এই কথা,—আর্টিষ্টের স্পর্শসাপেক্ষ হ’ল লাবণ্য। যিশুখৃষ্ট বলেছিলেন, ‘Ye are the salts of Earth’. এ কথার দুটো অর্থ হয়—মাটির নিমকে তোমরা মানুষ, কিংবা ধরাতলের লাবণ্যই তোমরা মর্ত-জীবনে স্বাদ দিতে তোমরা। আজকের বায়োকেমিক মতে মানুষ নানা প্রকার লবণের সমষ্টি—এটা খৃষ্টের আমলে জানা ছিল কি ছিল না জানা যায় না,—কিন্তু বহু পূর্ব থেকে মানুষ লবণ নিমক লবণিমা নানা অর্থে নানা ভাবে প্রয়োগ করছে দেখা যায়। এক কথায় বলতে হ’লে বলতে হয়—স্বাদ ফিরে’ যায় যার দ্বারা এবং স্বাদু করে’ তোলে যে বস্তুকে কিংবা রচনাকে সেই হয় লাবণ্য।
মুক্তা ফলের লাবণ্য এক রকম, হীরকের লাবণ্য অন্য, পাকা কাঁচা আমের লাবণ্য, মানুষের কালো চামড়ার লাবণ্য, সাদা চামড়ার লাবণা, মাথাঘসা দিয়ে মাজা চুলের লাবণ্য, গন্ধ তৈলে চিক্কণ-চুলের পাকা-চুলের কাঁচা-চুলের লাবণ্য—সবই স্বতন্ত্র স্বতন্ত্র রকমের। কড়ি দিয়ে মাজা সূতোর কাপড়ে যে লাবণ্য সিল্কের কাপড়ে সে লাবণ্য নেই, পাথর বাটির লাবণ্য আর চিনের বাটি কি সোনা রূপোর বাটির লাবণ্য সমান নয়। লাবণ্য প্রচ্ছন্ন রইলো এবং লাবণ্য প্রকাশ পেল এটা বলা চল্লো, লাবণ্য হারালো বস্তুটি এও বলা গেল। নতুন টুক্টুকে মলাটের বইটি, নিভাঁজ ধোয়া কাপড়খানি, হাতে হাতে চট্কাচট্কিতে হারিয়ে ফেল্লে লাবণ্য,—রঙ জ্বলে’ গেল, ধোপ মরে’ গেল, অপছন্দ করলে সাধারণ লোকে, কিন্তু আর্টিষ্ট দেখলে দুটির মধ্যেই আর একটুকু নতুন ধরণের লাবণ্য পুরাতনের স্বাদ দিয়ে প্রকাশ পাচ্ছে। অলঙ্কারশিল্পে ওল্ডগোল্ড (old gold) বাদ গেল না,—উজ্জ্বল সোনা ম্যাড়মেড়ে সোনা দুই ধরণের লাবণ্য দেখালো। পাথরের লাবণ্য সে পাথরে আছে, সোনার লাবণ্য সোনাতেই, জলের একটুখানি লাবণ্য আছে যেটা সমুদ্রে এক, নদীতে অন্যভাবে প্রকাশ পায়, মাটিতে জলের লাবণ্য নেই মোটেই,—এখন নদীজল আঁকতে সমুদ্রজলের লাবণ্য দিলে যেমন বিস্বাদ হয় ছবিটা তেমনি মাটিকে জল করে’ লিখলেও ভুল হ’য়ে যায় জলে স্থলে। তবেই দেখা গেল এক এক বস্তুর ধাত বুঝে’ তবে ছবিতে লাবণ্য যোজনা করাই হ’ল কাজ।
স্বভাবের নিয়মে গাছ পাতা ফুল স্বাভাবিক লাবণ্য পেয়েছে; ধূলো পড়লো, রোদে তাতলো,—লাবণ্যটুকু ঢাকা পড়লো; বৃষ্টিজলে