পাতা:বাঙলা সাহিত্য পরিচয়-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দু’একটি উপাদান আছে। এখানে ধান ভাতে শিবের গীত প্রবচন এবং ‘শিব ঠাকুরের বিয়ে হচ্ছে তিন কন্তে দান’–ছড়ার উল্লেখ করা যাইতে পারে। এই সকল রচনা কিরূপ ছিল তাঁহা জানিবার উপায় নাই ; তবে এরূপ অনুমান অসঙ্গত নহে ষে ইহার অনার্য-ধর্মী লৌকিক কাহিনী লইয়াই রচিত হইয়াছিল। শৈবধর্ম লইয়া বাংলা মঙ্গল কাব্যের যে শাখা গঠিত হইয়াছে তাহাকে শিবায়ন বলা হয় (শিব + অয়ন=ঘlহা হইতে শিবের জ্ঞান অধিগম্য হয় ? ) । শিবায়নগ্রন্থ সকল যে সময়ে রচিত হইয়াছিল তখন বাংলা দেশ পুরাণপ্রভাবিত ও ব্রাহ্মণ্যধর্ম শাসিত। তাই ইহাদের মধ্যে শিবের ঐ দুই প্রকার বিভিন্ন-ধর্মী চরিত্রের সমাবেশ দেখা যায় । দুই প্রকার কাহিনীর পার্থক্য এত প্রকট যে ইহাদের মধ্যে কোনও সামঞ্জস্ত সাধিত হইতে পারে না । ইহার কেবল ইহাদের উৎপত্তির দুইটি উৎসেব কথাই সপ্রমান করিয়া দেয়। শিবের কাহিনী অতি প্রাচীন হইলেও এই দেবতার মাহাত্ম্য বর্ণনার জন্ত সপ্তদশ শতাব্দীর পূর্বে কোনও স্বতন্ত্র কাব্য রচিত হয় নাই। খ্ৰীষ্টীয় ১৬৭৪-৮ সালের মধ্যে চট্টগ্রামবাসী দুইজন কৰি এক মৃগ ও লুন্ধের (ব্যাধের) কাহিনী বর্ণনাচ্ছলে শিব চতুর্দশীর ভ্রতের মহাত্ম্য বর্ণনা করিয়াছেন। প্রথম কবি রতিদেব এবং দ্বিতীয় কবি রামরাজা বা রামরায় । এই দুই কবির বিষয়বস্তু এক এবং উভয়ের ভাব ও ভাষার সাদৃশ স্পষ্ট। শ্ৰীযুক্ত মুন্সী আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মহাশয় এই গ্রন্থ দুইটি সম্পাদন করিয়াছেন। তিনি এই দুই কবিব তুলনামূলক যে সমালোচনা তাহার গ্রন্থের ভূমিকায় দিয়াছেন, তাহা হইতে উভয়ের রচনার দৃষ্টান্ত নিয়ে উদ্ধৃত হইল – এমত ভাবিয়া ব্যাধ বুঝিলেক মনে । দেবতার চরিত্র বুঝিতে পারে কোনে । আচম্বিত মহা বৃষ্টি হইল ততক্ষণে ॥ অকস্মাৎ বায়ুবৃষ্টি কৈলো মঘবানে ॥ বড়কায় গাছ উপাড়িয়া পড়িল ভূমিত । ঘরে গেলো দিনমণি রজনী প্রবেশ । কালাবর্ণ মেঘ সব আকাশে পূর্ণিত ॥ ঘোর অন্ধকার রাত্রি চাপিলে বিশেষ ॥ শীতে ভীতে কম্পমান হইল শরীর। অকস্মাৎ ঝঞ্জাবাত শিলা বরিষণ । ভয়াকুল হইয়া ব্যাধ কান্দিতে লাগিল ॥ আকাশ ভরিল হৈলো মেঘের গর্জন ॥ বিজুলি চমকে মেঘ করিল গর্জন । বড় বড় বৃক্ষসব বাতাসে ভাঙ্গিলো। মুঘল সমান ধার হইল বরিষণ ॥ ঠঠাখাতে বজ্রাঘাতে ভুবন কম্পিলো ॥ ঠাঠারের ঘাত্র অগ্ন পড়ে নিরস্তর। ঘন ঘন বিজুলি চমকে চারি পাশ । ঘোর অন্ধকার হইল বনের ভিতর । চাহিতে চমকে আখি জীবন নৈরাশ ॥ —রামরাজার মৃগলুব্ধ সংবাদ —রতিদেবের মৃগলুব্ধ 8之