পাতা:বাঙলা সাহিত্য পরিচয়-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপবিষ্ট, তাহার মস্তকে তিনট শৃপের মুকুট এবং চারিপাশে বিবিধ প্রকারের পশু বিরাজ করিতেছে। এই মুদ্র হইতে সকলে অনুমান করিয়াছেন যে সেখানে এমন একটি দেবতার পূজা হইত যাহাকে পরবর্তী শিবের বা পশুপতির পূর্বাভাস বলা যাইতে পারে । কাজেই, শৈবধর্মের মূল আমাদিগকে মোহেঞ্জোদড়োর ধ্বংসস্তুপে লইয়া যাইতেছে ! 惨 প্রকৃতির মধ্যে যে ধ্বংসের লীলা, ঝড়-ঝঞ্চার প্রবল প্রকোপ, তাহা কোন৪ দেবতার ক্রোধ হইতে উৎপন্ন হইয়াছে অনুমান করিয়া ঋগ্বেদে তাহাকে রুদ্র নামে অভিহিত করা হইয়াছে। ইনি শান্ত থাকিলে প্রকৃতিও শস্ত থাকিয়া আমাদের মঙ্গল করেন বলিয়া ইনি-ই শঙ্কর, শস্তু, শিব । পুরাণে বর্ণিত হইয়াছে যে এই দেবতা ক্রোধাবিষ্ট হইয়া রুদ্রমূৰ্ত্তি ধারণ করিলে স্বষ্টি লয়প্রাপ্ত হইবে এবং তুষ্ট হইলে জগতের অসীম কল্যাণ সাধিত হইবে । বৈদিক আর্য জাতির সহিত মোহেঞ্জোদড়োর আর্যেতর অথবা অনার্য জাতিব সংঘর্ষ ও সংমিশ্রণের ফলে বৈদিক সভ্যতার সকল স্তরেই পরিবর্তন দেখা যায় । এই পরিবর্তনের ফলে মোহেঞ্জোদড়োর (পশুপতি ) মুদ্রায় চিত্রিত দেবতার সহিত বৈদিক রুদ্র-শিবের সামঞ্জস্ত সাধিত হইয়া পৌরাণিক এবং লৌকিক শিবের স্বষ্টি হইয়াছে। এরূপ অনুমানের কারণ এই যে, শিবের কাহিনীতে দুইটি স্পষ্ট বিপরীত চরিত্র ধর্মের পরিচয় পাওয়া যায়, তাহদের একটি আয এবং অপরটি অনার্য-ধর্ম হইতে আসিয়াছে । আর্যদের ধর্ম ধ্যান-ধারণা, যাগ-যজ্ঞ প্রভৃতির উপর প্রতিষ্ঠিত ; ইহাতে কঠোর সংযমের প্রতি নির্দেশ রহ্যিাছে। কিন্তু অনার্যদিগের ধর্মসম্বন্ধে ঋগ্বেদে কটুক্তি করা হইয়াছে । ইহাদিগকে ধর্ম ইন্দ্ৰিয়ের দ্বার উন্মুক্ত করিয়া মন-প্রাণ দিয়া প্রকৃতির সহজ ও স্বাভাবিক গতি-প্রকৃতিকে প্রত্যক্ষ কর । “আর্যের ছিল মনোধৰ্মী অর্থাৎ চিন্তাশীল, আদর্শবাদী, তত্ত্বানুসন্ধিৎসু, সংযমনিষ্ঠ ও অধ্যাত্মপরায়ণ । আর অনার্যের ছিল প্রাণধৰ্মী অর্থাৎ ক্রিয়াশীল, বাস্তববাদী, ভোগলিঙ্গ ও দৈবনিষ্ঠ। আর্য ও অনার্যের দেবতা যখন এক হইয়া গিয়াছে তখনও সেই দেবচরিত্রে আর্য ও অনার্যের বিশিষ্ট ভাবধারার ছাপ পাশাপাশি রহিয়া গিয়াছে। শিব যখন মনোধৰ্মী আর্যের দেবতা তখন তিনি যোগীশ্রেষ্ঠ, সতীপতি, উমাধব ; আর যখন তিনি প্রাণধৰ্মী অনার্যের দেবতা তখন তিনি ভোলানাথ, গঞ্জিকাধুস্তুরসেবী, উচ্চ নীচ ভেদহীন, আভিজাত্য গৰ্ব্ববিরহিত।" শৈবধর্মকে প্রাচীনতম লোকধর্মের অন্যতম বলা যাইতে পারে। কাজেই বাঙলা-সাহিত্যেও শৈবধর্ম লইয়া গ্ৰন্থরচনা সর্বাগ্রে হইয়াছিল বলিতে হয় । এই সাহিত্যের কোনও প্রমাণ আমরা পাই নাই ; তবে ইহা অনুমান করিবার মত .8?