পাতা:বাঙলা সাহিত্য পরিচয়-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাহিনী লইয়াই অনুষ্ঠিপ্ত হইয়া থাকে। গৌরীকে গৃহে আনিবার চেষ্টায় শাখারীর বেশে তাহাকে শাখা পরাইবার জন্ত শিবের হিমালয়ে আগমনের যে কাহিনী আমরা পূর্বে পাইয়াছি, তাহ পরবর্তীকালে বৈষ্ণব ধৰ্ম্মের প্রভাবে এক অপূর্ব বাৎসল্য রসমণ্ডিত হইয়া আগমনী গানরূপে দেখা দিয়াছে। শিব বাঙালীর ঘরের দেবতা । তাই প্রত্যেক বাঙালী মাতাপিত নিজ কন্যাকে ভাগ্যবর্তী শিবজায় গৌরী মনে করিয়া দুর্গোৎসবের সহিত তাহার পিতৃগৃহে আগমন এক করিয়া ফেলিয়াছে এবং আগমনী-গানে হৃদয়ের বিরহ-ব্যথা প্রকাশ করিয়াছে । তাই এ গানগুলি ৰঙালীর জাতীয় সম্পদ হইয়া উঠিয়াছে। ধৰ্ম্মমঙ্গল কাব্য বপাক্টের রণকুশল পুত্র গোপাল ছিন্ন-ভিন্ন, বিক্ষিপ্ত বঙ্গদেশকে এক অখণ্ড রাজ্যে পরিণত করিয়া শাসন ও শৃঙ্খলা প্রবর্তন করিয়াছিলেন। গোপালের বংশধরগণ কয়েকপুরুব ধরিয়া বাঙলা দেশে রাজত্ব করিয়াছিলেন । তাহীদের বংশ পাল রাজবংশ নামে পরিচিত। এই পাল বংশের পূর্বে বাঙলা দেশের কোনও পাব বাহিক ইতিহাস পাওয়া যায় না। পালরাজগণ বৌদ্ধ ছিলেন, তাহদের রাজত্বকালে বৌদ্ধধৰ্ম্ম রাজধর্মের মর্যাদা লাভ করিয়া অল্প দিনের মধ্যেই বাঙলাদেশে বিস্তার লাভ করে। এই সময়ে বাঙালীর ধর্ম বলিতে বৌদ্ধ-ধর্মকেই বুঝাইত । পাল রাজগণের পর যখন সেন রাজবংশ বাঙলা দেশের অধীশ্বর হইল তখন বৌদ্ধ-ধর্মের প্রাধান্তেরও অবসান ঘটিল। ব্রাহ্মণ্য ধর্মের পুনরুত্থানের ফলে আবার বাঙলা দেশে বৈদিক আচার অনুষ্ঠানের স্বত্রপাত হয়। এই সময়ে হিন্দুগণ যে নবপ্রেরণা লাভ করিল, তাহারই ফলে তাহারা বৌদ্ধগণের উপর যথেচ্ছ অত্যাচার করিতে লাগিল। মুণ্ডিতমস্তক বৌদ্ধ ভিক্ষুদিগকে নড়িয়া বা নেড়া নামে অত্যন্ত বৃণার সহিত অভিহিত করিয়া সভ্য সমাজ হইতে বিতাড়িত করিতে লাগিল । নিরুপায় বৌদ্ধগণ সমাজের এক অন্ধকার কোণে আশ্রয় লইয়া আত্মরক্ষার চেষ্টা করিতে লাগিল । বাঙলাদেশে এক সময়ে আর্ঘেতর অথবা বৈদিক ক্রিয়াকর্মের গণ্ডীর বহির্ভূত অনার্বদিগের যথেষ্ট প্রভুত্ব ছিল। আর্যগণের চাপে পড়িয়া ইহারা লোকালয় হইতে দূরীভূত হইলেও আপন স্বাতন্ত্র্য হারায় নাই। আর্য সমাজের বাহিরে ইহারা 8 ግ