পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৩০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
স্মৃতি ও শক্তি
২৯৫

বিভিন্ন এবং বহু, স্মৃতি দেখায় ভাবের দিক দিয়ে বিভিন্ন এবং বহু ৷ অজ্ঞাত রূপের কল্পনা আর জ্ঞাত রূপের স্মৃতি—এই হ’ল দুই পথ রূপ-জগতের যাত্রী শক্তিমান মানুষের সামনে ধরা এবং এই দুই পথের খবর এদের কাছ থেকে পাওয়া যায় । শিশুর জীবনে অনেকখানি পথ অজ্ঞাত, সেখানে কল্পনার অবাধ গতি দেখতে পাওয়া যায় এবং প্রত্যেক শিশু এই অজ্ঞাতকে নিজের নিজের চরিত্র ও শক্তি অনুসারে নানা বিভিন্ন মূর্তি দিয়ে চলে। বড় হু’লে মানুষের অনেক জিনিষকে জানা হ’য়ে যায়—স্কৃতি কাজ করতে থাকে তখন তার মুনে। ভিন্ন ভিন্ন মানুষ নিজের চরিত্র ও শক্তি অনুসারে এই স্মৃতি সমস্ত নিয়ে ব্যবহার করতে থাকে এবং এই ভাবে কল্পনার সঙ্গে স্মৃতি, স্মৃতির সঙ্গে কল্পনার মেলামেশা সম্পন্ন হয় মানুষের রচনায় । সোনার কর্ণফুল তার সঙ্গে দেখা ফুলের স্মৃতি এবং না-দেখা ফুলের রূপকল্পনা এক হ’য়ে সেটিকে সুন্দর রূপ দিলে, জলতরঙ্গ,চুড়ি সেটি দেখা এবং না-দেখা নদীর রূপ একসঙ্গে মিলিয়ে দেখালে । তাবৎ অলঙ্কারশিল্পের মূলের কথা হ’ল কল্পনা এবং স্মৃতির যথাযথ মিলন। একটা কথা আছে—কণ্ঠস্থ করা । স্মরণশক্তি এখানে বিন ভাবনা বিনা কল্পনায় নামত কণ্ঠস্থ করিয়েই চুকলো । কোন জিনিষ দু’একবার দেখে ঠিকঠাক একে দেওয়া গেল ; এখানে স্মরণশক্তি কণ্ঠস্থ মুখস্থ করিয়ে দিয়ে থামলো । এই ভাবের স্মরণশক্তি দিয়ে ছবি লেখা কি কবিতা লেখা যায় না তো । মুখস্থ কথা, কণ্ঠস্থ মুর, করতলগত রূপ— রূপস্থষ্টির লোকে যাবার একটা একটা ধাপ সত্য, কিন্তু শুধু ধাপ নিয়ে ওঠানামা করলেই ধাপ অতিক্রম করে পৌছনো হ’ল, কোথাও এটা বলিনে । যে কিছুই মনে রাখতে পারলে না, এই দেখলে শুনলে, এই ভুল্লে, তাকে কোন কিছুর সম্বন্ধে প্রশ্ন করলে সে হয় চুপ করে থাকে নয়তে স্বকপোলকল্পিত একটা উণ্টোপাণ্ট জবাব দিয়ে বসে। যার প্রখর স্মরণশক্তি সে বিষয়টির যথাযথ হুবহু বিবরণ দিয়ে যায়। এই যে হুবহু দেখানে শোনানো এদের রূপস্থষ্টি তো বলা যায় না—কাক হুবহু অঁাকলে, ফটোযন্ত্র ও মানুষ দুজনেরই করা হ’ল প্রায় একই রকমের এ ক্ষেত্রে, কিন্তু এই হ’লেই যে কাকের আকৃতির ছাপ পেয়েই কাগজের