পাতা:বাঙ্গালার ইতিহাস প্রথম ভাগ (রাখাল দাস বন্দোপাধ্যায়).djvu/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০
বাঙ্গালার ইতিহাস।

আর্য্যোপনিবেশের পূর্ব্বে দ্রবিড়গণ আর্য্যগণের ন্যায় উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের পার্ব্বত্যপথে ভারতবর্ষে প্রবেশ করিয়াছিলেন।

 সম্প্রতি প্রত্নবিদ্যাবিশারদ পণ্ডিত হল্ স্থির করিয়াছেন যে, এই দ্রবিড়গণ অতি প্রাচীন কাল হইতে ভারতবর্ষে বাস করিয়া আসিতেছেন, এবং ইঁহারাই খৃষ্টের জন্মের তিন সহস্র বর্ষ পূর্ব্বে বাবিরুষ অধিকার করিয়া, বাবিরুষ ও আসুরের প্রাচীন সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করিয়াছিলেন। বাবিরুষ ও আসুরের প্রাচীন অধিবাসিগণ সেমিটিকজাতীয়। ৩০০০ খৃষ্টপূর্ব্বাব্দে, ভিন্ন বংশজ সুমেরীয় জাতি, এই আদিম অধিবাসিগণকে পরাজিত করিয়া নূতন রাজ্য স্থাপন করিয়াছিলেন। সুমেরীয়গণ প্রাচীন কীলকাক্ষরের (Cuneiform Script) সৃষ্টিকর্ত্তা। বাবিরুষের প্রাচীন ধ্বংসাবশেষমধ্যে প্রাচীন সুমেরীয় জাতির যে সকল প্রতিমূর্ত্তি আবিষ্কৃত হইয়াছে, তাহা দেখিলে বোধ হয় যে, তাঁহারা সেমিটিক অথবা আর্য্যবংশসম্ভূত নহেন। হল্‌ অনুমান করেন যে, এই প্রাচীন সুমেরীয়জাতির অবয়ব ও মুখ বর্ত্তমান কালের দাক্ষিণাত্যবাসী অর্থাৎ দ্রবিড়জাতীয় হিন্দুগণের ন্যায়। তিনি অনুমান করেন যে, ভারতবর্ষই দ্রবিড়জাতির প্রাচীন আবাসভূমি; এবং এই ভারতবর্ষ হইতে, প্রাগৈতিহাসিক যুগে, দ্রবিড়জাতি উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের গিরিসঙ্কটসমূহ অবলম্বনে প্রাচীন ঐরাণ ও বাবিরুষ অধিকার করিয়াছিলেন। তাঁহারা যখন বাবিরুষ অধিকার করিয়াছিলেন, তখন তাঁহারা তদ্দেশীয় আদিম অধিবাসিগণ অপেক্ষা সভ্যতর, তাঁহারা তখন ধাতবঅস্ত্রের ব্যবহারে অভ্যস্ত, অঙ্কিত সাঙ্কেতিক চিহ্ন দ্বারা ভাব প্রকাশ করিতে শিক্ষা করিয়াছেন এবং নানাবিধ শিল্প তাঁহাদিগের আয়ত্ত হইয়াছে[১]

 অতি অল্পদিনপূর্ব্বে মধ্যভারতের পার্ব্বত্য উপত্যকাসমূহের কোন স্থানে একটি ক্ষুদ্র গোলাকার প্রস্তরনির্ম্মিত কীলক আবিষ্কৃত হইয়াছে।

  1. H. R. Hall’s The Ancient History of the Near East, pp. 171-174.