পাতা:বাঙ্গালার ইতিহাস প্রথম ভাগ (রাখাল দাস বন্দোপাধ্যায়).djvu/৩২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দশম পরিচ্ছেদ।
৩০৫

 রামচরিত-রচয়িতা সন্ধ্যাকরনন্দীর জাতি সম্বন্ধে পূর্ব্বে শ্রীযুক্ত অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় মহাশয়ের সহিত ‘সাহিত্য’ পত্রে বহু তর্ক করিয়াছি। তর্ককালে প্রবীণ ঐতিহাসিক মৈত্রেয় মহাশয় অত্যন্ত অসহিষ্ণুতা প্রকাশ করিয়াছিলেন; সেই জন্যই অধিক কথা বলিতে পারি নাই। মহামহোপাধ্যায় শ্রীযুক্ত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় রামচরিত সম্পাদনকালে বলিয়াছিলেন যে, সন্ধ্যাকরনন্দী বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ (Memoirs of the Asiatic Society of Bengal, Vol. III, p. 1.)। মৈত্রেয় মহাশয় সিদ্ধান্ত করিয়াছিলেন যে, সন্ধ্যাকরনন্দীকে কায়স্থ বলিয়া স্থির করাই সহজ ও যুক্তিসঙ্গত। (সাহিত্য, ১৩১৯, ২৩শ বর্ষ, পৃঃ ৯৪৬)। মৈত্রেয় মহাশয় ‘করণ’ শব্দ কায়স্থবাচক মনে করিয়াছেন। কোষগ্রন্থে যে অর্থই থাকুক, ‘করণ’ শব্দে যে জাতি বুঝায় না, তাহার প্রমাণ মৈত্রেয় মহাশয় প্রবর্ত্তিত বরেন্দ্র-অনুসন্ধান-সমিতির চেষ্টাতেই আবিষ্কৃত হইয়াছে। সামন্ত-রাজ লোকনাথের তাম্রশাসনে দেখিতে পাওয়া যায় যে, শ্রীপট্ট প্রাপ্ত ‘করণ’ লোকনাথ ‘শূদ্রার গর্ভে ব্রাহ্মণের ঔরসে জাত পারশবের দৌহিত্র’ ছিলেন। (সাহিত্য, ১৩২১, জ্যৈষ্ঠ, পৃঃ ১৪৪)। লোকনাথকে কায়স্থ বলিতে বোধ হয়, কেহই ভরসা করিবেন না।

 রামচরিতে সন্ধ্যাকরনন্দীকে ‘কলিকালবাল্মীকি’ উপাধিতে ভূষিত করা হইয়াছে:—

অবদানং রঘুপরিবৃঢ়গৌড়াধিপ-রামদেবয়োরেতৎ।
কলিযুগরামায়ণমিহ কবিরপি কলিকালবাল্মীকিঃ॥
—রামচরিত, কবি-প্রশস্তি, ১১।

 লামা তারানাথ তাঁহার বৌদ্ধধর্ম্মের ইতিহাসের শেষভাগে রামচরিতের ন্যায় অনেকগুলি প্রাচীন ঐতিহাসিক গ্রন্থের নামোল্লেখ করিয়াছেন। তিনি বলিয়াছেন যে, মগধবাসী পণ্ডিত ক্ষেমেন্দ্রভদ্র প্রণীত একখানি গ্রন্থে রামপালের রাজত্বকাল পর্য্যন্ত সমস্ত ঐতিহাসিক ঘটনার বিবরণ প্রদত্ত আছে। ক্ষত্রিয়জাতীয় পণ্ডিত ইন্দ্রদত্ত প্রণীত ‘বুদ্ধপুরাণ’ নামক গ্রন্থে সেনবংশের প্রথম চারি জন রাজার ইতিহাস লিপিবদ্ধ আছে। এতদ্ব্যতীত তিনি ব্রাহ্মণজাতীয় পণ্ডিত ভটঘটী প্রণীত ‘গুরুপরম্পরার ইতিহাস’ নামক গ্রন্থ অবলম্বনে স্বীয় গ্রন্থ রচনা করিয়াছিলেন। এই সকল গ্রন্থের মধ্যে একখানিও অদ্যাবধি আবিষ্কৃত হইয়াছে বলিয়া বোধ হয় না।