পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
সৌন্দর্যের সন্ধান
৯৩

হয়, না হলে নিন্দে; সুতরাং সেখানে কেউ জোর ক’রে বলতে পারে না এইটেই পরি পাঁচজনে যা বলে বলুক, আমরা নিজের বুদ্ধিকেও সেখানে প্রাধান্য দিতে পারিনে, দেশ কাল যে সুন্দর পরিচ্ছদের সম্মান করে তাকেই মেনে নিতে হয়। একটা কথা কিন্তু মনে রাখা চাই, সাজ গোজ পোষাক পরিচ্ছদ ইত্যাদির সম্বন্ধে কিছু ওলট পালট সময়ে সময়ে যে হয়ে আসছে তা ঐ ব্যক্তিগত স্বাধীন রুচি থেকেই আসছে। সুতরাং সব দিক দিয়ে সুন্দর অসুন্দরের বোঝা-পড়া আমাদের ব্যক্তিগত রুচির উপরেই নির্ভর করছে। যদি সত্যই এই জগৎ অসুন্দরের সঙ্গে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন, নিছক সুন্দর জিনিষ দিয়ে গড়া পরিপূর্ণ সুখদ সুশৃঙ্খল ও সর্বগুণান্বিত একটা কিছু হতো তবে এর মধ্যে এসে সুন্দর অসুন্দরের কোন প্রশ্নই আমাদের মনে উদয় হতে না। আমরা এই জগৎ সংসার চিরসুন্দরের প্রকাশ ইত্যাদি কথা মুখে বল্লেও চোখে তা দেখিনে অনেক সময় মনেও সেটা ধরতে পারিনে, কাজেই অতৃপ্ত মন সুন্দরের বাসনায় নানা দিকে ধাবিত হয় এবং সুন্দরের একটা সাক্ষাৎ আদর্শ খাড়া করে, দেখার চেষ্টা করে এবং সুন্দরকে অসুন্দর থেকে বিচ্ছিন্ন করে’ দেখলে আমাদের সৌন্দর্যজগৎ যে খণ্ড ও খর্ব হয়ে পড়ে তা আর মনেই থাকে না। সুরূপ কুরূপ দুয়ে মিলে সুন্দরের অখণ্ড মূর্তির ধারণা করা শক্ত কিন্তু একেবারে যে অসম্ভব মানুষের পক্ষে তা বলা যায় না। ভক্ত কবি এবং আর্টিষ্ট এদের কাছে সুন্দর অসুন্দর বলে দুটো জিনিষ নেই, সব জিনিষের ও ভাবের মধ্যে যে নিত্য বস্তুটি সেটিই সুন্দর বলে’ তাঁরা ধরেন। ইন্দ্রিয়-গ্রাহ্য যা কিছু তা অনিত্য, তার সুখ শৃঙ্খলা মান পরিমাণ সমস্তই অনিত্য, সুতরাং সুন্দর যা নিত্য, সাক্ষাৎ সম্বন্ধে তার সঙ্গে মেলা মানুষের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব বলা যেতে পারে। আমাদের মনই কেবল গ্রহণ করতে পারে সুন্দরের আস্বাদ—সুতরাং মনোরসনা রোগ বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়ার মতো ভীষণ বিপত্তি মানুষের হতে পারে না। আর্টের দিক দিয়ে যৌবনই সুন্দর বার্ধক্য সুন্দর নয়, আলোই সুন্দর অন্ধকার নয়, সুখই সুন্দর দুঃখ নয়, পরিষ্কার দিন বাদলা নয়, বর্ষার নদী শরতের নয়, পূর্ণচন্দ্রই চন্দ্রকলা নয়—কেউ একথা বলতে পাবে না। যে একেবারেই আর্টিষ্ট নয় শুধু তারি পক্ষে বিচ্ছিন্ন ও খণ্ডভাবের একটা আদর্শ সৌন্দর্যকে কল্পনা করে নেওয়া সম্ভব। কবীর ছিলেন