পাতা:বাঙ্গলার পরিচিত পাখী.djvu/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২৮
বাঙ্গলার পরিচিত পাখী

 আমাদের দেশে দুই প্রকারের কাক দেখিতে পাই। একটি হইল দাঁড়কাক। ইহা আকারে অপেক্ষাকৃত বড় এবং ইহার সর্ব্বাঙ্গ উজ্জ্বল কৃষ্ণবর্ণ-কালোর উপর ঘন নীলের একটু আভা রৌদ্র পড়িলে লক্ষিত হয়। ছোট কাকটির গলা ঘাড় ও ডান পর্য্যন্ত পিঠের উপরাংশ ধূসর —বাকী শরীরটা ঘন কৃষ্ণ। ইহাকে কোন কোন অঞ্চলে পাতিকাক বলে। উপরে যাহা কিছু লিখিত হইয়াছে তাহা উভয়ের পক্ষেই প্রযোজ্য। তবে দাঁড়কাক বেশী রাশভারী এবং অতিশয় জনসমাগম পছন্দ করে না। সেইজন্য বড় সহরে তাকে দেখা যায় ক্কচিৎ। পল্লীঅঞ্চলেই ইহা থাকিতে ভালবাসে। বোধহয় এই কারণেই ইংরেজ লেখকরা ইহাকে “জাঙ্গল ক্রো” নামে অভিহিত করেন এবং পাতিকাককে “হাউস ক্রো” বলিয়া বর্ণনা করেন।

 কাকের জীবনের সর্বাপেক্ষা মর্ম্মান্তিক ট্র্যাজেডির বিবরণ দিয়া এই প্রবন্ধ শেষ করিব। কাক নির্ব্বিঘ্নে নিজ শাবকোৎপাদন করিতে পায় না, প্রায়ই তাহার নিজের ডিম্ব বিনষ্ট হয় কিংবা শাবক অকালে নিহত হয়—এই নৃশংস কার্য্যটি করে কোকিল। আমাদের ও সংস্কৃত সাহিত্যের কবিদের অতিপ্রিয় বসন্তসহচর কোকিল, পূরাদস্তুরের বোহেমিয়ান—নিজ সন্তান সে কাক দিয়া পালন করাইয়া লয়। সুচতুর কাক বুঝিতে পারে না যে সে পরের সন্তান “মানুষ” করিতেছে। কোকিলের প্রতি কাকের একটা সহজাত বিদ্বেষ আছে—কোকিল দেখিলে সে তাড়া করিবেই এবং ধরিতে পারিলে কোকিলের ত্রাণ থাকে না। কিন্তু প্রকৃতির বিধানে কোকিল কাক অপেক্ষা দ্রুত উড়িতে পারে সুতরাং কাক তাহাকে কখনও ধরিতে পারে না। কিন্তু এই তাড়া করার প্রবৃত্তিটার সম্পূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করে কোকিল।

 দাঁড়কাক বসন্তের প্রারম্ভ হইতেই নীড় রচনা কার্য্যে ব্যাপৃত হয়। নিদাঘের মাঝামাঝি এই কার্য্য আরম্ভ করিয়া বর্ষাকাল পর্য্যন্ত পাতি-