পাতা:বাঙলা সাহিত্য পরিচয়-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চণ্ডী মঙ্গল কাব্য চণ্ডীমঙ্গলে চণ্ডীদেবীর মাহাত্ম্য বর্ণিত হইয়াছে। এই দেবী যে মার্কণ্ডের চণ্ডীর দেবী তাহা জোর করিয়া বলা যায় না, কারণ মঙ্গল কাব্যে র্তাহার যে সকল কাহিনী বর্ণিত হইয়াছে, তাহা পৌরাণিক কাহিনী হইতে সম্পূর্ণ বিভিন্ন। দেবীর স্তবেই কেবল তাহার অসুর বধ প্রভৃতি পৌরাণিক কাহিনীর উল্লেখ রহিয়াছে। কাজেই, ধর্মঠাকুরের মত এই দেবীকেও যে পরবর্তীকালে হিন্দুধর্মের গণ্ডীর মধ্যে আনিয়া ফেলা হইয়াছে, এবিষয়ে আর কোনও সন্দেহই নাই। কাহিনীতে সমুদ্রবক্ষে কমলেকামিনীর” যে বর্ণনা রহিয়াছে তাহার অন্তর্নিহিত ভাবধারা সম্পূর্ণরূপেই বৌদ্ধ এবং এই প্রসঙ্গে যে স্বষ্টিতত্ত্ব বর্ণিত হইয়াছে তাহাও ধর্মমঙ্গলের ন্যায় বৌদ্ধ ভাবাপন্ন । কিন্তু এখানেই ইহার আরম্ভ হয় নাই। চণ্ডীমঙ্গলের কাহিনীকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় ;–কালকেতু ব্যাধের বৃত্তান্ত এবং ধনপতি সদাগরের বৃত্তান্ত । কালকেতু নিজেকে “গো-হিংসক রাঢ়’ বলিয়া অভিহিত করিয়াছে এবং তাহার দেবীও বরাহ-বলী গ্রহণ করেন । এই দুইটি প্রাণীই আর্যধর্মে অচল। কাজেই, চণ্ডীদেবীর মধ্যে আর্যেতর দেবীর কিছু অংশ থাকাও বিচিত্র নহে। মহেন্‌-জে|দড়োর দেবদেবীর সহিত পশুগণ যুক্ত থাকায় ইহার সহিত তাহদের সম্বন্ধের সম্ভাবনা দেখা যায়। পৌরানিক চণ্ডীর সিংহবাহন ছাড়া আর কোনও পশুর সহিত সম্পর্ক দেখা যায় না ; কাজেই এ চণ্ডী অহিন্দু। তবে বৌদ্ধ তান্ত্রিকদিগের ছ একটি দেবীর পশু-সংসর্গ আছে এবং ইহা বৌদ্ধ প্রভাবও বলা যাইতে পারে । এরূপ প্রশ্ন উঠিতে পারে যে অপর কোনও মঙ্গলকাব্য দুইটি ভিন্ন ভিন্ন কাহিনী লইয়া রচিত হয় নাই, চণ্ডীদেবীর কেন তাহ হইল। পূর্বেই বলা হইয়াছে ষে মঙ্গলকাব্যগুলি রচিত হইয়াছিল উদার সাম্যবাদী ইসলাম ধর্মের প্রসার রোধ করিবার জন্ত এবং বর্ণাশ্রমধর্মী হিন্দুদিগকে সঙ্ঘবদ্ধ করিবার উদ্দেশ্রে। বর্ণহিন্দুরা এতদিন যাহাঁদের অস্পৃগু করিঘা রাখিয়াছিল, সমাজের পরিপুষ্টর জন্য তাহাদিগকে ধর্মগভীর মধ্যে আনিবার উদ্দেন্তে দেবদেবীরও যে তাহদের প্রতি স্নেহ দৃষ্টি আছে তাহা প্রমাণ করার প্রয়োজন হইল। কাজেই, বর্ণহিন্দু ধনপতিকে ষে দেবী কৃপা করেন, তিনিই আবার আর্ঘেতর ব্যাধ কালকেতুকে বরদানে কৃতাৰ্থ করেন। সমাজপতি ব্রাহ্মণেরাই যখন স্বয়ং এই কথা প্রচার করিলেন, তখন তাহারা সমাজের ●br