পাতা:বাঙলা সাহিত্য পরিচয়-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এই আত্ম-বিবরণ হইতে আমরা জানিতে পারি যে, কৃত্তিবাসের বৃদ্ধ প্রপিতামহ -নরসিংহ (নরসিংহ) ওঝা বেদীমুজ মহারাজের পাত্র ছিলেন। কিন্তু বেদানুজ -নামে কোনও রাজার অস্তিত্ব সম্বন্ধে কিছুই জানা যায় নাই। সম্ভবতঃ লিপিকারের অজ্ঞতার জন্ত ‘ষে দনুজ' কথাটি বেদানুজ-রূপে লিখিত হইয়াছে । এই দমুজ মহারাজ বোধ হয় পূর্ববঙ্গের সেন রাজবংশের দনুজ মাধব বা দনেীজামাধব । ইনি আনুমানিক ১২৮০ খ্ৰীষ্টাব্দে রাজত্ব করিয়াছিলেন। দিল্লীর সুলতান বলবন যখন বঙ্গের মঘিমুদিন তুঘরল খাঁর বিদ্রোহ দমন করিতে আসেন, তখন এই দনুজ মাধব র্তাহাকে সাহায্য করিয়াছিলেন । মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খালজি কতৃক বঙ্গবিজয়ের পর ( ১১৯৯ খ্ৰী: ) পূর্ববঙ্গে লক্ষ্মণসেনের বংশ প্রায় ১০০ বৎসর রাজত্ব করে। সোনার গা'র এই সেন বংশের রাজত্বের অবসান হয় ১৩০০ খ্ৰীষ্টাব্বে । সেই সময়ে মুসলমান বিজেতা সামসু-দ-দীন ফিরোজ শাহ কতৃক যে বিপ্লব সংঘটিত হয় তাহারই ফলে নরসিংহ ওঝা পশ্চিম বঙ্গের ফুলিয়া নামক স্থানে বাস স্থাপন করেন । এই ফুলিয়া নদীয়া জেলার শান্তিপুরের নিকট এবং রাণাঘাট হইতে সাত মাইল দূরে অবস্থিত। এই সময়ে তুর্কী গজি জাফর খাঁ এই অঞ্চলে রাজত্ব করিতেছিলেন। ইনি পূর্বে হিন্দু-ধর্মের ঘোর বিরোধী ছিলেন ; পরে এই ধর্মের প্রতি এতদূর শ্রদ্ধাবান হইয়াছিলেন যে, সংস্কৃত ভাষায় গঙ্গাস্তোত্র লিখিয়া প্রসিদ্ধ হন। এজন্য নরসিংহ এই স্থানকেই পরম নিরাপদ মনে করিয়া এখানেই বসবাস স্থাপন করেন। নরসিংহের পৌত্র মুরারি, মুরারির পুত্র বনমালী এবং বনমালীর পুত্র কৃত্তিবাস। এই কয় পুরুষের সময় শতাধিক বৎসর ধরিলে কৃত্তিবাস ১৪শ শতাব্দীর শেষপাদে অথবা পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথমপাদে জন্মগ্রহণ করেন। কৃত্তিবাসের আত্মবিবরণীতে জাছে— “আদিত্যবার শ্রীপঞ্চমী পূর্ণ মাঘ মাস। তথি মধ্যে জন্ম লইলাম কৃত্তিবাস ॥” এই পাঠ ধরিয়া রায় বাহাদুর শ্ৰীযোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি মহাশয় গণনা করিয়া ১৪৩৩ খ্ৰীষ্টাব্দ পাইয়াছিলেন। কিন্তু কৃত্তিবাস যে রাজসভার বর্ণনা দিয়াছেন, তাহ হিন্দু রাজার । রাজার সমস্ত কর্মচারী হিন্দু, তিনি স্বয়ং সংস্কৃত শ্লোক শুনিয়া অর্থ বুঝিতে পারেন, এবং কবিকে “চন্দনের ছড়া” দ্বারা অভ্যর্থনা করা হইয়াছিল। কবির ভাষায়— “দেশ যে সমস্ত ব্রাহ্মণের অধিকার ।” ১৪৩৩ খ্ৰীষ্টাব্দে কোনও হিন্দু রাজা গৌড়ে 3 e