পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২০০
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

যাদুঘরে, কত শাস্ত্ৰ কত পুথি কত চিত্র গিয়ে জমা হচ্ছে সেখানে তার ঠিক নেই, কিন্তু বৌদ্ধদের আমলে যে ভাবে একটি মাত্র বুদ্ধ মূর্তি—অথবা মূর্তিও নেই শুধু একখান হাতে লেখা পুথি–ধমে ধমে, চিন্তায় চিন্তায়ু, শিল্পে শিল্পে মিলিয়ে দিয়েছিল চীন ও ভারতের দুই সভ্যতাকে ਦੇ ভাবে, সে ভাবের মিলন হতে কত দেরি লাগছে আজকের প্রাচ্যে ও আজকের পাশ্চাত্যে ! এ দেশকে বুঝতে চাচ্ছে ওরা ও দেশকে বুঝতে চাচ্ছি আমরা বড় কম দিন ধরে নয় কিন্তু বাইরে বোঝাপড়া হলে তো হয় না, শুধু পণ্ডিতে পণ্ডিতে মিল্পে তো জাতিতে জাতিতে মিলন হ’ল না বিবাহ সূত্রে । fi § দুই ভিন্ন জাতিতে সকল দিকে অস্তরের বোঝাপড় চলে অন্দরের বাসরে শুধু, সদরে স্কুলে, হোটেলে, হোষ্টেলে, আফিস ঘরে, বায়স্কোপে, ফুটবলের মাঠে এবং সরকারী বেসরকারী গার্ডেন পার্টি ও পদৰ্ণ পার্টিতে যতক্ষণ মিলন ততক্ষণ দুই জাতিতে পুরো মিলন ভাব-সাব হ'ল না, শিল্প কলাও নতুন ছন্দটি পেয়ে গেল না। পূব পশ্চিমের মিলন যখন হবে তখন কেমন শিল্পকলা দেখা দেবে তা কে বলতে পারে ? কিন্তু পূব পশ্চিম দুই সভ্যতার মাঝে যে অন্ধযুগের পদ তা ছিড়ে না পড়লে এই সম্পূর্ণ মিলন ঘটা সম্ভব নয় জানা কথা । ওরা বড় আমরা ছোট কি আমরা বড় ওরা ছোট—শিল্প ব্যাপারে এ নিয়ে লড়াই করে মিলন হয় না, কাজেই শিল্পও দেখা দেয় না দেশে । লড়ায়ের দিনে যবন এসেছিল এ দেশে এক হাতে কোরাণ অন্ত হাতে তলোয়ার নিয়ে কিন্তু লড়াই শেষে যদি তেমনি ভাবেই তারা পাহারা দিতেই থাকতো মনের মিলনের ঘাটিতে ঘাটিতে তবে নিস্ফল হ’ত তাদের রাজশ্ৰী। ঐ সব আমলে দেশে যে সমস্ত শিল্পকলা সৃষ্টি হ’ল তার মূলে বিজিত এবং বিজেতায়, রাজায় ও প্রজায় মনের মিলন। বাবর থেকে আরম্ভ করে’ পরের পর মোগল বাদশার জীবন-চরিত থেকে দেখা যায়, তার জয় করে নিলে দেশ কিন্তু দেশের কাছেও বাধা দিলে মন সত্যি সত্যি এবং ঘরের দেওয়ালে সে কথা লিখে গেল তারা—এইখানেই স্বর্গ এই স্বর্গ। এই ভাবের যখন মিলন জাতিতে জাতিতে হয় তখনি শিল্পের দিক দিয়ে নতুন যৌবন পায় দেশ, একথা মোগল বাদসার সভাপণ্ডিত “ভামিনী-বিলাসের” শেষ শ্লোকে স্পষ্ট করে’ বলে গেছেন—“শাস্ত্রাস্তফলিতানি, নিত্যবিধয়ঃ সৰ্ব্বেইপি