানে স্বভাবের নিয়ম ধরে’ বাঁধা সেখানে সে অনেকখানি বিস্তার দিলে শিল্পের গতিবিধিকে অব্যাহতভাবে চলতে, কিন্তু স্বভাবকে অতিক্রম করে’ যেখানে কঠোর নিয়ম গড়া হ’ল সেখানে কৃত্রিমতা কদর্যতাই গড়ে' উঠলো। দেবমূর্তির ব্যবসা খুলতে যখন নানা আইনে শিল্পীদের কঠিন বাঁধন পরানো হয়েছিল, ভারতবর্ষের মূর্তি-শিল্প তখন একদিকে যেমন এক বিষয়ে প্রাচুর্যলাভ করলে অন্য দিকে তেমনিই খোঁড়া হ’য়ে রইলো; কেবল ঠাকুর গড়তেই পাকা হ’ল মানুষ এবং তাও ক্রমে দাঁড়ালো গিয়ে পুঁথির লেখা মাপজোখে ঠিকঠাক করে' কোঁদা ঠাকুরে যার মধ্যে দেবচক্ষু ইত্যাদি সবই থাকলো—অমরত্বটুকু ছাড়া। পাথরের কাযে পরলোকের অবিচিত্র ছায়াই পড়লো, ইহলোকের